দাঁতের যত্ন নিতে অভিভাবকদের জন্য দন্ত চিকিৎসকের অমূল্য কিছু পরামর্শ
অনেক সময়ে শিশুদের দাঁতের সমস্যা থাকলে ওরা নানাভাবে কষ্ট পায়। যেমন, জ্বর হতে পারে। অনেক সময়েই মাড়ি ফুলে যায়। শিশুটি তখন কান্নাকাটি করে। শিশুর দাঁতের যত্ন নেবেন কি করে, তারই কিছু পরামর্শ দিলেন দন্ত চিকিৎসক।
কথায় বলে, দাঁত থাকলে দাঁতের মর্ম বোঝে না। কথাটা খুব দামি। বহু মানুষই জানেন না দাঁতের মর্ম কী। ফলে দাঁতের রোগে আক্রান্ত হয়ে বেজায় কষ্ট পান। আমার পরামর্শ, কীভাবে অভিভাবকেরা শিশুর দাঁতের যত্ন নেবেন সে সম্পর্কেই। যাতে সে উপলব্ধি করতে পারে তার দাঁতের মর্ম। অন্যথায় তাকেও ভুগতে হবে দাঁতের নানান ধরনের অসুখে। এই অবস্থায় যাতে তাকে না পড়তে হয় সে ব্যাপারে অভিভাবকদের ভূমিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর দাঁতের যত্ন নিয়ে অভিভাবকদের একগুচ্ছ পরামর্শ দিয়েছেন দন্ত চিকিৎসক মীনাক্ষী চৌধুরী। ধনীদরিদ্র নির্বিশেষেই কিন্তু কয়েকটি সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত বলেই পরামর্শ তাঁর।
শিশুর জন্মের পরের ৬ থেকে ৮ মাস বয়সের ভিতর শিশুর ওপরের পাটিতে দুটি দাঁত গজায়। একইভাবে দুটি দাঁত গজায় নিচের পাটিতেও। এভাবে মোট ৪টি দাঁত গজায়। এরপরে আড়াই বছর বয়স থেকে তিন বছর বয়সে ওপরের এবং নিচের পাটি মিলিয়ে শিশুর সাধারণত ২০টি দাঁত গজায়। তবে শিশুর শরীরে যদি ক্যালসিয়ামের অভাব থাকে – তাহলে দাঁত বেরোতে দেরি হয়। কিংবা, দাঁত বেরোলেও সেগুলির সঠিকভাবে বৃদ্ধি ঘটে না।
অনেক সময়ে শিশুদের দাঁতের সমস্যা থাকলে ওরা নানাভাবে কষ্ট পায়। যেমন, জ্বর হতে পারে। অনেক সময়েই মাড়ি ফুলে যায়। শিশুটি তখন কান্নাকাটি করে। এইসব ক্ষেত্রে অভিভাবকদের উচিত অযথা দেরি না করে শিশুটিকে নির্ভরযোগ্য কোনও দাঁতের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া। ডাক্তারবাবু পরীক্ষা করে যে ওষুধ দেবেন তা মেনে চলা। তবে এতো গেল দাঁতের সমস্যা থাকলে কী করবেন। কিন্তু সব শিশুই তো দাঁতের সমস্যায় ভোগে না। তাদরেও কিন্তু দাঁতের যত্ন নিতে হবে নিয়ম মেনে। না হলে পরে তাকে দাঁত নিয়ে ভুগতে হতে পারে। শিশুর দাঁতের যত্ন নেওয়ার জন্যে মায়েদের কিছু কর্তব্য পালন করতে হবে রুটিনমাফিকই। যেমন, মায়েদের উচিত পাতলা ধরনের পরিস্কার ন্যাকড়া দিয়ে শিশুটির দুপাটি দাঁত নিয়মিতভাবে পরিস্কার করে দেওয়া। এটা করলে দাঁতের রোগের সম্ভাবনা অনেকটাই কমবে। আজকাল বাজারে বেবি ব্রাশ পাওয়া যাচ্ছে। বেবি ব্রাশ ব্যবহার করেও শিশুর দাঁত পরিস্কার করে দিতে পারেন অভিভাবকেরা।
