ওড়ার সব ঠিকঠাক। তখন শুরু রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা আর সেকেন্ড গোনা। গত সোমবার মধ্যরাতে টানটান উত্তেজনায় সরগরম ছিল ইসরো। এক ঘণ্টারও কম সময় পর চাঁদে পাড়ি দেবে মহাকাশযান। মূল যান বিক্রমকে পেটে নিয়ে আকাশে উড়ে যাবে বাহুবলী। বিজ্ঞানের ভাষায় জিওসিঙ্ক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল মার্ক ৩। ঠিক আর আগের মুহুর্তে থমকে যায় ঘড়ি। কী হল! কাউন্টডাউন ঘড়ি থমকে গেল কেন? এ প্রশ্নের উত্তর দ্রুত দেয় ইসরো। জানিয়ে দেয় শেষ মুহুর্তে স্থগিত হয়েছে চন্দ্রযান-২ মিশন। প্রযুক্তিগত ত্রুটির জন্য স্থগিত। উৎক্ষেপণের পরবর্তী দিন পরে ঘোষণা করা হবে।
এরপরের প্রশ্নটা ছিল নতুন উৎক্ষেপণের দিনটা কবে? সে প্রশ্নের উত্তর গত বুধবারই অনেকটা পরিস্কার হয়েছিল ইসরোর এক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আধিকারিকের বক্তব্যে। তিনি জানিয়েছিলেন আগামী ২০ থেকে ২৩ জুলাইয়ের মধ্যেই উৎক্ষেপিত হতে চলেছে চন্দ্রযান। সে খবর নীলকণ্ঠ.in-এ প্রকাশিতও হয়। আর তার ঠিক পরদিন বৃহস্পতিবার ইসরো-র তরফে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেওয়া হল আগামী ২২ জুলাই উৎক্ষেপণ করা হবে চন্দ্রযানকে। বাহুবলী রকেট তাকে নিয়ে উড়ে যাবে মহাকাশে।
ইসরো জানিয়েছে, আগামী ২২ জুলাই সোমবার দুপুর ২টো ৪৩ মিনিটে বাহুবলী পাড়ি দেবে। গত সোমবার চন্দ্রযান-২-এর উৎক্ষেপণের সময় ছিল রাত ২টো ৫১ মিনিটে। সেদিন উৎক্ষেপণ স্থগিত হওয়ার পর ইসরোর বিজ্ঞানীরা সম্পূর্ণ নিশ্চিত হতে চাইছিলেন ভুল ত্রুটি সম্বন্ধে। তাই কিছুটা সময় নিয়ে ৭ দিন পর নতুন দিন ঠিক হল। গত সোমবার উৎক্ষেপণের আগে বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেন জ্বালানি হিসাবে যে হিলিয়াম ট্যাঙ্ক চন্দ্রযানে রয়েছে তাতে ঠিকঠাক চাপ তৈরি হচ্ছে না। ফলে তাঁরা আর ঝুঁকি নেননি। স্থগিত করে দেন উৎক্ষেপণ। তারপর সময় নিয়ে নিশ্চিত হয়ে আগামী সোমবার উৎক্ষেপণের দিন ঘোষণা করলেন তাঁরা।
চন্দ্রযানকে নিয়ে যে রকেটের আকাশে পাড়ি জমানোর কথা তার নামকরণ হয়েছে বিখ্যাত দক্ষিণী সিনেমা বাহুবলী-র নামে। বিশাল ওজনের কারণেই এই নাম বেছে নেন বিজ্ঞানীরা। ৬৪০ টন ওজনের রকেটটির উড়ে যাওয়ার কথা চন্দ্রযানকে নিয়ে। তারপর যেমন হয়, নির্দিষ্ট কক্ষে মূল যানকে ছেড়ে দেওয়ার পরই জিএসএলভি-এমকে ৩ ওরফে বাহুবলীর ছুটি। এরপর সেপ্টেম্বরে ওই চন্দ্রযানের চাঁদের দক্ষিণমেরুতে গিয়ে নামার কথা। সেখানে মাটি খুঁড়ে খনিজের সন্ধান করার কথা চন্দ্রযানের। যা চাঁদে প্রাণের উপস্থিতি নিয়েও তথ্য দেবে। সবচেয়ে বড় কথা চাঁদের যেখানে যানটির নামার কথা সেখানে সূর্যের আলো প্রায় পৌঁছয় না। এখানে এর আগে কখনও কোনও দেশের যান নামেনি। তাই ভারতের পাওয়া তথ্য সারা বিশ্বের গবেষণাকে সমৃদ্ধ করতে পারবে। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা