গভীর অরণ্য থেকে ভেসে আসে তোপধ্বনি, শুরু হয় মায়ের পুজো
ঠিক অষ্টমী তিথি যখন শুরু হয় তখনই হয় এই তোপের আওয়াজ। ওই ধ্বনি না হওয়া পর্যন্ত জঙ্গলের বাইরে গ্রামগুলোতে কেউ অষ্টমীপুজো শুরু করে না।
যাব গড়জঙ্গলে। গভীর ঘন এই জঙ্গলের নেপথ্যে জড়িয়ে আছে ইতিহাসের ধর্মমঙ্গল কাব্যের দ্বিতীয় কাহিনি। অতীতের কাহিনিটি শুনলে পাঠক জায়গাগুলি দেখার মজা পাবেন।
কাহিনিটি ডঃ শ্রীমন্তকুমার জানা-র লেখা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস থেকে তুলে ধরছি –
“ধর্মঠাকুর মর্ত্যে পূজা প্রচারের জন্য উৎসুক। সে সুযোগ এসে গেল। স্বর্গের নৃত্যসভায় নর্তকী জাম্বতীর তাল ভঙ্গ হওয়ায় শাপ ভ্রষ্ট হয়ে তিনি মর্ত্যে বমতি নগরে বেণু রায়ের কন্যা রূপে জন্মগ্রহণ করলেন। নাম হল রঞ্জাবতী। রঞ্জাবতীর বড়দি গৌড়েশ্বরের পাটরানী। আর বড় ভাই মহামদ গৌড়েশ্বরের মন্ত্রী।
ঢেকু গড়ের অধিপতি কর্ণসেন গৌড়েশ্বরের অধীন সামন্ত রাজা ছিলেন। ইছাই ঘোষ গৌড়েশ্বরের আর এক সামন্ত। তিনি চণ্ডীর বরপুত্র। অসীম তাঁর শক্তি। ইছাই প্রচণ্ডভাবে বিদ্রোহী হয়ে উঠলে গৌড়েশ্বরের নির্দেশে তাঁকে দমন করতে গিয়ে কর্ণ সেন পরাজিত হলেন। ছয় পুত্র ও পুত্রবধূরা যুদ্ধে মারা গেলেন। কর্ণসেন অত্যন্ত কাতর হয়ে পড়লেন। বৃদ্ধা সামন্তরাজ কর্ণসেনের সঙ্গে গৌড়েশ্বর নিজ শ্যালিকা রঞ্জাবতীর বিয়ে দিলেন। বিয়ের পর কর্ণসেন রঞ্জাবতীকে নিয়ে ময়নাগড়ে নতুন সামন্ত পদে অধিষ্ঠিত হলেন।
কর্ণ সেন বৃদ্ধ বলেই বিবাহে মহামদের ঘোরতর আপত্তি ছিল। তিনি অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে উঠলেন। সামনা-সামনি গৌড়েশ্বরকে কিছু বলার তাঁর সাহস ছিল না। তাই তিনি কর্ণ সেনের সঙ্গে শত্রুতা শুরু করলেন। কর্ণ সেনকে আঁটকুড়া বা পুত্রহীন বলে বিদ্রূপ করলেন। ক্ষোভে দুঃখে অভিমানে রঞ্জাবতী খুবই বিমর্ষ হয়ে পড়লেন।
একদিন রাজপথ দিয়ে ধর্মঠাকুরের গাজন উৎসবের মিছিল যাচ্ছিল। পুরোহিতকে ডেকে রঞ্জাবতী ধর্মঠাকুরের মাহাত্ম্যের কথা বিশদভাবে জানলেন। ধর্মঠাকুরের পূজায় অপুত্রকের পুত্রলাভ হয়। রঞ্জাবতী কঠোর কৃচ্ছ্রসাধন শুরু করলেন। কণ্টকশয্যায় তাঁর শরীর ছিন্নভিন্ন রক্তাক্ত হয়ে গেল। শালেভর দিয়ে প্রাণ দিতে উদ্যত হলেন। অবশেষে ধর্মঠাকুর আর্বিভূত হয়ে তাঁকে পুত্রবর দিলেন। যথা সময়ে রঞ্জাবতীর গর্ভে জন্ম নিল স্বর্গের শাপভ্রষ্ট এক দেবতা। নাম লাউসেন।…
