আজ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্মদিন
করোনাকে নির্মূল করতে টিকা হোক বা ওষুধ, তার কার্যকরী ভূমিকা নিশ্চিত করতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মানুষের ওপর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয়েছে। ২০ মে সেই ক্লিনিক্যাল ট্রায়েলর জন্মদিন।
কলকাতা : ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল। মানুষের ওপর নতুন ওষুধের পরীক্ষা। যে পরীক্ষার বিভিন্ন সময়ের সাফল্য মানবসভ্যতাকে উপহার দিয়েছে একের পর এক প্রাণঘাতী, ভয়ংকর সব অসুখের নিরাময়ের পথ্য। সময়টা ১৭৪৭ সালের ২০ মে। ব্রিটিশ নৌসেনা জাহাজ টহল দিচ্ছিল ইংলিশ চ্যানেলে। সেসময় স্কার্ভি রোগে আক্রান্ত হচ্ছিলেন সমুদ্রে চষে বেড়ানো ব্রিটিশরা। তুলনায় এই রোগ স্প্যানিশ ও ফরাসী সেনাকে কাবু করছিলেন অনেক কম। ইংলিশ চ্যানেলে প্রহরারত ব্রিটিশ নৌসেনার জাহাজে ছিলেন সমুদ্রের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ তথা শল্য চিকিৎসক জেমস লিন্ড। তিনি ওই জাহাজেই ১২ জন স্কার্ভি আক্রান্তকে বেছে নিলেন পরীক্ষার জন্য।
১২ জনকে আবার ২ জন করে আলাদা করে ৬টি ভাগ করলেন। তারপর ১৪ দিন ধরে তাঁদের ওপর আলাদা আলাদা চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করলেন। ওষুধ বলতে তাঁর সরঞ্জাম হল সিডার, লঘু সালফিউরিক অ্যাসিড, কমলালেবুর রস, পাতিলেবুর রস। এমনকি এতে সমুদ্রের জলও মেশানো হল। একটি পেস্ট তৈরি করলেন রসুন, সরষে, ভিনিগার এবং শুকনো মুলো দিয়ে। এসব দিয়ে নিজেই ওষুধ বানিয়ে প্রয়োগ শুরু করলেন। যদিও লেবু জাতীয় খাবার স্কার্ভি নির্মূল করতে অব্যর্থ কিনা সে বিষয়ে লিন্ড কিছুটা দোলাচলে ছিলেন। কিন্তু তাঁর ওষুধ পরীক্ষা পদ্ধতির হাত ধরেই আগামী দিনে বিশ্ব পায় ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ডিজাইন।
এই ট্রায়ালে দারুণ ফলও পান চিকিৎসক লিন্ড। ২০ মে ১৭৪৭ সালে ইংলিশ চ্যানেলের ওপর একটি জাহাজে হওয়া এই চিকিৎসার জন্য ট্রায়ালকেই মানবসভ্যতার প্রথম ট্রায়াল হিসাবে ধরে নেওয়া হয়। তারপর থেকে বিশ্বে নানা অসুখ যখনই হানা দিয়েছে তখনই মানুষ তার ওষুধ বা টিকা আবিষ্কার করে তা সত্যিই কার্যকরী কিনা তা পরীক্ষা করতে প্রথমে কিছু মানুষের ওপর সব সুরক্ষা মেনে ট্রায়াল করেছে। তারপর সেই ট্রায়াল সঠিক হলে সেটি ওষুধ আকারে বাজারে এসেছে। কোটি কোটি মানুষের রোগ সারিয়ে দিয়েছে। এজন্য ২০ মে কে বিশ্ব ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ডে বলে পালন করা হয়। সেই ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল যা এখন করোনা রুখতেও কাজে লাগানো হচ্ছে। বহু মানুষের ওপর ট্রায়াল চলছে বিশ্বজুড়ে।