আত্মসমর্পণ দূরের কথা। পুলিশের হাতে ধরা পড়ার কোনও ইচ্ছাই ছিল না নিকোলাস ক্রুজের। এমন তথ্য সামনে আসার পর প্রাথমিক রিপোর্ট ঝড়ে উড়ে গেল। প্রাথমিক রিপোর্ট ছিল সে আত্মসমর্পণ করেছে। কিন্তু আদপে তা হয়নি। তা পরিস্কার করল ফ্লোরিডা পুলিশ। গত বুধবার দুপুরে ফ্লোরিডায় প্রাক্তন স্কুলে তাণ্ডব চালিয়ে কিশোর প্রথমে গিয়েছিল খাবারের দোকানে। কিছুক্ষণ আগে এই কিশোরের কারণেই রক্তাক্ত হয়েছে মার্জরি স্টোনম্যান ডগলাস হাইস্কুল। সেকথা বিন্দুমাত্র বুঝতে পারেননি ‘সাবওয়ে’-তে উপস্থিত লোকজন। সেখানে ভালো মানুষের মত মুখ করে নিশ্চিন্তে একটা পানীয় শেষ করে সে। তারপর ম্যাকডোনাল্ডসে গিয়ে তৃপ্তি করে পেটপুজো সারে। যেন কিছুই হয়নি। এই ভঙ্গিমায় ম্যাকডোনাল্ডস থেকে বার হয়ে রাস্তা ধরে গন্তব্যের দিকে রওনাও দিয়েছিল ওই কিশোর। কিন্তু ততক্ষণে তার বিবরণসহ কুকীর্তির কথা জেনে গেছে ফ্লোরিডা পুলিশ। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ১ জন পুলিশ অফিসার তাকে চিনতে পেরে পাকড়াও করেন। ১৭ জনের জীবন কেড়ে নেওয়া ঘাতককে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশি জেরার মুখে স্কুলে গুলি চালানোর কথা স্বীকার করে সে। আরও অনেককে খতম করার জন্য সঙ্গে বেশি করে ম্যাগাজিন নেওয়ার কথাও সে খুলে বলে পুলিশকে। তদন্তকারীদের অনুমান, অবস্থা বেগতিক দেখেই পরে স্কুল চত্বর ছেড়ে পালিয়ে যায় ওই কিশোর।
তদন্তে অভিযুক্ত কিশোরের বিরুদ্ধে গোয়েন্দাদের হাতে উঠে এসেছে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্যও। ২০১৭ সালে ইউটিউবে প্রকাশিত একটি ভিডিও হাতে আসে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার। ‘আমি একজন পেশাদার স্কুল শ্যুটার হতে চলেছি’। ভিডিওয় পুরুষ কণ্ঠের মারাত্মক ঘোষণা দুঁদে গোয়েন্দাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দেয়। শুরু হয় নাশকতামূলক কাজের ইঙ্গিত দেওয়া পুরুষটির খোঁজ। গত বুধবারই পাওয়া যায় সেই ব্যক্তির খোঁজ। সেই হুমকি আর কেউ নয়, দিয়েছিল মানসিক বিকারগ্রস্ত কিশোর নিকোলাস ক্রুজই। তার সেই হুমকি সত্যি হয়ে গেল গত বুধবার। নিজের মা বাবাকে হারিয়ে অন্যের ঘরে প্রতিপালিত হচ্ছিল নিকোলাস। স্কুলে ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর সঙ্গে অন্য এক ছাত্রের ঘনিষ্ঠতা বাড়ছিল। সেই রাগে মারপিটও করেছিল সে। তার ওপরে স্কুলে অস্ত্র নিয়ে আসা, বিশৃঙ্খল আচরণসহ একাধিক অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়েছিল তাকে। পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, এইসব কিছুর রাগ মেটাতেই প্রতিশোধে উন্মাদ নিকোলাস রাইফেল নিয়ে হামলা চালায় স্কুলে। তার সেই প্রতিহিংসার মাশুল দিতে হল ১৭ জন নির্দোষকে। রক্তাক্ত আরও বহু স্কুল পড়ুয়া, শিক্ষক, অশিক্ষক কর্মচারিরা।