আজ মকরসংক্রান্তি। আর মকরসংক্রান্তি বললেই প্রথম যেটা মনে আসে সেটা হল সাগরস্নান। প্রতি বছরের মতই এবারও দেশের কোণা কোণা থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ সাগরদ্বীপে হাজির হতে শুরু করেছিলেন গত শুক্রবার থেকেই। রীতি হল সাগরে নব সূর্যোদয়ের মাহেন্দ্রক্ষণেই ডুব দিতে হয় সাগরের জলে। তবে সেই সময়, ক্ষণ, কালের জন্য অপেক্ষা অনেকেই করেননি। বরং মধ্যরাত থেকেই শুরু হয়ে যায় সাগর স্নান। তিথি পড়তেই স্নান শুরু করেন সকলে। শুরু হয় সাগরের জলে পুণ্য ডুব। কনকনে ঠান্ডা। তখনও ভোরের আলো ফুটতে দেরি। কিন্তু সেই হাড়হিম করা ঠান্ডাকে উপেক্ষা করেই সাগরের জলে ডুব দেন অগণিত পুণ্যার্থী। সাগরের জলের শীতল স্পর্শে এক নতুন জীবনের প্রাপ্তিসুখের আনন্দ স্পষ্ট ফুটে ওঠে তাঁদের চোখে মুখে।
সারা দেশেই দিনটার মাহাত্ম্য সুপ্রাচীন। পৌষ মাসের শেষ দিনটায় গঙ্গাসাগরে পুণ্যস্নান করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ হাজির হন সাগরে। সাগরে এত মানুষের সমাগমকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার সুবন্দোবস্ত করেছে রাজ্য সরকার। রাত কাটানোর টেন্ট থেকে পর্যাপ্ত আলো। শান্তি বজায় রাখা থেকে মানুষের পাশে থাকা। গোটা এলাকার পরিচ্ছন্নতা থেকে শৌচাগারের ব্যবস্থা। সবই হয়েছে সুন্দর করে। নজর রাখা হয়েছে যাতায়াতে, নজর রাখা হয়েছে পুণ্যার্থীদের সুরক্ষায়।
ভোররাত থেকেই সাগরে শুরু হয় পুণ্যস্নান। স্নান সেরে কপিল মুনির আশ্রমে প্রণাম করাই রীতি। ফলে সকলেই সাগরের জলে স্নান সেরে ভিড় জমান কপিল মুনির আশ্রমে। কত মানুষ! কত তাঁদের আশা! কত মানত! কত কষ্ট! সাগরে যথার্থই এক মিলনস্থল। সেখানে বহু মানুষ ফিরে পেয়েছেন তাঁর হারানো অতীতকে! কথায় বলে সব তীর্থ বারবার, গঙ্গাসাগর একবার! সাগরের তীরে এই মহামিলনোৎসবে মানুষের চোখে মুখে সেই অনুভূতি ফুটে উঠছে বারবার। একটা ডুব যেন ধুয়ে দিচ্ছে সব দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণা, পাপ! এ এক পরম বিশ্বাস। আর সেই বিশ্বাসে ভর করে দেশের কোণা কোণা থেকে নামমাত্র সম্বল হাতে কত শত মানুষ হাজির হন এখানে। ইচ্ছাপূরণের প্রয়োজনীয় অর্থ অনেকের পকেটেই নেই। তাতে কী! বিশ্বাস আছে, ভরসা আছে, সাগরের জলস্পর্শের চরম অনুভূতি আছে! এই বা কম কী! আর সেই বিশ্বাসেই ভর করে লাখো মানুষ গঙ্গাসাগরে ভিড় জমান এদিন। এটাই ভারত! যেখানে পুণ্যের খোঁজে ধনী, দরিদ্র মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় সাগরের জলে।