বিজয়ার সকালটার মত বিষাদের মুহুর্ত বাঙালির জীবনে কমই আসে। উৎসবে ইতি। মায়ের কৈলাসে ফেরার পালা। সিঁদুর খেলার মধ্যে দিয়ে মাকে বিদায় জানানো। পান, মিষ্টি দিয়ে মাকে কানে কানে বলা আবার এসো মা। সেই বিজয়ার সকাল যদি হয় সিঁদুর খেলার। তবে দুপুরটা বরণের। আর বরণ শেষ মানেই মায়ের ফিরে যাওয়া। মঙ্গলবার বিকেল থেকেই বিভিন্ন গঙ্গার ঘাটে একের পর এক ঠাকুর আসতে থাকে। মূলত বাড়ির ঠাকুর। শুরু হয় প্রতিমা নিরঞ্জন। বাড়ির ঠাকুর সাধারণত একচালার হয়। গঙ্গার জলে সেই একচালার ঠাকুর ক্রমশ হারিয়ে যেতে থাকে জলে। চোখের কোণেও কি একটু জল ভরে ওঠে! নিশ্চয়ই অনেকের ওঠে। তবে তা সামলে সকলে বলে ওঠেন বলো দূগ্গা মাই কি জয়! আসছে বছর, আবার হবে!
মঙ্গলবার দুপুর থেকে বিকেলে যদি বাড়ির প্রতিমা নিরঞ্জন হয়ে থাকে। তবে সন্ধে নামতেই শুরু হয় বারোয়ারি প্রতিমা নিরঞ্জন। বাবুঘাট, আহিরীটোলা ঘাটের মত বিভিন্ন ঘাটে ছিল এজন্য পর্যাপ্ত পুলিশি বন্দোবস্ত। ছিল পুরসভার তরফে গঙ্গা দূষণ রোধে বিশেষ ব্যবস্থা। এদিন সন্ধের পর একের পর এক বারোয়ারি সারি দিয়ে গঙ্গার দিকে এগিয়েছে। কেউ স্রেফ ঢাকের তালে। কেই আবার তাসা, ব্যান্ড নিয়ে। তবে নিরঞ্জনের উৎসাহটা ছিল এক। সেই আদি অনন্ত চেনা ছবি এদিনও ধরা পড়েছে সর্বত্র।
আগামী শুক্রবার রেড রোডে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে শুরু হওয়া কার্নিভালে যোগ দেবে উত্তর থেকে দক্ষিণের একের পর এক নামকরা বারোয়ারি। ওইদিন তাদের নিরঞ্জন। তবে অনেক প্রতিমা তার আগেই নিরঞ্জন হয়ে যাবে। অনেক বারোয়ারির নিয়মও আছে বিজয়া দশমীর দিনই নিরঞ্জন হতে হবে। ফলে তারা এদিনই ভাসান দিয়েছে। ভাসান ফেরতরা হাতে নিয়ে ফিরেছেন ঘটের জল আর আম্রপল্লব। পাড়ার সকলকে ছড়িয়ে দিয়েছেন শান্তির জল। তারপর এক সময় সকলে বাড়ি ফিরেছেন। শুধু ফাঁকা প্রায় অন্ধকার মণ্ডপে জ্বলেছে একটি প্রদীপ। একাকী।