
গত বছরের ২২ ডিসেম্বর কলেজ স্ট্রিটের ত্রিপুরা হিতসাধনী সভাঘর আলোকিত হয়েছিল এক ঝাঁক তরুণ-তরুণীর উপস্থিতিতে। উপলক্ষ ছিল এম এস প্রোডাকশনের ‘পাগলাগারদ’ ছবির প্রিমিয়ার। প্রিমিয়ার শোয়ের অন্যতম আকর্ষণ ছিলেন ‘মীরাক্কেল’ খ্যাত সৌরভ পালৌধি। ঠিক ১৩১ বছর আগে নির্ভেজাল কৌতুকনাট্য ‘আশ্রমপীড়া’-কে ‘ভারতী ও বালক’ পত্রিকার হাত ধরে সামনে নিয়ে আসেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
সময় বদলেছে, বদলেছে জীবনযাপনের রং। পাল্টেছে মানুষের মনের গতিপ্রকৃতিও। কারণ এক দুরন্ত সময়ের যাত্রী আমরা। চলমান সেই স্রোতের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে কেউ বা মুখ থুবড়ে পড়ে। আবার কেউ হারিয়ে ফেলে মানসিক স্থিতি। কেউ পেটের ভাত আর মাথার ওপর ছাদটুকু বাঁচাতে চালিয়ে যেতে থাকে লড়াই। অধরাকে পাওয়ার মিথ্যা আশার পিছনে মাথা কুটে মরে আবার কেউ। অবস্থা এমন সঙ্কটজনক হয়ে ওঠে যে ঘাড়ের কাছে আগুন নিঃশ্বাস ফেললেও চৈতন্য হয় না কারও। তখনও কেউ আপন খেয়ালে আউড়ে যায় প্রেমের কবিতা। আবার কেউ ব্যস্ত কথার ব্যাকরণিক ভুল শোধরাতে। আবার কেউ সম্পাদকের প্রত্যাখ্যান করা নিজের সৃষ্টি জোর করে অন্যকে শোনাতে ভয়ানক ব্যস্ত।
তবে সেই অসংলগ্নতার মুহুর্তে নারীর আবির্ভাব বসন্তের দোলা দিয়ে যায় ৪ হতাশাগ্রস্ত মানুষের জীবনে। নারীকে অনুসরণ করে মেসবাড়ির ‘গারদ’-এর আগুনের গ্রাস থেকে বাইরের জগতের আলোকবৃত্তে এসে পৌছয় ৪ ‘পাগল’।
ইংরাজি ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর আবির্ভূত ‘পাগলাগারদ’-এ পুরুষ চরিত্রের সংখ্যা ৫। কোনও নারী চরিত্রের উপস্থিতি সেখানে নেই। আশ্রমের মূল পুরুষ চরিত্রের একজন ‘নরোত্তম’ শঙ্খদীপ ব্যানার্জী পরিচালিত ‘শর্ট ফিল্ম’-টিতে হয়ে গেছে রতন। আর হৃদয় রহস্যের সন্ধানী নবকান্ত হয়ে গেছে প্রতাপ। লেখক গণেশ ছবিটিতে নামহীন। আর ব্যাকরণিক জ্ঞানের ফুলঝুরি আদ্যানাথ হয়ে গেছে অশোকদা। রতন বাদ দিয়ে বাকিদের আচরণে স্বাভাবিকত্বের তিলমাত্র উধাও। আর তার অন্যতম কারণ, সমসাময়িক অস্থির জীবন। যা মানুষের মানসিক ভারসাম্যকে স্থির থাকতে দেয়না। এমনটাই দাবি ‘পাগলাগারদ’-এর কার্যবাহী প্রযোজকের।
মূল নাটকের শেষ দৃশ্যে চাকর চরিত্রের হঠাৎ আবির্ভাব শর্ট ফিল্মটিতে নেই। আগুনের প্রসঙ্গকে ভিন্ন মাত্রা দিতে প্রেমের খেলা বুঝতে সচেষ্ট প্রতাপের সামনে আনা হয়েছে মহিলা চরিত্রকে। গোটা ছবিতে এভাবেই ছোট ছোট ‘তড়কা’ আনার চেষ্টা করেছেন পরিচালক ও তাঁর টিম। স্বল্প পরিসরে সঙ্গীতের আলাদা ভূমিকার কোনও জায়গাই নেই। অভিনয়ে নতুন মুখেরা নিজেদের মতো লড়াই করার চেষ্টা করেছেন। বুধবার ইউটিউবে প্রকাশিত ‘পাগলাগারদ’ দর্শকদের মুখে হাসি আনতে আর মনে স্থান করে নিতে পারে কিনা সেটাই দেখার।