মীনাক্ষী চৌধুরীর আরও পরামর্শ, সদ্যোজাত বা ৬ মাস বয়সের পরে দাঁত গজাতে শুরু করলে অভিভাবকদের – বিশেষত মায়েদের শিশুর দুপাটি দাঁত পরিস্কার করতে হবে নানা কারণে। কারণ এই বয়সের শিশুরা সাধারণত মায়ের বুকের দুধ কিংবা বেবি ফুড খেয়ে থাকে। ফলে কী হয় – শিশুর দাঁতদের ফাঁকে লেগে থাকে দুধের উচ্ছিষ্ট অংশ। দুবেলা তা পরিস্কার না করালে শিশুটি পরবর্তী সময়ে দাঁতের রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
শিশুদের দাঁত গজিয়ে গেলে রাতে ব্রাশ করানোটা খুবই স্বাস্থ্যসম্মত। ঘুমোবার আগে শিশুটিকে ব্রাশ করিয়ে শোয়ানোই মায়েদের পক্ষে উচিত কাজ হবে। এরপরে শিশু একটু বড় হলেই তাকে অভ্যাস করিয়ে দিতে হবে সে যেন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে জলখাবার খাবার আগে একবার দাঁত মাজে। আর রাতে শোওয়ার আগে যেন একবার দাঁত মেজে শোয়। এই অভ্যাস নিয়মিতভাবে পালন করলে আজীবন দাঁতের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় থাকেই না।
আসলে বাচ্চারা লজেন্স, চকোলেট ইত্যাদি খেতে ভালোবাসে। মিষ্টি খেতেও ভালোবাসে। কিন্তু এ ধরনের খাবার বাচ্চাদের পক্ষে খাওয়াটা খুব একটা ভালো নয়। কেননা মুখের ভিতর আশ্রয় করে আছে প্রায় ৫০০ রকমের ব্যাকটেরিয়া। এই ব্যাকটেরিয়াগুলি চকোলেট বা মিষ্টি জাতীয় খাবার বেশি খাওয়ার ফলে অ্যাসিড বাড়িয়ে দিয়ে দাঁতের ক্ষয় ধরাতে পারে। এজন্য সকালে স্কুলে যাওয়ার আগে ব্রাশ করা কিংবা রাতে ঘুমের আগে ব্রাশ করার অভ্যাস যদি শিশুদের ভিতর গড়ে তোলা আবশ্যিক।
শিশুদের দাঁতের পাটি তৈরি হয় ৬ বছর বয়স থেকে। এই সময়ে শিশুদের ওপরের ও নিচের পাটিতে স্থায়ী দাঁত তৈরি হয়। এই সময়ের আগে উপরে উল্লিখিত পরামর্শ অনুসারে অভিভাবকেরা যদি বাচ্চার দাঁতের যত্ন না নেন তবে পরবর্তীকালে বড় হয়ে নানা দাঁতের সমস্যা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। তবে কোনও কোনও ক্ষেত্রে নিয়মানুযায়ী সময়মত সব শিশুর স্থায়ী দাঁত বেরোয় না। এর নানান কারণ থাকতে পারে। অন্যতম প্রধান একটি কারণ হল ভিটামিনের অভাব। এছাড়াও, ফুসফুসের সমস্যা কিংবা শিশুটির অ্যাসিডিটি থাকলেও সে দাঁত নিয়ে ভুগতে পারে। এক্ষেত্রে অভিভাবকদের দাঁতের ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করাটা খুবই জরুরি।
মীনাক্ষী চৌধুরীর মতে, শিশুর জীবনে অভ্যাসই সবচেয়ে বড় কথা। অভিভাবকেরা যদি স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হন, তাহলে সেই সচেতনতা তাঁরা শিশুর জীবনে সঞ্চার করতে পারবেন। অন্যথায়, শিশুটি জন্ম থেকে নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে জ্ঞানহীনভাবে সাবালক হবে। এটা তার জীবনের পক্ষে যেমন অমঙ্গলের – তেমনই ভবিষ্যতের সমাজের পক্ষেও অমঙ্গলের হবে।