লাউসেন ক্রমে বড় হয়ে উঠল। লেখাপড়া ও অস্ত্রবিদ্যায় বিশেষ দক্ষতা অর্জন করল। মল্লবিদ্যায় কেউ তাঁর সঙ্গে পেরে ওঠে না। গৌড়েশ্বরের কাছে নিজের বীরত্ব দেখিয়ে খ্যাতি অর্জনের জন্য একদিন লাউসেন ভাই কর্পূরধবলকে নিয়ে গৌড় যাত্রা করলেন। পথে বাঘ কুমির প্রভৃতি হিংস্র পশুদের বধ করে তাঁর খ্যাতি বেড়ে গেল।…
গৌড় পৌঁছেই মহামদের চক্রান্তে লাউসেন কারারুদ্ধ হলেন। কিন্তু শীঘ্রই বাহুবল দেখিয়ে গৌড়েশ্বরকে সন্তুষ্ট করে কারামুক্ত হলেন। আর পেলেন ময়নাগড়ের ইজারা। দেশে ফেরার পথে কলুডোম ও তাঁর পত্নী লখ্যার সঙ্গে লাউসেনের বন্ধুত্ব হল। লাউসেন এদের নিয়ে ফিরলেন ময়নাগড়ে।…
মহামদ চুপ করে বসে থাকার লোক নন।… তাঁরই চক্রান্তে অজয় নদের তীরে ইছাই ঘোষের সঙ্গে লাউসেনের তুমুল যুদ্ধ বাধল। ধর্মঠাকুরের কৃপায় লাউসেন বিজয়ী হলেন। যুদ্ধে পরাস্ত ও নিহত হল ইছাই ঘোষ।…
লাউসেন কাহিনিটি সুপরিচিত পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের উপর প্রতিষ্ঠিত। এককালে রাঢ়ভূমি পশ্চিমবঙ্গের প্রবেশদ্বার ছিল। এই অঞ্চলকে বীরভূমি বলা হয়।…”
১৯৮০ সালের ডিসেম্বর মাসের কথা। মোটরগাড়ি ঢুকে পড়ল গভীর শাল বনের মধ্যে। লালমাটির কাঁচা পথ। গাড়ি চলতে লাগল উঁচু নিচু রাস্তা ধরে। শুরু হল গড়জঙ্গল। কাউকে এখানে আসতে হলে দুর্গাপুর থেকে মুচিপাড়া, ওখান থেকে অটো কিংবা ট্রেকারে। বাসে এলে দুর্গাপুর থেকে শিবপুরের বাসে ১৩ কিমি শ্যামরূপা মোড়, তারপর বনের মধ্যে দিয়ে হাঁটা ছাড়া কোনও গতি নেই।
বনের পাতা কুড়ানো দু’চারজন লোক ছাড়া চোখে আর কিছুই পড়ছে না। বিশাল বিশাল শাল গাছ দাঁড়িয়ে আছে মাথা উঁচু করে। মনোরম গভীর বনভূমির মধ্যে দিয়ে মোটর চলতে লাগল একেবারেই সাধারণ গতিতে। এত শান্ত, এত নির্জন এই বনভূমিতে কেউ একা এলে তার একটু ভয়ই করবে।
একটানা প্রায় ৫ কিমি মোরামের লালমাটির পথ পার হয়ে এলাম শ্যামরূপা মন্দির। একেবারেই সাধারণ সাদামাটা মন্দির। দেখলে মনে হবে এক কামরার একটা বসতবাড়ি। মন্দিরের চূড়া নেই। ছোট্ট দাওয়া। মন্দিরে স্থাপিত মূর্তিটি দেবী দুর্গার। শ্বেতপাথরে নির্মিত দেবী সুদর্শনা। উচ্চতায় দশ বার ইঞ্চির উপরে হবে না। দেখলাম নারীপুরুষ মিলিয়ে জনাপাঁচেক যাত্রী বসে আছে মন্দিরের দাওয়ায়। এরা এসেছে পুজো দিতে। এরা সকলে থাকে জঙ্গলের বাইরে, গ্রামে। মন্দিরটুকু বাদ দিলে বাকি অংশ ঘন সবুজে ভরা।
