বাংলা চলচ্চিত্র জগতে ফের ইন্দ্রপতন। একটি যুগের অবসান। প্রয়াত বাংলা সিনেমার কিংবদন্তি অভিনেতা চিন্ময় রায়। দীর্ঘ রোগভোগের পর রবিবার রাতে সল্টলেকে নিজের বাসভবনে মৃত্যু হয় তাঁর। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। রাতের খাওয়া শেষ করার কিছু পরেই অসুস্থ বোধ করতে থাকেন তিনি। চিন্ময় রায়ের মৃত্যুতে বাংলা সিনেমা ও নাট্য জগতে শোকের ছায়া নেমে আসে। নিজের অভিনয় প্রতিভার গুণে মঞ্চ থেকে পর্দা, সর্বত্রই এক নিজস্ব অভিনয়শৈলীর স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি।
মূলত হাস্য কৌতুক অভিনেতা হিসাবেই পরিচিত তিনি। একসময়ে জহর রায়, রবি ঘোষ, চিন্ময় রায়, অনুপ কুমার, এই ৪ জন বাংলা সিনেমার হাসিটা শক্ত হাতে ধরে রেখেছিলেন। দর্শকদের কাছে এঁরা ছিলেন বড়ই প্রিয়। চারমূর্তি সিনেমায় টেনিদার চরিত্রে অভিনয় করার পর তিনি বহু মানুষের কাছে টেনিদাই হয়ে গিয়েছিলেন। এমনই তাঁর অভিনয় প্রতিভা। চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলার দক্ষতা।
১৯৪০ সালে অধুনা বাংলাদেশের কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন চিন্ময় রায়। চিরকাল অভিনয়কেই পেশা হিসাবে নিয়েছেন। শুরু মঞ্চে অভিনয় দিয়ে। পরে সিনেমায় পদার্পণ। সত্যজিৎ রায় থেকে তপন সিংহ, বাংলার তাবড় পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। গল্প হলেও সত্যি সিনেমায় তাঁর ছোট অংশে অভিনয় আজও মানুষের মনে আছে। যেমন মনে আছে গুপী গাইন, বাঘা বাইন সিনেমায় হাল্লার রাজার দূত হিসাবে তাঁর ছোট্ট অভিনয়। তাঁর অভিনীত বসন্ত বিলাপ, ধন্যি মেয়ে, ননীগোপালের বিয়ে সহ বহু সিনেমা নিয়ে আজও চর্চা হয়। ছিপছিপে চেহারার চিন্ময় রায় শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন।
স্ত্রী জুঁই রায়ের মৃত্যুর পর তিনি ক্রমশ নিজেকে অভিনয় জগত থেকে সরিয়ে নেন। বাড়িতেই থাকতেন। গত বছর ছাদ থেকে পড়েও যান। বড় আঘাত পান। বেঁচে যান সে যাত্রায়। তবে সেই যে চোট পেলেন সেই অসুস্থতা ক্রমশ তাঁকে গ্রাস করে নেয়। অবশেষে রবিবার তিনি চলে গেলেন। তাঁর মৃত্যুতে বাংলা চলচ্চিত্র জগত এক যুগ সৃষ্টি করা অভিনেতাকে হারাল।