রাস্তায় রাস্তায় সবজি বেচে বেড়াচ্ছেন বালিকা বধূ-র পরিচালক
একেই হয়তো বলে ভাগ্যের ফের! যাঁর এ বছর ২টি সিনেমা পরিচালনা করার কথা সেই বালিকা বধূ-র পরিচালক এখন রাস্তায় রাস্তায় সবজি বিক্রি করছেন।
আজমগড় (উত্তরপ্রদেশ) : একটা চার চাকার ঠেলা। তার ওপরই সাজানো পটল, লাউ, টমেটো, বিনস সহ অন্যান্য আনাজ। সেই ঠেলা ঠেলে এ রাস্তা থেকে ও রাস্তায় ঘুরছেন এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি।
গলায় একটা গামছা জড়ানো। পরনে সাদা ফুল শার্ট। হাতাটা সামান্য গোটানো। মুখে অল্প দাড়ি, গোঁফ। মাথার চুল থেকে দাড়ি, গোঁফ, সবেতেই পাক ধরেছে কিছুটা।
সকাল থেকে টানা রাস্তায় ঘুরে সবজি বিক্রি করেন তিনি। আর পাঁচজন সবজি বিক্রেতার সঙ্গে তাঁর দৃশ্যত কোনও ফারাক নেই। কিন্তু গুণের প্রশ্নে বোধহয় তাঁর সবজি বিক্রি কাজ হতে পারেনা। কিন্তু ভাগ্যের ফেরে মানুষ কত কিছুই যে করতে বাধ্য হয় তার এক জীবন্ত উদাহরণ এই ব্যক্তি।
উত্তরপ্রদেশের আজমগড়ের রাস্তায় রাস্তায় যিনি এই সবজির ঠেলা নিয়ে গত কয়েকমাস ধরে ঘুরছেন। বিক্রি করে উপার্জন ঘরে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি মুম্বইয়ের তথাকথিত সিনেমা বা সিরিয়ালের জগতের যথেষ্ট পরিচিত মুখ।
যাঁর পরিচালনায় হিট সিরিয়াল বালিকা বধূ, সেই রামভিক্ষা গৌড় এখন আজমগড়ের সবজি বিক্রেতা! করোনা যে কত মানুষের জীবনটাই বদলে দিয়েছে তার এক উদাহরণ হয়ে ঘুরছেন তিনি।
কিন্তু কেন এমন পরিস্থিতি? রামভিক্ষা জানিয়েছেন, ২০০২ সালে মুম্বই গিয়েছিলেন এক বন্ধুর হাত ধরে। সেখানে প্রথমে লাইটম্যানের কাজ দিয়ে শুরু করেন জীবন। তারপর ক্রমে প্রোডাকশন ম্যানেজার। সেখান থেকে সহকারী পরিচালক। তারপর সিরিয়ালের এপিসোড পরিচালনা। অবশেষে বালিকা বধূ সিরিয়ালের পরিচালকদের মধ্যে অন্যতম।
জীবনে সিরিয়ালে ছাড়াও সহকারী পরিচালক হিসাবে কাজ করেছেন বিভিন্ন সিনেমায়। যে সব সিনেমায় অভিনয় করেছেন রাজপাল যাদব, সুনীল শেট্টি, রণদীপ হুডা, মিলিন্দ গুণাজি-র মত অভিনেতারা। অবশেষে তিনি নিজে প্রযোজক পান ২টি সিনেমা করার। একটি ভোজপুরি সিনেমা। অন্যটি হিন্দি সিনেমা।
প্রথমে ভোজপুরি সিনেমাটি শেষ করার কথা। তারপর হিন্দি সিনেমা শুরু হবে। ভোজপুরি সিনেমার পটভূমি খতিয়ে দেখতেই ফিরেছিলেন নিজের শহর আজমগড়ে। আর ঠিক তারপরই শুরু হয়ে যায় লকডাউন।
প্রযোজক জানিয়ে দেন এখন আর সিনেমায় টাকা ঢালতে পারছেন না। বছর খানেক পর ফের সিনেমা বানাবেন তিনি।
এই অবস্থায় লকডাউন কালে মুম্বইতেও ফেরার রাস্তা ছিলনা। রোজগারেরও দরকার ছিল। রামভিক্ষা জানান সেই অবস্থায় তিনি তাঁর পিতার ব্যবসাই শুরু করেন।
ছোট থেকে তিনি এই ঠেলা নিয়ে সবজি বিক্রির ব্যবসা জানেন। তাই সেই পারিবারিক ব্যবসাই শুরু করেন। রাস্তায় রাস্তায় সবজি বিক্রিই এখন তাঁর কাজ।
সব ঠিক হলে হয়তো তিনি ফের নিজের কাজে ফিরবেন। কিন্তু তার আগে সবজি বিক্রির কাজে তাঁর এতটুকু আক্ষেপ নেই। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা