আর মাত্র কিছুক্ষণের অপেক্ষা। এরপর পিঠে উপহারের ঝুলি নিয়ে হাসি মুখে ঘরের দোরগোড়ায় হাজির হবেন সান্টাক্লজ। আর সাথে সাথে বেজে উঠবে ঘণ্টা। আকাশে বাতাসে কান পাতলেই শোনা যাবে মেরি ক্রিসমাসের উল্লাস। সেই উল্লাস লগ্নের অপেক্ষায় সাজ সাজ রব কলকাতা পার্ক স্ট্রিটে। প্রবেশ পথের আলোকতোরণ বলে দিচ্ছে শীত পড়ুক না পড়ুক, আজ শীত উৎসব। কলকাতার অভিজাত দ্য পার্ক হোটেলের সামনে সাজানো ক্রিসমাস ট্রি আর শ্লেজগাড়ির চালক সান্টাক্লজের সামনে উৎসাহী মানুষের ভিড় দেখে দুর্গা পুজোর অষ্টমীর রাত বলে ভ্রম হয়। তফাত শুধু এক জায়গাতেই। শাড়ি পাঞ্জাবীতে সেজে ওঠা বাঙালির কলকাতাকে সেখানে খুঁজে পাওয়া যাবে না। চোখে রঙিন চশমা, মাথায় লাল টুকটুকে পশমের টুপিতে সেজে ওঠা জনতার ঢল দেখে মনে হবে ভিন দেশের কোনও মহানগরের রাজপথ এটা। যেদিকে দুচোখ যায় শুধু লাল সাদা কালো মাথার ভিড়।
ক্রিসমাসের উন্মাদনায় সামিল তরুণ প্রজন্ম ফুলের ব্যান্ড, টুপি, আলো জ্বলা কৃত্রিম হরিণের শিং বা মিকি মাউস ব্যান্ড মাথায় দিয়ে সেলফি জ্বরে কাবু। এই সাজ আনন্দোৎসব সবটাই আসলে ধর্মের সীমানা পার করে আসা মহোৎসবের উন্মাদনার ফসল। তাইতো পথের ধারে ধারে আট থেকে আশি সকলকে সাজিয়ে তোলার পসরা নিয়ে হাজির দোকানিরাও। সোনালি রুপালি মুখোশে মুখ ঢাকা একদল তরুণীকে দেখে মনে হয় ক্রিসমাস নয়, বর্ষবরণের রাত আজ।
ভিড়ের সমুদ্রে যেমন উৎসবের মেজাজে প্রাণোচ্ছল কচিকাঁচারা, তেমনই সারা বছরের হাঁটুর ব্যথা কোমরের ব্যথাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে জনতার ঢলে পা মিলিয়েছেন মাঝবয়সী থেকে প্রৌঢ় সকলে। তাঁদের ক্রিসমাস সাজই বলে দিচ্ছে বয়সটা কেবল শরীরের বিষয়, মনের নয়।
২৪ ডিসেম্বর রবিবার। আর তারপরের দিন সোমবার ২৫ ডিসেম্বর। তাই বাড়তি আরেকদিন ছুটিতে জনজোয়ারে মহামানবের মিলনক্ষেত্রে পরিণত ২০১৭-র পার্ক স্ট্রিট। তিলোত্তমার বাসিন্দারাই শুধু নন, প্রতিবেশি জেলা হাওড়া, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনাসহ অন্যান্য জেলা থেকেও কলকাতার দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে আসা উৎসবপ্রিয় মানুষ সপরিবারে ঢুঁ মারতে এসেছেন পার্ক স্ট্রিটে।
আলোর ঝর্না দুচোখ ভরে উপভোগ করার পাশাপাশি পেটের দাবি মেটাতে টুক করে একফাঁকে তাঁরা ঢুকে পড়ছেন রাস্তার ধারের রেস্তোরাঁয় কিংবা খাবার স্টলে। মোমো, কেক, আইসক্রিম, ফুচকার একাধিক স্টলগুলোতে মাছি গলার উপায় পর্যন্ত নেই। ভোজন রসিকদের ভিড় সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেলেও বিক্রিবাটার রেকর্ড চওড়া হাসি এনে দিয়েছে বিক্রেতাদের মুখে।
ক্রিসমাস উৎসবের নেশার পারদ চড়াতে উষ্ণ অভ্যর্থনার ডালি সাজিয়ে প্রস্তুত নামকরা পাবগুলিও। তবে কোথাও যাতে বিন্দুমাত্র অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার দিকে কড়া নজর পার্ক স্ট্রিটে মোতায়েন কয়েকশো পুলিশকর্মীদের। এমনকি এবারে পার্ক স্ট্রিটের প্রাণকেন্দ্র অ্যালেন পার্কের সামনে বসানো হয়েছ ওয়াচ টাওয়ার। যেখান থেকে নজরদারি চালানো হচ্ছে গোটা এলাকার উপর।
তবে এত আনন্দের মাঝে কোথাও যেন অভিযোগের কালো মেঘ জমে সাধারণ মানুষের মনে। ২৪ আর ২৫ ডিসেম্বর এই দুই দিন বন্ধ অ্যালেন পার্ক। অন্যদিকে ভিড়ের চাপে পরিবার বন্ধুদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে কেউ বা তিতিবিরক্ত। তবে সেইটুকু অভিযোগ বাদ দিলে ক্রিসমাস মুখর রবিবারের পার্ক স্ট্রিট বড়দিনে বাঁধভাঙা আনন্দের ইঙ্গিতটুকু এদিন স্পষ্ট করে দিয়েছে।