মন্দিরপ্রাঙ্গণে রয়েছে একটি হাড়িকাঠ। তার পাশেই দাঁড়িয়ে বনকুসুম গাছ। মন্দিরসংলগ্ন কেয়ারটেকারের ঘর। সঙ্গীসহ আমরা যেতেই বেরিয়ে এলেন তিনি। ওড়িশাবাসী কেয়ারটেকার ভাগবত রাউত এখানে একা রয়েছেন অনেকদিন। জানতে চাইলাম এই মন্দিরের অতীত প্রসঙ্গ। তিনি বললেন, ‘আমি লোক পরম্পরা শুনে আসছি, আগে এই মন্দিরে শক্তির উপাসনা করতেন এক কাপালিক। তিনি নরবলিও দিতেন। এ কথা একদিন জানতে পারলেন প্রেমিক ও ভক্ত কবি জয়দেব। তিনি তো অজয়ের ওপারেই থাকতেন।
হঠাৎ কোনও একদিন তিনি এসে হাজির হলেন এই মন্দিরে। কাপালিককে বললেন, আপনি তো নরবলি দিয়ে মায়ের পুজো দেন, ভাল কথা। তবে এই নরবলির পুজো সার্থক হয়েছে বলে মনে করব যদি আপনার মাকে দেখাতে পারেন আমাকে। যদি না পারেন তা’হলে আমি আপনাকে দর্শন করাব আমার শ্যামকে। তবে শর্ত আছে একটা, নরবলি বন্ধ করতে হবে।
ভক্ত কবি জয়দেবের এই প্রস্তাবে রাজি হলেন কাপালিক। চেষ্টা করলেন তাঁর উপাস্যদেবীকে দর্শন করাতে। ব্যর্থ হলেন। এবার জয়দেব আকুল হয়ে প্রার্থনা করলেন মন্দিরস্থ শ্যামার কাছে। ভক্তের বাসনা পূরণ হল। শ্যামা এবার শ্যামরূপ ধারণ করে দর্শন দিলেন কাপালিককে। আনন্দে আবেগে কাপালিক লুটিয়ে পড়লেন প্রেমিক সাধক জয়দেবের পদতলে। সেই থেকে বন্ধ হল নরবলি, শ্যামা রূপের পরিবর্তন করে এখানে হলেন শ্যামরূপা।’
এই পর্যন্ত বলে প্রায় সত্তর বছর বয়স্ক ভাগবত রাউত একটু থামলেন। কথা বলছিলাম বনকুসুম গাছের তলায় দাঁড়িয়ে। এবার বললেন, ‘আমি লোক পরম্পরা শুনে আসছি, একসময় দেবী চৌধুরানীকে ভবানী পাঠক গড়জঙ্গলের এই মন্দিরে শিখিয়েছিলেন সাধন ভজন। তবে মন্দিরে এখন যে বিগ্রহটি দেখছেন সেটি প্রাচীন বা জয়দেবের সময়কার নয়। সে বিগ্রহ চুরি হয়ে গেছে বহুকাল আগে। পরে স্থাপিত হয়েছে দেবী দুর্গার এই পাথরের বিগ্রহটি।’
বনকুসুম গাছে বাঁধা ছোটছোট অসংখ্য ইটের টুকরো দেখিয়ে বললেন, ‘এই জঙ্গলের বাইরের গ্রামের মানুষরা এসে মানসিক করে এগুলো বেঁধে দিয়ে গেছে। আশা পূরণ হলে তারা খুলে দিয়ে যায়। বহুলোকের কাছে শুনেছি তাদের অনেক আশাই পূরণ করেছেন শ্যামরূপা।’
এবার রাউত বললেন, ‘এখানে এলেন অথচ আসল জিনিসটাই আপনাদের দেখা হয়নি। আসুন আমার সঙ্গে।’
বলে চলতে লাগলেন আরও সরু, একেবারেই সরু গভীর জঙ্গলের পথ ধরে। প্রকৃত অর্থে পথ বলে কিছু নেই। আমরা অনুসরণ করলাম ভাগবত রাউতকে।
