যেখানে ভূতের ভয়, সেখানেই ভূতের উৎসব হয়
ভূতে ভয় পায় না এমন মানুষ কমই আছেন, কিন্তু এ যে একেবারে যেচে পড়ে ভূতকে আমন্ত্রণ। গোটা বিশ্বজুড়ে রমরমিয়ে পালিত হচ্ছে হ্যালোউইন ডে।
ভূতে ভয় পায় না এমন মানুষ কমই আছেন, কিন্তু এ যে একেবারে যেচে পড়ে ভূতকে আমন্ত্রণ। গোটা বিশ্বজুড়ে রমরমিয়ে পালিত হচ্ছে হ্যালোউইন ডে। ভূতের উৎসব। কিন্তু কি এই হ্যালোউইন?
হ্যালোউইন কথাটি এসেছে হ্যালোড ইভনিং থেকে। মানে হল, পবিত্র সন্ধ্যা। দিনটি পালিত হয় ৩১ অক্টোবর, মৃত আত্মাকে খুশি করার দিন। মৃত্যুর দেবতার দিন।
খ্রিস্টানরা এই দিনটিকে আবার সমস্ত সাধুদের দিন বলে মনে করে থাকেন। কারণ, এই দিনেই বিভিন্ন দেশের গির্জার ধর্মযাজকেরা একসঙ্গে মিলিত হন। আনন্দ উৎসব করেন। তাই দিনটি খুবই শুভ।
যদিও ৩১ অক্টোবর নয়, উৎসব ১ নভেম্বর পালিত হয়ে থাকে। মূলত গ্রেট ব্রিটেন ও স্কটল্যান্ডের সেলটিক নামে বর্বর জাতি এবং খ্রিস্টানরা এই উৎসব পালন করে থাকেন।
প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে এই দিন মৃত্যুর দেবতা সমস্ত আত্মাদের মুক্তি দেন। সেইসব আত্মারা পৃথিবীতে আসেন। এরা কিন্তু ভূতের রাজার মতো বর-টর দেয় না। অনেক বেশি প্রতিহিংসাপরায়ণ তারা। জীবিতকালে তাদের সঙ্গে যারা খারাপ ব্যবহার করে, তাদের উপর প্রতিশোধ নেয় সেইসব অতৃপ্তআত্মা। এই আত্মাদের কোপের হাত থেকে বাঁচতেই তাদের খুশি করতে হয় উপাসনা। একেই বলে হ্যালোউইন।
তাছাড়া, এই দিনটির একটি অর্থনৈতিক তাৎপর্যও আছে। এইসময় থেকে গরমকাল বিদায় নেয়। বিদায় নেয় বৃষ্টি। প্রকৃতি হয়ে ওঠে রুক্ষ, শুকনো। এইসময় পরজগতের অশুভ আত্মারা খুব সক্রিয় হয়ে ওঠে। তারা চেষ্টা করে ফসলের ক্ষতি করতে। যা খুবই অশুভ বলে মনে করা হয়। তাই প্রকৃতির ও মানুষের মঙ্গল কামনার জন্য এই উৎসব পালন করা হয়ে থাকে। যা একসময় উৎসব-ব্যবসায় পরিণত হয়।
তবে বিতর্ক যাই থাকুক, হ্যালোউইন পালন নিয়ে বর্তমানে মানুষের মধ্যে উন্মাদনার যেন শেষ নেই। হিন্দুদের ভূতচতুর্দশীর থেকে এই উৎসব পালনের রীতি কিন্তু অনেকটাই আলাদা। কারণ, ভূতচতুর্দশীর দিন পরলোকের আত্মা-প্রেতাত্মাকে দূরে রাখার জন্য এবং পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তি কামনার জন্য ১৪টি বাতি বা প্রদীপ জ্বালানো হয়। আর হ্যালোউইন উৎসবে অংশগ্রহণকারীরা রাতে খাবার টেবিল সাজিয়ে তোলেন আলো দিয়ে। এছাড়া আছে আরও অদ্ভুত সব নিয়ম।
এই দিন ভৌতিক জামা কিংবা বিকট মুখোশ পরেন উৎসব পালনকারীরা। ভয় দেখান তাঁদের বন্ধু ও আত্মীয়স্বজনকে। ৩১ অক্টোবরের আগে থেকেই বিদেশের বুকে মহা সমারোহে পালিত হয় কস্টিউম ও মাস্ক ফেস্টিভ্যাল।
এই দিনে কেউ বাদুড় বা কালো বিড়ালের সাজ সাজেন। এইরকম সাজলে নাকি মৃত আত্মাদের সঙ্গে মিলিত হওয়া যায়। পাওয়া যায় অলৌকিক শক্তি। কেউবা মিষ্টি কুমড়োর প্রদীপ দিয়ে ঘর ও তার চারপাশ সাজিয়ে তোলেন।
লোকগাথা অনুসারে, এই প্রদীপ তৈরি করেছিলেন জ্যাক নামে জনৈক ব্যক্তি। যিনি নানাভাবে শয়তানদের ঘোল খাইয়ে ছেড়েছিলেন। এছাড়া হ্যালোউইন উৎসবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার চেয়ে আনা অর্থাৎ ট্রিক অর ট্রিটিং, ভৌতিক গল্প বলা, ভূতের সিনেমা দেখা, ভূতের ঘর বানানো ইত্যাদি প্রথাগুলিও বেশ জনপ্রিয়।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা প্রয়োজন, একসময় ট্রিক অর ট্রিটিং প্রথাটি বিতর্কের মুখে পড়েছিল। কারণ, প্রতিবেশির বাড়িতে সুস্বাদু খাবার চাইতে গিয়ে অনেক সময়, বিশেষ করে শিশুদের শ্লীলতাহানির মুখে পড়তে হত।
বিশ্বায়নের যুগে আজ উৎসব দেশকালের দূরত্ব ঘুচিয়ে খুঁজে পেয়েছে তার নিজের পরিচয়। তাই শুধুমাত্র ইউরোপ বা আমেরিকার অধিবাসীরাই নন, সমগ্র বিশ্বের অ-খ্রিস্টানরাও আপন করে নিয়েছেন এই অদ্ভুতুড়ে সংস্কৃতিকে।
ভারতীয় তথা বাঙালিরাও এই উৎসব পালনে সানন্দে শামিল হচ্ছেন। উৎসবের নানা উপকরণে সেজে উঠেছে নিউমার্কেট, পার্ক স্ট্রিটের নানা পাব। উৎসবে অংশ নেন সাধারণ মানুষ থেকে চলচ্চিত্র জগতের তারকারাও।