অ্যাই দুষ্টুমি কোর না, জুজু আসবে কিন্তু। দুরন্ত বাচ্চাদের সামলাতে অনেক অভিভাবককেই জুজুর ভয় দেখানোর কথা বলতে শোনা যায়। তবে এই জুজুর আদৌ অস্তিত্ব আছে কিনা তা অবশ্য জানা নেই। দুষ্টু বাচ্চাদের জব্দ করতে একইভাবে অস্ট্রিয়ার মা-বাবারা ক্রাম্পাসের ভয় দেখান। বাচ্চাদের কাছে ক্রাম্পাস আস্ত একটা শয়তানের প্রতিমূর্তি।
প্রচলিত লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, এই ক্রাম্পাস স্বভাব ও আচরণে সান্টাক্লজ অর্থাৎ প্রাচীন গ্রিসের প্রবাদপ্রতিম বিশপ সেন্ট নিকোলাসের একদম বিপরীত। সান্টা বা নিকোলাস তো সকলের খুব প্রিয়। শান্ত বা দুষ্টু সব বাচ্চাদের তিনি ভালবাসেন। বাচ্চারাও সান্তাদাদু বলতে অজ্ঞান। মিশুকে সান্টাও বাচ্চাদের নানা উপহারে ভরিয়ে দেন। আর নিকোলাসের যমজ ক্রাম্পাস কিন্তু দুষ্টু বাচ্চাদের দুচক্ষে দেখতে পারেন না। গোটা এলাকায় তিনি হো-হো-হোড় স্লেজ গাড়িতে চড়ে ঘুরে বেড়ান। যেখানে দুষ্টু বাচ্চা চোখে পড়ে, তাদের বস্তার মধ্যে পুরে দূরে ছেড়ে দিয়ে আসেন ক্রাম্পাস।
অর্ধ মানব অর্ধ ছাগ আকৃতির ক্রাম্পাসের মাথায় লম্বা লম্বা শিং। চোখ দুটো তাঁর সবসময় ভাঁটার মতো জ্বলছে। দলবল নিয়ে ইতালির টাইরোলিয়েন পর্বতমালায় তিনি বাস করেন বলে বিশ্বাস সাধারণ মানুষের। একদিকে সেন্ট নিকোলাস যেমন তাঁর স্বভাবগুণে কিংবদন্তী চরিত্র হয়ে উঠেছেন। অন্যদিকে ক্রাম্পাস তাঁর শয়তানি প্রবৃত্তি নিয়ে কিন্তু খলনায়ক হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন অস্ট্রিয়াবাসীর জীবনচর্চায়। তাইতো প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসের শুরুতেই সে দেশের যুবসম্প্রদায় ক্রাম্পাসের পোশাক পরে মেতে ওঠেন একধরণের দুষ্টুমিষ্টি উৎসবে।
৫ ও ৬ ডিসেম্বর সেন্ট নিকোলাসের দিনটিতে ক্রাম্পাস প্যারেডের আয়োজন হয় অস্ট্রিয়ার নানা প্রান্তে। ভয়ানক সব মুখোশ পরে রাতের বেলা ক্রাম্পাস সেজে হাতে মশাল, লৌহশৃঙ্খল ও ঘণ্টা হাতে বাচ্চাদের ভয় দেখাতে বেরিয়ে পরেন অস্ট্রিয়ার মানুষ। সেই উৎসবে অংশগ্রহণ করেন সাধারণ পর্যটকরাও। অস্ট্রিয়ায় সীমানা ছাড়িয়ে বর্তমানে এই উৎসব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অন্যান্য দেশেও।