Let’s Go

নেপালের দুর্গম পাহাড়ি গুহায় পাওয়া ১৮ হাত কালীমূর্তির মাহাত্ম্য কথা

অনেকেই হয়ত জানেন না যে কালীবাড়িটির ইতিহাস বা ঐতিহ্য কোনও অংশেই অন্য নামজাদা কালী মন্দিরের থেকে কম নয়।

ফিরিঙ্গী কালী, কালীঘাটের কালী, ঠনঠনিয়া কালী, পুঁটে কালী এরকম অনেক কালীর নামই আপনারা শুনেছেন, হয়তো চাক্ষুষ দর্শনও করেছেন। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না যে খোদ কলকাতার বক্ষস্থলেই এক আঠারো হাত কালীবাড়ি রয়েছে যেটির ইতিহাস বা ঐতিহ্য কোনও অংশেই তিলোত্তমার নামজাদা কালী মন্দিরের থেকে কম নয়।

আনুমানিক ১২০ বছর আগের কথা। তন্ত্রসাধক আশুতোষ মুখোপাধ্যায় গিয়েছিলেন নেপালে। ওখানে এক দুর্গম পাহাড়ের গুহায় তিনি পেয়েছিলেন একটি অষ্টাদশভুজা গুহ্যকালী বিগ্রহ। স্বপ্নাদেশে নিয়ে এলেন কলকাতায়।


অনুরূপ একটি মূর্তি নির্মাণ করালেন সাধক। পাঁচ ফুট দৈর্ঘ্যের অষ্টধাতুর মূর্তির ওজন হল ১৮ মণ। দেবীর আদেশে বিগ্রহ নির্মাণ করেছিলেন দুজন শিল্পী। দুলাল ঠাকুর ও রাখাল ঠাকুর।

জানা যায় বিগ্রহ নির্মাণের পর অতি অল্পদিনের মধ্যে তাঁরা মারা যান। কথিত আছে সেই মৃত্যুতেও নাকি দেবীর স্বপ্নাদেশ ছিল। প্রসঙ্গত ১৮ হাত কালীমূর্তি কিন্তু অবাক হওয়ার মত কিছু নয়। আঠারো হাতের দেবী কালিকার উল্লেখ আছে চণ্ডীতে।


১৪২, মুক্তারামবাবু স্ট্রিট। রাস্তাটি প্রসিদ্ধ স্বর্গীয় রসসাহিত্যিক শিবরাম চক্রবর্তীর বসবাসের কারণে। এই পাড়াতেই অষ্টাদশভুজা গুহ্যকালীর নিবাস। রাস্তার ধারে মন্দির। গর্ভমন্দিরের অঙ্গন সামান্য প্রশস্ত। পাথরের বেদীর উপর কাঠের সিংহাসনে দেবী বিগ্রহ কুচকুচে কালো তেল চকচকে।

নেপাল থেকে আনা ছোট্ট বিগ্রহটি আছে সযত্নে। নিত্যপুজোও পেয়ে আসছেন দেবী। দালানমন্দিরে গুহ্যকালী শায়িত শিবের উপর পদ্মাসনে বসে আছেন হাঁটু মুড়ে। গলায় মুণ্ডমালা। মাথায় রুপোর মুকুট।

ত্রিনয়নী দেবী সবসনা। দেবীর আঠারো হাতে রয়েছে অভয়মুদ্রা, ঢাল, তলোয়ার, খড়্গ, কৃপাণ, শঙ্খ, চক্র, গদা, পদ্ম ইত্যাদি নানান রকমের আয়ুধ। অষ্টাদশভুজার ডানপাশে বেশ বড় আকারের সাদা মুখমণ্ডলটি মা শীতলার। বামদিকের বিগ্রহ মা শীতলার পুত্র দেব জ্বরাসুরের।

প্রতিদিন অন্নভোগ নিবেদন করা হয়। ফলহারিণী কালীপুজোর দিনটি অষ্টাদশভুজা গুহ্যকালীর প্রতিষ্ঠা দিবস হওয়ায় ওদিন এ মন্দিরে বিশাল উৎসব হয়। মন্দির খোলা থাকে ভোর ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। আবার বিকাল ৪টেয় খোলা হয়, দেবীর শয়ন দিয়ে মন্দির বন্ধ হয় রাত ১০টায়।

কালীপুজোর দিনও দেবী পূজিতা হন রীতি মেনে। আগে প্রতি কালীপুজোতেই এখানে মোষ বলি হত। পরে এখনে রাধাকৃষ্ণ প্রতিষ্ঠার পর থেকে বলি প্রথা উঠে যায়। প্রতি বছর মায়ের পুজো হয় শাক্য মতে। পুজো উপলক্ষে অন্নকূট উৎসব আয়োজিত হয়। যেখানে দরিদ্রদের খাওয়ানো হয়ে থাকে।

কলকাতায় কালী মন্দিরের সংখ্যা নেহাত কম নয়। এক একটি মন্দিরের ইতিহাস এক এক রকম। কয়েকটি মন্দির স্বমানধন্যও বটে। যেমন এই গুহ্যকালীর মন্দিরের অদূরেই ঠনঠনিয়া কালী মন্দির।

তবে কলকাতার কালী নিয়ে যদি ইতিহাস রচনা করতে হয় তবে তাতে মুক্তারামবাবু স্ট্রিটের এই আপাত স্বল্প পরিচিত গুহ্যকালীর জায়গা হতেই হবে। নাহলে যে ইতিহাসটাই অসম্পূর্ণ থেকে যায়।

Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button