ডায়াবেটিস রোধে চিকিৎসকের অমূল্য পরামর্শ
ব্যস্ত জীবনে অনেকে ন্যূনতম শরীরচর্চা করার সময়টুকুও পান না। এমনও অনেক মানুষ আছেন যাঁদের কপালে সর্বক্ষণ চিন্তার ভাঁজ থাকে। এই অবস্থায় শরীরে নিঃশব্দে প্রবেশ করছে এক ভয়ানক ব্যাধি।
কথায় বলে মাছে ভাতে বাঙালি। ভাতের সঙ্গে এক নিবিড় সম্পর্ক বাংলার প্রায় সকলেরই। আবার অনেকে মিষ্টির লোভও সামলাতে পারেন না। ব্যস্ত জীবনে অনেকে ন্যূনতম শরীরচর্চা করার সময়টুকুও পান না। এমনও অনেক মানুষ আছেন যাঁদের কপালে সর্বক্ষণ চিন্তার ভাঁজ থাকে। এই অবস্থায় শরীরে নিঃশব্দে প্রবেশ করছে এক ভয়ানক ব্যাধি। চুপিসারে জায়গা করে নিচ্ছে আমার আপনার দেহে।
ভাত, মিষ্টি, চিন্তার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে পড়ে একটাই নাম। তা হল ‘ডায়াবেটিস’। আমরা কথা বলেছিলাম বিশিষ্ট ডায়াবেটোলজিস্ট অভিষেক মিত্রের সঙ্গে। বেশ কিছু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা ও করণীয় বিষয় আমাদের জানালেন তিনি।
ডায়াবেটিস কী?
‘মধুমেহ’ বা ‘ডায়াবেটিস’ যাই বলি না কেন এটি মূলত হরমোন জনিত ব্যাধি। আমদের শরীরের অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত হয় ইনসুলিন হরমোন। এই ইনসুলিনের ঘাটতিই হল ডায়াবেটিসের মূল কারণ। অনেক সময় অগ্ন্যাশয় যথেষ্ট পরিমাণ ইনসুলিন তৈরি করলেও শরীর যদি ইনসুলিন ব্যবহারে ব্যর্থ হয় তাহলেও হতে পারে ডায়াবেটিস। অর্থাৎ রক্তে শর্করার অসামঞ্জস্য দেখা দিলেই হয় ডায়াবেটিস।
ডায়াবেটিস মূলত ২ ধরনের হয়। টাইপ ১ ও টাইপ ২। যাঁদের দেহে ইনসুলিন কম তৈরি হয় তাঁদেরকে টাইপ ১-এর মধ্যে ধরা হয়। আবার যাঁদের শরীরে ইনসুলিন উৎপন্ন হয় ঠিকঠাক, কিন্তু তা ব্যবহার করা যায়না, তাঁদেরকে টাইপ ২-এর মধ্যে ফেলা হয়। অনেকসময় জিনগত বা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা থেকেও ডায়াবেটিস হবার সম্ভাবনা থেকে যায়।
ডায়াবেটিসের প্রাথমিক উপসর্গ
ঘন ঘন জল তেষ্টা পাওয়া, খিদে বেশি পাওয়া ও বারবার প্রস্রাবের বেগ আসা – মূলত এই ৩টি বিষয় লক্ষ্য করা যায়। যাঁদের রক্তে শর্করার পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে অনেকটা বেড়ে যায় তাঁদের মধ্যে এই লক্ষণগুলি প্রবলভাবে দেখা যায়। সঙ্গে হাত পা অসাড় হয়ে যাওয়া, দৃষ্টি শক্তি হ্রাস পাওয়া, হজমের গোলমাল ও কিডনির সমস্যাও জুড়ে যায়।
কখন বুঝবেন আপনি ডায়াবেটিক
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের নিয়ম অনুযায়ী, খেয়ে ও না খেয়ে ব্লাড সুগার টেস্ট হয়। যাকে আমরা ফাস্টিং ও পিপি বলে থাকি। ফাস্টিংয়ে ব্লাড সুগারের মাত্রা যদি ১২৬-এর বেশি থাকে তবে তিনি ডায়াবেটিক। আবার পিপি-তে যাঁদের ব্লাড সুগারের মাত্রা ২০০-র বেশি, তাঁরাও ডায়াবেটিসের আওতায় পড়েন।
হলে কী করবেন
মাটির তলার সবজি একদমই খাওয়া যাবে না। বিশেষত আলু। ফলের মধ্যে আম, আঙ্গুর, আখের রস, তরমুজ একদমই নয়। চা ও দুধ পান করতে হবে চিনি ছাড়া। বাইরের ফাস্ট ফুড যতটা পারবেন এড়িয়ে চলাই ভাল। সারাদিনে ভাত ১০০ গ্রামের মত খেলেই যথেষ্ট। তবে ভাতের পরিবর্তে রুটি খেলে আরও ভাল।
প্রাতরাশে ওটস খেতে পারেন। সব থেকে ভাল হয়, রাতে ছোট চা চামচের মত এক চামচ মেথি জলে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে ওই মেথির জল খাওয়া। এতে অনেকটা উপকার পাওয়া যায়। লাঞ্চে করলা বা উচ্ছে জাতীয় খাবার রাখলে ভাল হয়। সবথেকে বড় ওষুধ হল মর্নিং ওয়াক। সকালে যদি আধঘণ্টার মত হাঁটা যায় তবে ব্লাড সুগার অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকে। প্রয়োজনে যোগাও করতে পারেন।
যাদের ডায়াবেটিস নেই তাঁদের জন্য সতর্ক বার্তা
সাধারণত ৩৫-এর পর থেকেই মধুমেহ শরীরে সকলের অগোচরে প্রবেশ করতে পারে। তবে তার আগে থেকেই যদি আমরা একটু সচেতন হই তাহলে এই আশঙ্কার হাত থেকে বাঁচা যেতে পারে। তারজন্য আমদের জীবনযাত্রার কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে। প্রতিদিন শরীরচর্চা করতেই হবে। হাঁটা বা যোগা বা সাঁতার বা সাধারণ ফ্রি হ্যান্ড আবশ্যিক। বাইরের তেলেভাজা কম খেতে হবে। ভাতের পর্বকে একটু কম গুরুত্ব দিতে হবে। ভাত ও মিষ্টি জাতীয় খাবার কম কম করে খেলে মধুমেহর আক্রমণ সম্ভাবনা থেকে কিছুটা দূরে থাকা যায়।
কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ যত কম পড়বে তত মাথা ও শরীর ঠিকঠাক কাজ করবে। কারণ, দুশ্চিন্তা ডায়াবেটিসের অন্যতম কারণ। প্রত্যেকদিন শরীর ও মস্তিষ্ক কাজ করার পর পর্যাপ্ত ও নিশ্চিন্ত অবসর কাটালে ডায়াবেটিস সহজে শরীরে বাসা বাঁধার সুযোগ পাবে না বলেই পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক অভিষেক মিত্র।