
নাহুমস ছাড়া বর্ণহীন বড়দিনের স্বাদ। নিউ মার্কেটকে কলকাতার কেকের রাজধানী করে তোলার পিছনে ইহুদি দোকানটির ভূমিকা অপরিসীম। এখানকার পাম কেকের স্বাদ চেখে দেখার তাড়নায় প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ক্রেতারা বারবার ছুটে এসেছেন পূর্বতন হগ মার্কেটের এই কনফেকশনারিতে। রিচ ফ্রুট কেক থেকে গরম পুডিংয়ের স্বাদ ১১৪ বছর ধরে তিলোত্তমার রসনার বাসনা পূর্ণ করে চলেছে।
নিউ মার্কেট ও তার সংলগ্ন অঞ্চলে অনেক কেকের দোকান থাকলেও তারা কেউই নাহুমসের জায়গা নিতে পারেনি। সারাবছর ভিড় লেগে থাকলেও, কড়া শীতকে সঙ্গী করে বড়দিন যত এগিয়ে আসে, ততই রেশনের দোকানের মতো লম্বা লাইন পরে নাহুমসে। ক্রেতাদের ভিড় সামলাতে গিয়ে সামান্য ফোন ধরারও ফুরসৎ মেলেনা দোকানের কর্মীদের। বাড়ির বড়দের সঙ্গেই পছন্দের কেক কিনে নিয়ে যেতে দোকানে হাজির হয় খুদেরাও।
দোকানের শোকেসে সাজানো কেকের সারি দেখে একে অনায়াসেই কেক সাম্রাজ্য বলা যেতে পারে। তীব্র ব্যস্ততার ফাঁকেই আলাপ হল দোকানের বর্তমান কর্ণধার জেসিকা ব্যাপটিস্টের সঙ্গে। ক্রেতাদের থেকে টাকা নিয়ে ব্যাল্যান্স ফেরত দিতে দিতেই তিনি জানালেন তাঁদের কেক ভাণ্ডারে থাকা কেকের বৈচিত্র্যের কথা। ৫০০ গ্রাম ওজনের ফ্রুট কেকের দাম ২০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে গুণমান অনুযায়ী ৯০০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। বড়দিন উপলক্ষে তাঁদের বিশেষ কেক, যাকে তাঁরা স্পেশাল কেক নাম দিয়েছেন, সেটির মূল্য ৪৫০ টাকা। জেসিকা জানান, তাঁদের পূর্বপুরুষরা এক শতাব্দী আগে যে পদ্ধতি এবং রেসিপি ব্যবহার করতেন, আজও তার কোনও বদল ঘটেনি।
বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন থেকে শুরু করে ‘৪২-এর দাঙ্গা, দেশভাগ থেকে ‘৪৭-এর স্বাধীনতা বহু কিছুরই সাক্ষী নাহুমস। শতাব্দীপ্রাচীন ইহুদি সাহেবের কেকের দোকানটি কিন্তু তার আভিজাত্য বজায় রেখে রয়ে গিয়েছে একইরকম। এই দোকানের কেক মানুষ শুধু জিভ দিয়েই নয়, চিনেছে নস্টালজিয়া দিয়েও। তাই কলকাতায় বড়দিনের কেকের প্রসঙ্গ উঠলে নাহুমস ছাড়া আর বিকল্প কোনও নামই ভাবা যায় না।