এবার মাদুর্গার কিসে আগমন, কিসে গমন, কী তার ফল
আদিঅনন্তকাল ধরে ৪টি যানেই গমনাগমন করেন। প্রতিটি যানবাহনে গমনাগমনের আবার প্রভাবও পড়ে জগত সংসারে, মানব জীবনে।
দুর্গাপুজোর ঢাকে কাঠি পড়ে গেছে। মা আসছেন সেই আনন্দে উদ্বেল বঙ্গবাসী। নতুন পোশাক, সাজগোজ, ঘর সাজানো সবই অনেকের সারা হয়ে গেছে। বঙ্গজীবনের শ্রেষ্ঠ উৎসব শুরু থেকে শেষ হয় দেবী দুর্গার বাপের বাড়ি আগমন থেকে স্বামীগৃহে গমন পর্যন্ত। তো কৈলাস থেকে ৪ সন্তানকে নিয়ে মা তো আর হেঁটে আসবেন না পিতৃগৃহে। তাই যানবাহন প্রয়োজন। দেবী কিন্তু আদিঅনন্তকাল ধরে ৪টি যানেই গমনাগমন করেন। প্রতিটি যানবাহনে গমনাগমনের আবার প্রভাবও পড়ে জগত সংসারে, মানব জীবনে। ফলে প্রতি বছরই বাঙালির কমন প্রশ্ন হল মা কিসে আসছেন আর কিসে ফিরছেন?
এবার মা আসছেন ১৭ আশ্বিন ১৪২৬, ৫ অক্টোবর ২০১৯ শনিবার সপ্তমীতে। দেবীর এবার ঘোটকে আগমন। অর্থাৎ ঘোটকে আসছেন মা। মণ্ডপে দেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপন হয়ে থাকে সপ্তমী তিথিতে। ওই তিথিতেই দেবীকে আবাহন অর্থাৎ সাদরে আমন্ত্রণ এবং অনুরোধ করা হয় পুজো গ্রহণের। সপ্তমীর দিনটিই দেবী দুর্গার মর্তে আগমনের দিন, ষষ্ঠী তিথিতে নয়। এবার মায়ের ঘোটকে আগমন। আর কিসে মা আসছেন বা ফিরছেন তার ওপর নির্ভর করে জগত সংসারের ভালমন্দ। ঘোটকে আগমনের ফল হল ‘ছত্রভঙ্গুস্ত্তরঙ্গমে’। ভাবার্থ দাঁড়ায় দেশে দাঙ্গাহাঙ্গামা, সার্বিক বিশৃঙ্খলা, যুদ্ধবিগ্রহ, হানাহানি। দেবী দুর্গা যে বাহনে মর্তলোকে আসেন, তাঁর আগমন কিংবা গমনজনিত কারণে মর্ত্যবাসীরা কখনও কিছু সুফল বা কষ্টদায়ক কিছু ফল লাভ করে থাকেন। সেই ফল দেশের রাজা-প্রজা থেকে শুরু করে সকলেই ভোগ করেন।
২০ আশ্বিন ১৪২৬, ৮ অক্টোবর ২০১৯ মঙ্গলবার দেবীর বিসর্জন, বিজয়া দশমী। সপরিবারে লটবহর, বাপের বাড়ির তরফে সিনথেটিক আর পাড়ার পুজো মণ্ডপ থেকে পাওয়া দশহাতি লালপেড়ে বস্তা নিয়ে শ্বশুরবাড়ি কৈলাসে গমনের বারটিই নির্দেশ করে দেবীর যান কোনটা হবে। এবার তা পড়েছে মঙ্গলবার। আর শনি বা মঙ্গলবারে দেবীর আসা বা যাওয়া পড়া মানে দেবীর ঘোটকে আগমন বা গমন। এবার আগমন যেমন ঘোটকে। গমনও ঘোটকেই। কারণ বিজয়া পড়েছে মঙ্গলবার।
বাপের বাড়ি থেকে উমা আবার ফিরে যাবেন স্বামীর ঘরে। কন্যাবিরহে কাতর গিরিরাজের অন্তরবেদনা এইভাবে প্রকাশ করেছেন কবিয়ালদের উত্তরসূরি বলহরি রায় তাঁর ‘লহর মানসী’ গানে –
‘হ’ল নবমী যামিনী গত দশমীর উদয়। / গিরিবর হ’য়ে সকাতর অভয়ারে কয়।। / আমার মা তুমি গো ত্রিপুরেশ্বরী। / তব পিতা আমি গিরি। / ওমা হেরে তোমার চাঁদ বদন। / দিতে হবে বিসর্জন।।… / মেনকারাণী শুনে শিবের সিঙ্গার ধ্বনি / হলো অচৈতন্য নিমিষ-শূন্য কি করে প্রাণ ধরে রবে।’