খানিকটা জঙ্গলে চলার পর শুরু হল দুর্ভেদ্য জঙ্গল। এখন আর পথের কোনও চিহ্ন নেই। কখনও ঝোপঝাড়ের মধ্যে দিয়ে মাথা নিচু করে, কখনও একটু সোজা হয়ে বেশ কিছুটা চলার পর ভাগবত রাউত এসে দাঁড়ালেন প্রাচীন ভগ্নাবশেষের শেষ সম্বলটুকুর জায়গায়। এখানে রয়েছে বড় একটা অশ্বত্থগাছ। চারদিকে একবার চোখ ঘুরিয়ে নিলাম। গভীর ঘনঘোর জঙ্গল ছাড়া আর কিছুই নেই। এখন যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেখানে একা আসা অসম্ভব। কেউ একা এলে সে পথ হারাবে।
এবার ভাগবত রাউত বললেন, ‘একসময় এই গড়জঙ্গল ছিল ইছাই ঘোষের অধীনে। এই যে অশ্বত্থগাছের গোড়ায় মন্দিরের মতো ছোট্ট ধ্বংসস্তূপ দেখছেন, এখানেই ছিল ইছাই ঘোষের দুর্গামন্দির। তিনি ছিলেন শক্তি উপাসক। প্রতিদিন তিনি এসে এই মন্দিরে দেবীর পুজো করতেন। তাঁর মৃত্যু বড় রহস্যজনক। অজয়ের ওপারে লাউসেনের সঙ্গে ছিল তাঁর চিরবিরোধ। শোনা যায়, একদিন তিনি লাউসেনকে আক্রমণের প্রস্তুতি নিলে দেবী দুর্গা সেদিন তাঁকে যুদ্ধে যেতে নিষেধ করেন। ইছাই ঘোষ দেবীর সে কথা অমান্য করে লড়াইতে যান এবং নিহত হন লাউসেনের হাতে।’
এই পর্যন্ত বলে রাউত থামলেন। দেখলাম ইতস্তত পড়ে আছে প্রাচীন মন্দিরের ভাঙা আর পাতলা ইটের অসংখ্য টুকরো। এগুলি ইছাই ঘোষের সাক্ষী হয়ে আজও পড়ে আছে নির্জন জঙ্গলে খোলা আকাশের নিচে।
অশ্বত্থগাছের চারপাশে ঘুরে দেখার পর রাউত বললেন, ‘চলুন, জঙ্গলের আরও একটু ভিতরে রয়েছে ইছাই ঘোষের নারায়ণ মন্দির।’
কথাটুকু বলে ধীরে ধীরে হাঁটতে শুরু করলেন। আমরাও চলতে লাগলাম পিছনে পিছনে। খানিকটা চলার পর এসে দাঁড়ালাম একটা জায়গায়। প্রাচীন একটা চারপাঁচ ফুট ভাঙা ছোট পাঁচিল আর পাতলা পাতলা ভাঙা ইটের টুকরো ছাড়া আর কিছুই এখানে পড়ে নেই। তাও আবার পাঁচিলের গা ঘেঁষে রয়েছে জঙ্গল। একসময় এটি ছিল ইছাই ঘোষ নির্মিত নারায়ণ মন্দির।
এবার অদ্ভুত কথা শোনালেন ভাগবত রাউত, ‘জানেন, এ কথা শুনলে কেউ এ যুগে বিশ্বাসই করবে না। প্রতিবছর এই গড়জঙ্গল থেকে তিনবার তোপধ্বনি হয় দুর্গাপুজোর অষ্টমীর দিন। ঠিক অষ্টমী তিথি যখন শুরু হয় তখনই হয় এই তোপের আওয়াজ। ওই ধ্বনি না হওয়া পর্যন্ত জঙ্গলের বাইরে গ্রামগুলোতে কেউ অষ্টমীপুজো শুরু করে না। আপনি গ্রামে গিয়ে খোঁজ নিলেও এ কথার সত্যতা জানতে পারবেন। কোথা থেকে এই তোপধ্বনি হয়, কে যে করে তা আজও জানা যায়নি। আমি নিজের কানেও শুনেছি। তবে আগে অনেক জোরে আওয়াজ হত, এখন অনেকটা কম, তবে হয়ই।’
