নবমী নিশি কেটে পরের দিনের সূর্য উঁকি দেওয়া মানেই পুজো শেষের ঘণ্টা। মায়ের বিদায় নেওয়ার পালা। ফিরবেন কৈলাসে। আবার ১ বছরের অপেক্ষা। তার আগে বিজয়া দশমীর সকাল থেকেই শুরু হয় দশমী পুজো। চলে সিঁদুর খেলা। দশমীর সকালের অন্যতম আকর্ষণই বোধহয় এই রাঙা প্রথা। মাকে পান, মিষ্টিতে বরণের সঙ্গে সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন বাংলার নারী। মুখে হাসি নিয়েও মনের কোণে কোথাও একটা ব্যথা কনকন করতেই থাকে। মায়ের মুখের দিকে চেয়ে অনেকেই মনে মনে বলে ওঠেন আবার এসো মা।
নবমীতে অনেক জায়গায় বৃষ্টি হলেও কলকাতা রেহাই পেয়েছিল। ফলে নবমীর বেলা গড়াতেই যে ভিড় শহরের রাস্তার দখল নিয়েছিল, তা যত সন্ধে গড়িয়ে রাত হয়েছে ততই বেড়েছে। রাত পোহালেই বিজয়া। সেকথা নবমী নিশিতে একটু বেশি করেই মনে পড়তে থাকে। এত আনন্দ, এত আলো, এত মানুষ। এসব নবমী নিশি পোহালেই যে শেষ তা বিলক্ষণ জানে বাঙালি। হতে পারে আজকাল তার পরেও ঠাকুর দেখা চলে। কিন্তু সেই উৎসাহটা থাকে না। যা বিজয়ার আগে পর্যন্ত বজায় থাকে।
সারা বছরের যাবতীয় দুঃখ, কষ্ট, ক্লান্তি ভুলে এই কটাদিন বাঙালি মেতে ওঠে দুর্গাপুজোর আনন্দে। কত ঠাকুর। কত প্যান্ডেল। পুজোর নিয়ম। উপোস, ভোগ, পুষ্পাঞ্জলি, আরতি। সেইসঙ্গে চুটিয়ে আড্ডা আর পেট পুজো। কোনও সময়ের ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। আলো ঢালা পথে আনন্দের স্রোত বুঝতে দেয়না সময় কত হল। মুছে যায় মলিনতা। আট থেকে আশি সকলের জন্যই দুর্গাপুজো একটা অপেক্ষা। আর এসে পড়লে সবটুকু নিংড়ে আনন্দ উপভোগ। বাঙালির সেই প্রাণের পুজোর এবছরের মত ইতি হল বিজয়া দিয়ে।
কলকাতার অনেক পারিবারিক পুজোয় দশমীর দিন মাতৃপ্রতিমার বিসর্জন সনাতনি রীতি। তাই সেখানেও সকাল থেকেই চলে তোড়জোড়। অনেক বারোয়ারিতেও এই রীতি প্রচলিত। ফলে সেখানেও প্রস্তুতির ছবি ধরা পড়েছে। এদিন সকাল থেকেই কলকাতা পুরসভার তরফে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করা হয় বিভিন্ন ঘাটে প্রতিমা নিরঞ্জনে যাতে কোনও সমস্যা না হয়। রয়েছে পুলিশি বন্দোবস্তও।