Sports

স্পেনকে ৫-২-এ গুঁড়িয়ে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বমুকুট ইংল্যান্ডের

অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ ফুটবলের শিরোপা ঘরে তুলল ইংল্যান্ড। যুবভারতীতে এদিন রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে ২-০-তে পিছিয়ে পড়েও ৫-২ গোলে জিতল তারা। স্পেনকে গতি আর শক্তির লড়াইতে হারিয়ে এই প্রথম অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের ট্রফি জিতল ইংল্যান্ড। তবে দিনের শেষে জিতল ফুটবল। যাঁরা এদিন যুবভারতীতে এই খেলা চাক্ষুষ করলেন তাঁদের কাছে এই ঐতিহাসিক স্মৃতি চিরদিন অমলিন হয়ে থাকবে।

জিত হার আছেই। কিন্তু যে উচ্চমানের চিত্তাকর্ষক ফুটবল যুবভারতী এদিন দেখল তা হয়তো জীবৎকালে ভোলা অসম্ভব। স্কিল, বল পাস, গতি, আক্রমণ প্রতি আক্রমণের এমন চাপমুক্ত ফাইনাল কমই দেখতে পাওয়া যায়। ফাইনালে ঘর বাঁচিয়ে লড়ার রাস্তায় হাঁটেন অধিকাংশ কোচ। কিন্তু এদিন দেখা গেল আক্রমণকেই হাতিয়ার করেছেন দুই কোচ। খেলা শুরুর পরই আক্রমণে যায় ইংল্যান্ড। দেখে মনে হচ্ছিল স্পেন যেন কিছু বুঝেই উঠতে পারছে না। ২ মিনিটের মাথায় প্রায় স্পেনের জালে বল জড়িয়ে দিয়েছিল ইংল্যান্ড। অল্পের জন্য রক্ষা। তারপরও ইংল্যান্ডের আক্রমণ থামেনি। খেলার ৬-৭ মিনিট কাটার পর থেকে মাঠের দখলে ভাগ বসানো শুরু করল স্পেন। দ্রুত বল দখলের খেলায় ইংল্যান্ডের সঙ্গে সমান তালে পাল্লা দিতে শুরু করল স্প্যানিশ আর্মাডা। ১০ মিনিটের মাথায় ইংল্যান্ডের গোলমুখে স্পেনের ছোট ছোট পাসের স্ট্র্যাটেজি আচমকাই ভয়ংকর হয়ে ওঠে। বাঁ পায়ের ধার দিয়ে আলতো ছোঁয়ায় স্পেনকে ১-০-তে এগিয়ে দেয় স্পেনের ১০ নম্বর জার্সি‌ধারী সার্গিও গোমেজ। খোঁচা খাওয়া বাঘের মত পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করলেও স্পেনের গোলমুখ খুলে উঠতে পারছিল না ইংল্যান্ড। ২৪ মিনিটের মাথায় জলপানের বিরতির পরে খেলতে নেমে দ্রুত আক্রমণ শুরু করে স্পেন। খেলার ৩১ মিনিটের মাথায় ফের সেই গোমেজের শটে ইংল্যান্ডের জালে দ্বিতীয়বার জড়িয়ে যায় বল।


