চলে যাওয়া প্রেমিকের বিপুল ঋণ মেটালেন প্রেমিকা, এই অমর প্রেম কাহিনি এক অসামান্য উদাহরণ
বিশ্বজুড়ে এমন অনেক প্রেম কাহিনি রয়েছে যা বইয়ের পাতার কাল্পনিক চরিত্র। কিন্তু তাদের চেয়েও অনেক বেশি হৃদয় বিদারক এই প্রেম কাহিনি।

রোমিও জুলিয়েট, হির রাঞ্ঝা, সোনি মহিওয়াল এবং এমন অনেক অমর প্রেম কাহিনি বহুবছর ধরে মানুষকে আবেশে ভরিয়ে দেয়। কিন্তু এরা তো বইয়ের পাতা থেকে তুলে আনা চরিত্র মাত্র। বাস্তবের প্রেম কাহিনি যে কল্পনার চেয়েও আরও কত মধুর হতে পারে তা বোঝা গেল এক তরুণীর এই লড়াই দেখে।
এখন তাঁর বয়স ৩৪ বছর। কিন্তু ২০১৬ সালে যখন তিনি ২৫ বছরের তরুণী, তখন তাঁর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয় এক যুবকের। ২ জনই একে অপরের প্রেমে পাগল। আর ঠিক সেই সময় তরুণীর সবটুকু খুশি হারিয়ে যায় এক পলকে।
পেশায় ব্যবসায়ী ওই যুবক গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। ২৫ বছর বয়সে এই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠা সহজ ছিলনা ওই তরুণীর জন্য। কিন্তু নিজেকে কিছুটা সামলে তিনি দেখেন তাঁর প্রেমিক বহু টাকার ঋণ রেখে গেছেন। ব্যবসা করে সে টাকা হয়তো মিটিয়ে দেবেন ভেবেই ঋণ নেওয়া। কিন্তু তাঁর অকালে চলে যাওয়া সব ওলটপালট করে দেয়।
তরুণী দেখেন ঋণের অঙ্ক বিপুল। ভারতীয় মুদ্রায় যার অঙ্ক দাঁড়ায় ৭১ লক্ষ টাকা। চিনের হুনান প্রদেশের বাসিন্দা ওয়াং টিং নামে ওই তরুণী কিন্তু স্থির করেন তিনিই তাঁর প্রয়াত প্রেমিক জেং ঝি-র সব ঋণ মিটিয়ে দেবেন।
তাঁর কারখানার কর্মচারি যাঁরা মাইনে পাননি তাঁদের মাইনেও তিনিই চুকিয়ে দেবেন। নিজের যাবতীয় জমানো অর্থ তো বটেই, তার সঙ্গে নানা প্রদেশে ঘুরে কাজ করে তিনি অর্থ রোজগার করে মেটাতে থাকেন ঋণ।
শুধুই কি ঋণ মেটানো! সেই সঙ্গে প্রয়াত প্রেমিকের বাবামায়ের যত্নও সমান তালে নিয়ে চলেন ওয়াং। এভাবে দীর্ঘ ৯ বছরে তিনি অবশেষে জেং ঝি-র সব ঋণ মিটিয়ে দিয়েছেন।
বিয়ে করেছেন ওয়াং। নিজের বিয়েতে প্রয়াত প্রেমিকের বাবামাকেও নিমন্ত্রণ করেছিলেন। সেখানেই তিনি জানান, ওই ২টি মানুষ তাঁর জীবনে সর্বদা থেকে যাবেন। তাঁদের কোনও অযত্ন ওয়াং হতে দেবেন না। বিয়ের পর তিনি ৬ বাবামায়ের দায়িত্ব সামলাবেন হাসিমুখে।
আজকের দুনিয়ায় যেখানে দাম্পত্যজীবনই কয়েক বছরের মধ্যে ভেঙে যাচ্ছে, সেখানে প্রেমের গভীরতা কোন পর্যায়ে না থাকলে কোনও তরুণী তাঁর প্রয়াত প্রেমিকের জন্য এভাবে ঋণ শোধ করেন? এভাবে তাঁর বাবামায়ের সারাজীবনের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন? ওয়াং এই দুনিয়ার আধুনিক প্রজন্মের জন্য এক উদাহরণ তৈরি করে দিলেন।