দুপুর মানেই কর্মব্যস্তদের কাছে মধ্যাহ্নভোজের সাময়িক অবসর। বেলা ১টা বাজতেই তাই অফিস থেকে বেড়িয়ে পড়েছিলেন কর্মচারিদের অনেকেই। নিজেদের মধ্যে গল্প করতে করতে ফুটপাথ ধরে তাঁরা এগিয়ে যাচ্ছিলেন রেস্তোরাঁর দিকে। আশপাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন আরও বেশ কয়েকজন পথচারী। অন্য সময় রাস্তায় জনস্রোতের ঢল নামে বটে। কিন্তু অলস দুপুরে মানুষের ভিড় কিছুটা হলেও কম ছিল কানাডার টরেন্টো শহরের ইয়ঞ্জ স্ট্রিট এবং ফিঞ্চ অ্যাভিনিউয়ের মধ্যবর্তী দীর্ঘ রাস্তায়। ঝড়ের গতিতে রাস্তা ধরে ছুটে যাচ্ছিল একের পর এক গাড়ি। ফুটপাথ ধরে মানুষজন হেঁটে যাচ্ছিলেন। কোথাও কোনও অস্বাভাবিকতা ছিল না। ছিল না বিন্দুমাত্র অশনি সংকেত। অথচ ঠিক সেই সময়ে সর্বনাশের দূত হয়ে নিঃশব্দে পথচারীদের দিকেই ছুটে আসছিল একটা সাদা ভ্যান। যাকে গুরুত্ব না দেওয়ার মাশুল গুনতে হল পথচারীদের।
তাঁদের দাবি, সোমবার দুপুর দেড়টা নাগাদ ফুটপাথের ওপর আচমকা প্রবল গতিতে ভ্যান চালিয়ে দেয় চালক। ভ্যানের ধাক্কায় এদিকওদিক ছিটকে পড়েন কয়েকজন। ভ্যানের চাকার তলায় দুমড়ে মুচড়ে যায় পথচারীদের শরীর। রোদ মাখা রাস্তা নিমেষে বদলে যায় রক্তস্রোতে। বেঁচে যাওয়া মানুষগুলোর আর্ত চিৎকার ছাড়া আর শোনার মত কিছুই ছিল না সেই মুহুর্তে।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছয় টরেন্টো পুলিশ। স্থানীয়দের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে গাড়ির তলা থেকে টেনে বার করা হয় রক্তাক্ত দলা পাকানো শরীরগুলোকে। ভয়াবহ এই ঘটনায় এখনও অবধি ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। বেপরোয়া ভ্যানের ধাক্কায় গুরুতর আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৬ জন পথচারী। তাঁদের হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। ঘাতক ভ্যানের চালককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার করার সময় অভিযুক্ত তাকে মেরে ফেলতে পুলিশকে চাপ দিতে থাকে। অভিযুক্ত চালক বছর ২৫-এর যুবক অ্যালেক মিনাসিয়ানের সঙ্গে কোনও জঙ্গিগোষ্ঠীর যোগসূত্র আছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পথচলতি মানুষকে হঠাৎ সে কেন পিষে দিল তার কারণও স্পষ্ট নয়। দুর্ঘটনার পিছনে অভিযুক্তের নাশকতামূলক কোনও উদ্দেশ্য কাজ করেছে কিনা তাও দেখছে পুলিশ। দুর্ঘটনার পর মৃত ও আহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।