স্টেডিয়ামে তখন উল্লাসের হুংকার। স্পেনের খেলোয়াড়েরা বুঝে গেছে এদিন যুবভারতীর সিংহভাগটাই তাদের। ফলে গোল করেই গোমেজ ছুটে যায় দর্শকদের দিকে। স্পেন এগিয়ে যায় ২-০ গোলে। এই পর্যন্ত দেখার পর অনেকেরই মনে হয়েছিল দিনটা স্পেনের। বিশেষত খেলার ৪২ মিনিটের মাথায় ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়ের জোড়াল শট স্পেনের সাইড বারে লেগে ফেরত আসার পর অনেকের মনে হয় ভাগ্য এদিন স্পেনের পক্ষে। কিন্তু তাঁরা যে কতটা ভুল ছিলেন তা বোঝা গেল এদিন দ্বিতীয়ার্ধে। তবে যজ্ঞের আগুনে প্রথম ঘৃতাহুতিটা দিয়ে গিয়েছিল ৪৪ মিনিটে ব্রিউস্টারের গোল। দ্বিতীয়ার্ধে ২-১-এ পিছিয়ে থেকেও প্রবল বিক্রমে শুরু করে ইংল্যান্ড। বারবার স্পেনের গোলে হানা দিতে থাকে ব্রিটিশ কিশোররা। সুযোগ যে স্পেন একেবারেই পায়নি তা নয়। বেশ কয়েকটা সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করে তারা। একেবারে গোলের লাইনে পৌঁছেও বল ক্লিয়ার হয়ে গেছে। কিন্তু ইংল্যান্ডের আক্রমণ ছিল বেশি ধারালো ও চিরে ঢোকা যে উইং আক্রমণ থেকে ক্রস বলের ভেল্কি বুঝেই উঠতে পারছিল না স্পেন। এ যেন তুরুপের তাসের মত আস্তিনে লুকিয়ে রেখেছিলেন ব্রিটিশ কোচ। যা বার করলেন একেবারে ফাইনালের দ্বিতীয়ার্ধে এসে।

খেলার ৫৮ মিনিটের মাথায় গিবস হোয়াইটের গোলে খেলায় সমতা ফেরায় ইংল্যান্ড। পাল্টা তেড়েফুঁড়ে আক্রমণ শুরু করে স্পেন। ২ গোলে এগিয়ে থাকার পরও ২ গোল খেয়ে কেমন যেন খোঁচা খাওয়া বাঘের মত ঝাঁপিয়ে পড়ে তারা। কিন্তু খেলা যত গড়িয়েছে ততই বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে গেছে ইংল্যান্ড। খেলার ৬৯ মিনিটে ফোডেনের গোলে ৩-২ তে এগিয়ে যায় ইংল্যান্ড। তখনও সুযোগ ছিল। হাতে প্রায় ২৫ মিনিটের মত। ১টা গোল শোধ দিয়ে সমতা ফেরানো কঠিন নয়। কিন্তু ক্রমশই খেলা থেকে হারিয়ে যেতে থাকে স্পেন। ৭৫ মিনিটে কুলিং ব্রেকের পর ফের ভয়ানক আক্রমণ শুরু করে ইংল্যান্ড। তাতে ফলও হয়। ৮৪ মিনিটের মাথায় এই প্রতিযোগিতায় প্রথম গোলটি করে গুহি। এই গোলই কার্যত খেলার ফলাফল লিখে দেয়। আর তা যে ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়দের কাছেও পরিস্কার ছিল তা তাদের মাঠের উচ্ছ্বাস থেকেই ঠাওর করা যাচ্ছিল। ৮৮ মিনিটের মাথায় আত্মবিশ্বাসে ফুটতে থাকা ইংল্যান্ড ফের গোল করে। এবার ফড। ফডের পা থেকে ম্যাচের পঞ্চম গোলটি হজম করতে হয় স্পেনকে। খেলার আর কিছুই তখন পড়ে ছিল না। অপেক্ষা ছিল ফাইনাল হুইসলের। কিন্তু তার আগেই আচমকা ইংল্যান্ড ও স্পেনের খেলোয়াড়দের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয় মাঠে। দ্রুত অবস্থা সামাল দেন রেফারি। হলুদ কার্ড দেখান ইংল্যান্ডের ব্রিউস্টারকে। আর খেলা শেষের হুইসল বাজতেই মাঠে একই সঙ্গে দুই চিত্র।


একদিকে আত্মহারা আনন্দে কে কি করবেন ঠিক করতে পারছেন না ইংল্যান্ডে খেলোয়াড় থেকে কর্মকর্তারা। আর অন্যদিকে যুবভারতীর সবুজ গালিচায় এধারে ওধারে শুয়ে হা‌উহাউ করে কাঁদছে স্পেনের খেলোয়াড়েরা। এটাই ফুটবল। এটাই বাস্তব। সব কিছুর শেষে ট্রফি হাতে কোনও দল আবেগে ভেসে যায়। আর কোনও দল হারের যন্ত্রণা নিয়ে ফিরে যায়। আর বেঁচে থাকে ফুটবল।

Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button