আইলিগের ২টি ডার্বিতেই ইস্টবেঙ্গলকে হারাল মোহনবাগান। এদিন ছিল ফিরতি ডার্বি। এর মাঝে মোহনবাগানের কোচ বদলেছে। সনি নর্ডির মত নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়কে হারিয়েছে তারা। অন্যদিকে আইলিগে মোহনবাগানের কাছে ডার্বি হারলেও, টুর্নামেন্টে ঝলমল করছিল ইস্টবেঙ্গলের পারফরমেন্স। ফলে দ্বিতীয় ডার্বিতে রবিবার যুবভারতীতে পাল্লা ভারী বলে মনে হয়েছিল ইস্টবেঙ্গলেরই। কিন্তু মাঠে নামার পর সব হিসেবনিকেশ গেল পাল্টে। খেলা শুরুর ২ মিনিটের মাথায় আক্রমের হেডে সাজানো বল গোলে পাঠাতে এতটুকু ভুল করেননি দিপান্ডা ডিকা। বল ক্রসবার ছুঁয়ে ইস্টবেঙ্গলের গোলে জড়াতেই উল্লাসে ফেটে পরে গ্যালারি। ডার্বির মত স্নায়ুযুদ্ধের ম্যাচে শুরুতেই ১ গোলে এগিয়ে যাওয়া যে একটা দলের জন্য কতটা আত্মবিশ্বাসবর্ধক তা মোহন সমর্থকেরা জানেন। অন্যদিকে শুরুতেই গোল খেয়ে লালহলুদ দর্শকাসন তখন একেবারেই স্তম্ভিত। কিন্তু শুধুই কি গোল? খেলা যত এগিয়েছে ততই মোহনবাগানের দিক থেকে বিষাক্ত আক্রমণ ধেয়ে এসেছে। পাল্টা চেষ্টাও যে হয়নি তা নয়। কিন্তু মোহন ডিফেন্স এতটাই সাজানো ছিল যে সেখানে দাঁত ফোটানো অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায় ডুডু, কাতসুমিদের জন্য। সবুজ মেরুনের উল্লাসের পারদ আরও চড়ল খেলার ৩৫ মিনিটের মাথায়। উড়ে আসা কর্নার কিকে শরীরকে শূন্যে ভাসিয়ে ডিকার উল্কার গতিতে শট ততোধিক গতিতে জড়িয়ে যায় লালহলুদ গোলে। মোহনবাগান এগিয়ে যায় ২-০ ব্যবধানে।
প্রথমার্ধে আর কিছু করতে না পারলেও দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে ইস্টবেঙ্গল খোঁচা খাওয়া বাঘের মত খেলা শুরু করে। প্রথম ডার্বি হারার পর এই ডার্বিতেও হারের লজ্জা আর হজম করতে রাজি নয় ইস্টবেঙ্গল। এমন একটা মনোভাব নিয়েই আক্রমণ শানাতে শুরু করে তারা। মোহনবাগানকে দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম ৫ মিনিটে কার্যত ডিফেন্স ছাড়া মাঠে তেমন পাওয়া যায়নি। বরং ইস্টবেঙ্গল ভাল সম্ভাবনা তৈরি করেছে। কিন্তু ৬০ মিনিটের পর থেকে খেলার গতিকে মন্থর করে দিতে শুরু করে মোহনবাগান। শুরু হয় ছোট ছোট পাশে পেশাদার ফুটবলের ঝলক। খুব উঠে না খেললেও একের পর এক সম্ভাবনাও তৈরি করতে থাকেন ডিকা, আক্রম, নিখিল কদমরা। এমন কিছু গোল তারা নষ্ট করে যা হলে এই ম্যাচে মোহনবাগান ৫ গোলের ব্যবধানেও অনায়াস জয় পেতে পারত। অন্যদিকে ইস্টবেঙ্গলকে ক্রমশ দিশেহারা ফুটবল খেলতে দেখা যায়। খেলা ৭৫ মিনিট পার করতেই দেখা যায় ইস্টবেঙ্গল গ্যালারি ফাঁকা হতে শুরু করেছে। হতাশ সমর্থকেরা মাঠ ছেড়েছেন থমথমে মুখে। মোহনবাগানের সামনে পড়লেই দলের এমন খারাপ পারফরমেন্স তাঁদের হতাশ করেছে। অন্যদিকে ৮৮ মিনিটের মাথায় কিন্তু ইস্টবেঙ্গল একটি নিশ্চিত গোল হাতছাড়া করে। ইনজুরি টাইমে ৯৪ মিনিটের মাথায় মোহনবাগানের নিখিল কদমের একটি শট ইস্টবেঙ্গলের গোলপোস্টে লেগে ফেরত আসে। এসব সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট হতে দেখা গেছে দ্বিতীয়ার্ধে। তবে মোহনবাগান দলের দায়িত্ব নেওয়া শঙ্করলাল চক্রবর্তী এদিন দেখিয়ে দিলেন তিনিও কম যান না। কারণ এদিন পুরো খেলায় ইস্টবেঙ্গলকে যেমন অনেকটা সময়েই ছন্নছাড়া ফুটবল খেলতে দেখা গেছে, উল্টোদিকে ততটাই গোছানো ফুটবল খেলেছে মোহনবাগান। এদিনের জয়ে ফের একবার লালহলুদকে হারাবার স্বাদ তারিয়ে উপভোগ করলেন মোহনবাগান সমর্থকেরা।