শেষ কদিনে গোটা শহরটাই কেমন যেন গোলাপি হয়ে গিয়েছিল। মনুমেন্ট থেকে শুরু করে শহরের সব নামকরা স্থাপত্য গোলাপি রঙে মেতে উঠেছিল। সেজেছিল হাওড়া ব্রিজও। ইডেনের কোণা কোণা সন্ধে নামলেই গোলাপি হয়ে যাচ্ছিল। রঙের প্রলেপও পড়েছিল অনেক জায়গায় গোলাপি। দর্শকাসনের মাঝে থাকা স্তম্ভগুলো পর্যন্ত গোলাপি। চারদিক দেখে মনে হচ্ছিল দেশের সব গোলাপি আলো বুঝি এনে লাগানো হয়েছে এই শহরে। সেইসঙ্গে সংবাদের শিরোনামেও ছিল গোলাপি ক্রিকেট। মানুষের মুখে মুখে ঘুরছিল গোলাপি টেস্ট। আর ছিল অপেক্ষা। কখন সেই ঐতিহাসিক ক্ষণ এসে উপস্থিত হবে। অবশেষে তা এল। শুক্রবার বেলা বাড়তেই ইডেনমুখী ছিলেন দর্শকরা। টেস্টে ক্রিকেট ঘিরে এত উন্মাদনা। এত মানুষের আগমন। তাও শুক্রবারে। এ শেষ কবে ইডেন দেখেছে বলা মুশকিল। টেস্টের টানের সঙ্গে গোলাপি বলের দিনরাতের টেস্টের ঐতিহাসিক মুহুর্তের সাক্ষী হতেও মানুষ ছুটে এসেছিলেন এদিন। পিচের ওপর গোলাপি বল কেমন লাগে তাও ছিল দেখার।
দুপুর ঠিক সাড়ে ১২টায় হয় ঐতিহাসিক টস। কারণ ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে যে গোলাপি বলে রাত-দিনের টেস্ট শুরু হল তার প্রথম টস হওয়ার মুহুর্ত বলে কথা! টসও হল সোনার কয়েনে। বিশেষভাবে তৈরি গোলাপি ক্রিকেটের জন্য সোনার কয়েন প্রথম ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি ও বাংলাদেশের অধিনায়ক মমিনুল হক-কে বুঝিয়ে দেন ম্যাচ রেফারি রঞ্জন মধুগলে। টস করেন বিরাট। টস জেতে বাংলাদেশ। টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন মমিনুল। নিজেই জানান এই পরিস্থিতিতে এটাই সঠিক সিদ্ধান্ত। অন্যদিকে টস হারাকে বিশেষ গুরুত্ব না দিয়েও বিরাট এটা মেনে নেন যে তাঁরাও টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে চাইছিলেন। তবে টস হারলেও প্রথম কিছু ওভারে তাঁর কাছে পরিস্কার হয়ে যাবে বল কেমন ব্যবহার করছে। এটা একটা বড় সুযোগ বলে মনে করছিলেন তিনি।
টসের পর ২ দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে পরিচয় করতে মাঠে হাজির হন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বিরাট কোহলির সঙ্গে শেখ হাসিনার আলাপ করিয়ে দেন। এরপর বিরাট কোহলি শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর দলের বাকি খেলোয়াড়দের আলাপ করিয়ে দেন। পিছনে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর পিছনে শচীন তেন্ডুলকর। সকলেই করমর্দন করে খেলোয়াড়দের শুভেচ্ছা জানান। একই সঙ্গে বাংলাদেশ দলের সঙ্গেও আলাপ সারেন অতিথিরা।
ইডেনে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় নতুন শুরু করেছেন ঘণ্টা বাজিয়ে খেলা শুরু করার রেওয়াজ। এদিন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী মিলে ঘণ্টা বাজিয়ে খেলা শুরু করেন। তার আগে হয় ২ দেশের জাতীয় সঙ্গীত। ইডেনে ঠিক ঘড়ির কাঁটায় দুপুর ১টায় শুরু হয় ভারতের প্রথম ঐতিহাসিক গোলাপি বলের দিন রাতের টেস্ট। ভারতের হয়ে প্রথমে বল করেন ইশান্ত শর্মা। সূর্যের আলোয় খেলা হতে হতে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের ধারণা গোলাপি বল পুরনো হয়ে যাবে। উঠে যাবে ওপরের ল্যাকার। যদিও গোলাপি বলে অতিরিক্ত ল্যাকার রয়েছে। তবে সন্ধে নামতে নামতে সেই ল্যাকার উঠে যাবে। তখন স্পিনারদের সুবিধা হবে। সে যাই হোক, গোলাপি বলে ইডেনে ঐতিহাসিক ক্রিকেটের সূচনা হল এদিন। শুরু হল ভারতীয় ক্রিকেটের এক নতুন অধ্যায়ের। এদিন সেই বিরল মুহুর্তে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটের প্রাক্তন অধিনায়ক থেকে অনেক খেলোয়াড়।