মায়ের কাছে আসতেন পর্তুগিজ কবিয়াল, তাঁর নামেই নাম হল মন্দিরের
আবির্ভাব ঘটল খ্রিস্টান কবিয়াল এন্টনির। জাতিতে পর্তুগিজ ছিলেন তিনি। প্রায়ই আসতেন শ্মশানের চালাঘরে। প্রাণ উজাড় করে গান গাইতেন।
সারা ভারত জুড়ে চলছে ভক্তি আন্দোলনের জোয়ার। মা কালী তখন স্থাপিত শ্মশানে। তখন তিনি শ্মশান কালীরূপে পরিচিতা। সে সময় গঙ্গা বয়ে চলত আজকের সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের ওপর দিয়ে। গঙ্গার পাশেই গা ছমছমে গভীর অরণ্য। দিনেও যেতে ভয় পেত মানুষ। অরণ্যের মধ্যেই এক মহাশ্মশান। সেই মহাশ্মশানে একটা ছোট্ট চালাঘর। চালাঘরেই শিবলিঙ্গের সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন দেবী কালিকা। শ্মশানকালী হলেও দেবীর নাম সিদ্ধেশ্বরী।
কালের বিবর্তনে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ ছেড়ে গঙ্গা গেল সরে। জব চার্নক এলেন। গোড়াপত্তন হল কোলকাতা নগরীর। নির্জনতা কমতে লাগল। যানবাহন চলল শহরের বুকে চিরে। গড়ে উঠল বসতি। বাড়তে লাগল ফিরিঙ্গিদের বসবাস। আবির্ভাব ঘটল খ্রিস্টান কবিয়াল এন্টনির। জাতিতে পর্তুগিজ ছিলেন তিনি। প্রায়ই আসতেন শ্মশানের চালাঘরে। প্রাণ উজাড় করে গাইতেন-
‘ভজন পুজন জানিনে মা জেতেতে ফিরিঙ্গি
যদি দয়া করে তারো মোরে এ ভবে মাতঙ্গী।’
ধীরে ধীরে একসময় আজকের বৌবাজারের কালী লোকমুখে হয়ে উঠল ফিরিঙ্গি কালী। মন্দিরের সামনে দেওয়ালের ফলকে লেখা আছে-
“ওঁ শ্রীশ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালীমাতা ঠাকুরানী,
স্থাপিত ৯০৫ সাল
ফিরিঙ্গি কালী মন্দির।”
জানা যায়, ১৮২০ থেকে ১৮৮০সাল পর্যন্ত এই মন্দিরের পুজারি ছিলেন নিঃসন্তান শ্রীমন্ত পন্ডিত। কালীমন্দির ও দেবীমূর্তি সর্বপ্রথম কে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, কেউই তা জানেন না। বিগ্রহটির উচ্চতা প্রায় সাড়ে পাঁচ ফুট। বিগ্রহ সবসনা। ত্রিনয়নী সুদর্শনা। মন্দির সংলগ্ন শিবের মন্দিরটি আটচালা। অনাড়ম্বর মন্দিরটি আজও দাঁড়িয়ে আছে ২৪৪, বিপিন বিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিট কোলকাতা – ৭০০০১২ ঠিকানায়।
‘কলকাতার মন্দির মসজিদ’ গ্রন্থে গবেষক তারাপদ সাঁতরা এই মন্দির প্রসঙ্গে লিখেছেন, “অনুরূপ বউবাজার স্ট্রিটের ফিরিঙ্গি কালীর মন্দির অংশটি যে আসলে একটি সাবেক গম্বুজ যুক্ত ছাদ দ্বারা নির্মিত আটচালা শিবমন্দিরের সঙ্গে অর্বাচীন একটি দালান সংযোগের ফসল, ভালভাবে নিরীক্ষণ না করলে সে কথাও আর বোঝা যায় না।”
সগৌরবে এখনও পূজিত হয়ে চলেছেন ফিরিঙ্গি কালীবাড়ির দেবী। মাকে দেখতে আজও অগণিত পুণ্যার্থী ভিড় জমান বৌবাজারের ফিরিঙ্গি কালীমন্দিরে।