সদ্যোজাত নাতনির দুধ কিনতে রাস্তায় দাদুর ভায়োলিন, মুগ্ধ রাজ
লকডাউন তাঁর জীবনের শেষ সঞ্চয়টুকুও নিংড়ে বার করে নিয়েছে। থাকা খাওয়ার অর্থ নেই। তবু সদ্যোজাত নাতনির দুধ কিনতে ভায়োলিন বাজাচ্ছেন দাদু।
গুজরাটে ভূমিকম্পের সময় তিনি চলে আসেন মালদায়। আদপে গুজরাটের বাসিন্দা ভগবান মালি এরপর পৌঁছে যান উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন শহরে। সেখানে নানা হোটেলে ভায়োলিন বাজিয়ে রোজগার করতে থাকেন তিনি।
সংসার চলে যাচ্ছিল একরকম। এরমধ্যেই মেয়ের বিয়ে হয়। মেয়ে চলে আসেন কলকাতা। করোনা এরমধ্যই থাবা বসায়। শুরু হয় লকডাউন। তখন আবার মেয়ে সন্তানসম্ভবা।
তাই ভগবান ও তাঁর স্ত্রী চলে আসেন কলকাতায়। মেয়ে জামাই যে ঘরে থাকেন তা এতটাই ছোট যে তাঁদের ২ জনের সেখানে থাকার জায়গা নেই। অগত্যা করোনার সময় ভগবান মালি ও তাঁর স্ত্রী এসে পড়েন রাস্তায়।
উত্তর কলকাতার বড়তলা থানা এলাকার ফুটের ধারে তাঁদের দিন কাটছিল। অগত্যা রাস্তায় ভায়োলিন বাজাতে শুরু করেন ভগবান। কেবল নিজের খাওয়ার অর্থ জোগাড় করার জন্যই নয়, সন্তানসম্ভবা মেয়ের প্রয়োজনীয় খাবার জোগাড়ের জন্যও।
এই সময় তাঁর দিকে নজর পড়ে বড়তলা থানার পুলিশের। তারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। ২ জনকে থাকার একটা জায়গা করে দেয়।
মালি এরপর শুরু করেন বিডন স্ট্রিট ও গিরিশ পার্কের মোড়ে ভায়োলিনে সুর তোলা। রাস্তায় তাঁর ভায়োলিন শুনে মানুষ যেটুকু অর্থ দেন সেটা দিয়েই তিনি শুরু করেন সন্তান প্রসব করা মেয়ে ও সদ্যোজাত নাতনির জন্য দুধ ও ফল কেনা।
কিন্তু সেখানেও বিপত্তি। কদিন আগে তাঁর ভায়োলিনটা যায় ভেঙে। রোজগারের শেষ সম্বলটুকুও যায় হারিয়ে। এ সময় ফের পাশে দাঁড়ায় বড়তলা থানা।
তাদের হাত ধরেই মালির খবর যায় কলকাতার পুলিশ কমিশনারের কাছে। কমিশনার তাঁকে একটি ভায়োলিন উপহার দেন। ফের ভগবানের ভায়োলিন সুর তোলে রাস্তায়।
এদিকে এই ভগবান মালির ভায়োলিন সোশ্যাল সাইটে ঝড় তোলে। যা নজরে পড়ে চিত্রপরিচালক তথা বিধায়ক রাজ চক্রবর্তীর। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন ভগবান মালিকে তাঁর পরবর্তী সিনেমায় সুযোগ দেওয়ার।
ভগবান মালি পুলিশকেও জানিয়েছেন তিনি কোনও আর্থিক সাহায্য হাত পেতে নেবেন না। কাজ করে নেবেন। পুলিশ তাঁকে কয়েক জায়গায় তাঁর ভায়োলিন বাজানোর অনুষ্ঠানের সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা করছে।