ভরাট মুখটা তাঁর নিষ্পাপ হাসিতে উজ্জ্বল। দুধ সাদা গোঁফ আর বুক অবধি ঝোলা এক গাল দাড়িতে দিব্যি মানিয়েছে তাঁকে। মাথায় লাল-সাদা রঙের পশমের টুপি। নাদুস-নুদুস চেহারাটি মেরুন রঙের বন্ধনী দেওয়া লাল টুকটুকে উলের পোশাকে সুসজ্জিত। লাল রঙের প্যান্ট আর ক্যাম্বিসের জুতোয় সান্তাবুড়োর এই ভুবনজয়ী রূপের সঙ্গে কে না পরিচিত! বাচ্চা থেকে যুবা হয়ে বৃদ্ধ, সকলের কাছে বড়দিন বলতে বোঝায় সান্টাক্লজ। তবে আমাদের প্রিয় সান্তাদাদুর পোশাক আজ থেকে কয়েকশো বছর আগে কিন্তু মোটেই এমন ছিল না।
চতুর্থ শতকে প্রাচীন গ্রিসের মায়রা নগরের লোকপ্রিয় বিশপ ছিলেন সেন্ট নিকোলাস। মনে করা হয়, তাঁরই প্রতিমূর্তি হলেন আজকের সান্টা। যিনি একসময় লাল ছাড়াও সবুজ, নীল, বেগুনি, খয়েরি, কালো, সাদা ইত্যাদি নানা রঙের পশমের পোশাক পরিধান করতেন। সান্টার এই পোশাকে প্রথম একটা বড়সড় পরিবর্তন আসে ১৮২৩-এ প্রকাশিত আমেরিকান কবি ক্লিমেন্ট মুরের লেখা ‘এ ভিজিট ফ্রম সেন্ট নিকোলাস’ কবিতায়। অচিরেই প্রবল জনপ্রিয়তা প্রাপ্ত সেই কবিতায় কবি বর্ণিত সেন্ট নিকোলাসের পোশাক বর্ণনা হুবহু মিলে যায় আমাদের চেনা সান্টার শীতবস্ত্রের সঙ্গে। কোনও কোনও ছবিতে তো শৌখিন সান্টাকে হাতে সুরাপাত্র বা ধূমপানের পাইপ পর্যন্ত হাতে ধরে থাকা অবস্থায় দেখা যায়।
১৯৩০ সালের পর আরও একবার সান্টাক্লজের পোশাকে রূপান্তর ঘটে যায় জনপ্রিয় পানীয় কোম্পানি কোকাকোলার বদান্যে। বলা ভাল, আধুনিক একটা মেক-ওভার পেয়ে যান সান্টা। কালো রঙের বেল্ট সহযোগে লাল-সাদা রঙের মখমলে পোশাকে সান্টাক্লজকে মানুষের সামনে এনে দাঁড় করায় কোকাকোলার শীতকালীন একটি বিজ্ঞাপন। নীল আর লাল রঙের কোকাকোলা ক্যানের সঙ্গে কমবেশি সকলেই পরিচিত। লাল রং নির্বাচনের কারণ হিসেবে কোম্পানি এই রঙের শক্তি, উদ্যম ও আবেগের দিকটিকে গুরুত্ব দেয়। কালক্রমে আমেরিকান চিত্রশিল্পী হ্যাডন স্যান্ডব্লুমের আঁকা প্রাণোচ্ছল সান্টা ও তাঁর পোশাক মানুষের মণিকোঠায় অমরত্ব লাভ করে।