বিশ্ব ইতিহাসের এক অন্যতম প্রবাদ পুরুষের মৃত্যু হল। নিভে গেল আগুন। শেষ হল সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শের এক উজ্জ্বল ধারক ও বাহকের। চলে গেলেন ফিদেল কাস্ত্রো। ৯০ বছর বয়সে মৃত্যু হল তাঁর। তাঁর ভাই রাউল কাস্ত্রো দাদার মৃত্যুর কথা ঘোষণা করেন। পেশায় আইনজীবী হলেও যুবা বয়সেই ফিদেল কাস্ত্রো জড়িয়ে পড়েন গেরিলা বিদ্রোহের সঙ্গে। কিউবা তখন বিত্তশালী আমেরিকানদের ফুর্তি করার যায়গা। সেই অবস্থা থেকে কিউবাকে মুক্ত করেন ফিদেল। ১৯৫৯ সালে বিদ্রোহের মধ্যে দিয়ে কিউবার শাসন ক্ষমতার দখল নেন তিনি। তখন তাঁর বয়স মাত্র ৩২ বছর। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে পদভার গ্রহণ করেন ফিদেল। মুখে চুরুট আর দাড়ি। পরনে সামরিক পোশাক। এভাবেই ফিদেল কাস্ত্রোকে দেখে অভ্যস্ত ছিল পৃথিবী।
সমাজতান্ত্রিক ভাবধারায় বিশ্বাসী ফিদেলকে জব্দ করতে আমেরিকা কম চেষ্টা করেনি। কিন্তু তাঁর শাসনকালে ১০ জন মার্কিন প্রেসিডেন্ট মিলেও সেকাজ করে উঠতে পারেননি। ১৯৬২ সালে কিউবান মিসাইল ক্রাইসিসের সময় ফিদেল কাস্ত্রো রাশিয়ার খুব কাছে এসে যান। ঠান্ডা যুদ্ধে বিশ্ব তখন সিঁটিয়ে ছিল পারমানবিক যুদ্ধ লাগার আশঙ্কায়। বরং ১৩ দিনের কিউবান মিসাইল ক্রাইসিসের টানটান নাটকের পর কিউবায় ফিদেলের মাটি আরও শক্ত হয়েছিল। বিশ্বে যখন ক্রমশ সমাজতন্ত্রের পতন হচ্ছে তখনও কিউবায় শক্তিশালী সমাজতন্ত্র টিকিয়ে রেখেছিলেন ফিদেল কাস্ত্রো। ২০০৬-এর পর তাঁর শরীর ক্রমশ খারাপ হতে থাকে। ফলে তিনি কিউবার শাসনভার তুলে দেন ভাই রাউল কাস্ত্রোর হাতে। এরপর বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে ৯০ বছর বয়সে চলে গেলেন বিশ্ব ইতিহাসের এক অন্যতম উজ্জ্বল সমাজতান্ত্রিক নেতা। অন্য বহু সমাজতান্ত্রিক দেশ পুঁজিবাদের দিকে ঝুঁকলেও কিউবায় তিনি কখনও সেই ছোঁয়া লাগতে দেননি। নিজের অকুণ্ঠ বিশ্বাস দিয়ে বারবার সমাজতন্ত্রের হয়ে সওয়াল করেছেন। কিউবার স্বতন্ত্রতাকে তুলে ধরেছেন বিশ্বের সামনে।