রাতের পর থাকা নিষেধ, বাড়ির খুব কাছেই এক অনন্যসুন্দর অভয়ারণ্য
পর্ণমোচী, মহুয়া শাল সেগুন অগুনতি। বনের গভীরে পথ চলে গিয়েছে ঢেউ খেলে খেলে। গা ছমছমে গভীরতা।
এই ভ্রমণের যাত্রা শুরু করতে হবে সম্বলপুর থেকে। আগেই ব্যবস্থা করতে হবে মোটরের। বাস যায় না। সাত সকালেই এসে হাজির হবে মোটর। ভ্রমণ পর্বে রাখুন একটা দিন, একটা অভয়ারণ্য – ‘Debrigarh Wildlife Sanctuary’ বা দেবরিগড় অভয়ারণ্য।
মোটর শহর সম্বলপুর ছেড়ে ধরবে শহরতলির রাস্তা। ছুটবে হীরাকুঁদ বাঁধের পশ্চিম প্রান্তের মসৃণ রাস্তা ধরে। দিগন্ত বিস্মৃত হীরাকুঁদ জলাধারকে পাশে রেখে পশ্চিম পাড় ধরে একটানা চলে মোটর এসে থামবে দোদ্রকুসুম (Dhodrokusum). এখান থেকেই শুরু হয়েছে দেবরিগড় সংরক্ষিত গভীর ঘন বনাঞ্চল। এক পাশ বরাবর পাহাড়ের সারি, এক পাশে সীমাহীন জলরাশি, এরই মধ্যে ৩৪৬.৯০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এই অভয়ারণ্য ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে। সম্বলপুর মাত্র ৪০ কিলোমিটার। নিজেদের গরজে যেতে হবে জিপ কিংবা মোটরে।
অরণ্যের প্রবেশ মুখেই লেখা, Forest Range Officer, Kamgaon at Dhodrokusum. এখানে খাতায় নাম লিখতে হবে, দেওয়া হবে বন ভ্রমণের ছাড়পত্র। অরণ্যে ভারতীয়দের মাথাপিছু প্রবেশকর সামান্য। বিদেশিদের ক্ষেত্রে কিছু বেশি। জিপ বা মোটরের জন্য খরচা আলাদা। ক্যামেরা নিলে দিতে হবে আরও কিছু। এই হল অরণ্যে প্রবেশের খরচা। এসব কাজ সারতে সময় লাগে মাত্র ৫ থেকে ৭ মিনিট।
এবার মোটর ছাড়পত্র পেয়ে ধীরে ধীরে ঢুকতে থাকবে অরণ্যে। ক্রমশ বাড়তে থাকবে গভীরতা। নানান গাছের ছড়াছড়ি। পর্ণমোচী, মহুয়া শাল সেগুন অগুনতি। বনের গভীরে পথ চলে গিয়েছে ঢেউ খেলে খেলে। গা ছমছমে গভীরতা। এখনও তেমন প্রচার পায়নি বলে যাত্রী সংখ্যা বেশ কম।
মোটরে বসে চোখ রাখুন বাইরে। মাঝে মাঝেই চোখে পড়বে হরিণের পাল। গাড়ি থামিয়ে ফটো তুলবেন, সে সুযোগ দেবে না। মুহুর্তে উধাও হয়ে যাবে আরও গভীর অরণ্যে।
এ বনে গাইডের প্রয়োজন হয়না। সন্ধ্যার পর থাকা নিষেধ। বাদরামা অভয়ারণ্যে রাতেই দেখা মেলে জীবজন্তুর। দেবরিগড় অভয়ারণ্যে ব্যাপারটা পুরো উলটো। যা কিছু তা দিন থাকতে।
বনের গভীরে প্রায় ৯ কিলোমিটার ঢোকার পর নজরে আসবে নীলগাই আর অসংখ্য হরিণ। মোটরের শব্দে এরাও সরে পড়বে বনের আরও গভীরে। এরপর আরও এগিয়ে চলুন ২৫ কিলোমিটার। এবার দেখা মিলবে নীলগাই বাইসন সম্বর হনুমান ভাল্লুক হায়েনা প্রভৃতির। লেপার্ড আর বাঘের দেখা প্রায় মিলবেই না। এরা থাকে বনের আরও অনেক অ-নে-ক গভীরে। ওড়িশা সরকারের বন বিভাগের মতে এই অভয়ারণ্যে উন্মুক্তভাবে ঘুরে বেড়ায় বাঘ ও লেপার্ড। নানান ধরনের পাখির সঙ্গে আছে পাইথন গোখরো ঘড়িয়ালের মত সরীসৃপ। নিকটবর্তী হীরাকুঁদ লেকের ধার ঘেঁষে চরে বেড়ায় অসংখ্য কুমির।
পাহাড় বন আর পাশের দিগন্ত বিস্তৃত সুশীল লেকের শোভা অসম্ভব আকর্ষণীয় করে তুলেছে দেবারিগড় অভয়ারণ্যকে। একই সঙ্গে পর্যটক মনকে শিহরিত করে তুলবে গাঢ় সবুজ বনের নির্জনতা। — ছবি – শিবশংকর ভারতী
সম্পূর্ণ ভুল তথ্য। এখানে রাত্রে থাকার ব্যবস্থাও আছে। আমি নিজে রাত্রে থেকেছি। আগস্ট মাসে যখন প্রায় সারা ভারতের অরণ্য পর্যটকদের জন্য বন্ধ থাকে সে সময়ও দেবড়িগড়ে রাত্রি কাটানো যায়।