কথাটা শুনে বিস্মিত হয়ে গেলাম। কোনও কথা বললাম না। রাউত আমাদের সঙ্গে নিয়ে পথ দেখিয়ে আবার আনলেন শ্যামরূপা মন্দিরপ্রাঙ্গণে। একটু বিশ্রামের পর ইছাই ঘোষের আরও একটা স্মৃতিক্ষেত্রের খবর পেলাম ভাগবত রাউতের কাছে। অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়ে ধরলাম ফেরার পথ। চললাম দু’পাশে গভীর জঙ্গল, মাঝখানে একেবারে কাঁচা পথ ধরে। পথ নির্জন। শান্ত মনোরম পরিবেশ। বিশাল বিশাল শালগাছ। বিচিত্র ধরনের রঙ-বেরঙের পাখির ডাক এক মোহময় পরিবেশ সৃষ্টি করেছে এই গড়জঙ্গলে। এরই মধ্যে দিয়ে প্রায় ৪-৫ কিমি পথ পেরিয়ে বেরিয়ে এলাম জঙ্গলের বাইরে। এবার পেলাম মাত্র কয়েক ঘর বসতি নিয়ে ছোট্ট একটা গ্রাম। এই গ্রামের কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করলাম, দুর্গা অষ্টমীতে তোপধ্বনির কথা। স্বীকার করলেন তাঁরাও প্রতিবছর শুনে থাকেন তোপধ্বনি। ভাগবত রাউত এখন আর নেই। বর্তমানের নিত্যপুজারি ও দেবী শ্যামরূপার সেবাইত শ্রদ্ধেয় শ্রীদিলীপ রায়ও স্বীকার করেছেন তোপধ্বনির কথা।
গ্রাম ছেড়ে উঁচুনিচু মেঠো পথ ধরে আবার শুরু হল চলা। চলার পথ থেকে অজয়ের দূরত্ব খুব বেশি নয়। অজয়কে বাঁয়ে রেখেই চললাম। বেশ খানিকটা চলার পর পেলাম আর একটা গ্রাম। এই গ্রাম ছাড়ার পর ফের শুরু হল জঙ্গল। তবে আগের মতো অত গভীর নয়। এবার দূর থেকে জঙ্গলের মধ্যে দেখতে পেলাম একটা মিনার। এসে গেলাম মিনারের কাছাকাছি। এখানে রাস্তা অনেক পরিস্কার। দু’পাশে গাছগাছালি আর ঝোপজঙ্গল, মাঝখানে মাটির রাস্তা ধরে এসে দাঁড়ালাম একেবারে মিনারের সামনে। দেখলাম কয়েকজন কাঠকুড়ানি ছেলে মেয়ে কাঠের বোঝা নিয়ে বসে আছে। এদের কাছে জানতে পারলাম মিনারের নাম ইছাই ঘোষের দেউল। স্থানটি দুর্গাপুরের শেষ সীমানায় গৌরাঙ্গপুর, খেড়োবাড়ি গ্রাম। দেউল থেকে অজয় বেশি দূরে নয়।
গড়জঙ্গল আমার প্রথম দেখা, এসব কথা কিন্তু ১৯৮০ সালের। এরপর অসংখ্যবার গিয়েছি শ্যামরূপা মন্দিরে। ইছাই ঘোষ নির্মিত দুর্গা ও নারায়ণ মন্দির আজ আর নেই। কোনও এক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান জঙ্গলের কিছু অংশ পরিস্কার করে ফেলে। ২০০২ সালে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় সেই প্রাচীন মন্দির। পরে নতুন করে নির্মাণ করা হয় দুর্গামন্দির। জনশ্রুতি, এই ঘটনার পর থেকে তোপধ্বনির আওয়াজ একেবারেই ক্ষীণ হয়ে এসেছে। দুর্গামন্দির অঙ্গন এখন আমার চোখে একটা কৃত্রিম পরিবেশ যেন। এর পাশেই শ্যামরূপায় যাই, আজও সেই কৌলীন্য এতটুকুও হারায়নি বলে, কিন্তু কিছুতেই মন টানে না নবনির্মিত দুর্গা মন্দির।