সংকটমোচন কষ্ট বোঝেন, সমাধান করেন প্রভুর সাহায্যে
অত্যন্ত ব্যথিত হল হনুমানের হৃদয়। আন্তরিক আর্তি নিয়ে তিনি গেলেন প্রভু রামের কাছে। সবিনয়ে জানালেন কথা। অনুরোধ করলেন প্রভুকে।
চিত্রকূট অরণ্য। ত্রেতাযুগ থেকে আজও বহন করে চলেছে শ্রীরামচন্দ্র ও ভক্ত হনুর পুণ্যস্মৃতি। তাঁদের পদধূলিতে পবিত্র হয়ে উঠেছে চিত্রকূট, বৃক্ষলতা। তাই তো ভক্তপ্রাণ তীর্থযাত্রী ছুটে আসে নানা দেশ, নানা প্রান্ত থেকে। চিত্রকূটের ধূলিস্পর্শে নিজেকে চায় নির্মল পবিত্র করতে। এমন মনোরম তীর্থ, ভক্তের সঙ্গে ভগবান রাম যেন একাত্মা হয়ে যান এখানে এলে।
চিত্রকূটের অতিথি রঘুপতি রাম, সঙ্গে দেহরক্ষী হনু। রাজা রাম এসেছিলেন তপস্বীর বেশে, পরিবেশও তপস্যার। মনোময় বনভূমির বুকে বয়ে চলেছে তুলসীদাসের স্পর্শবিজড়িত মন্দাকিনী। প্রকৃতি যেন সেইভাবেই সাজিয়ে রেখেছিলেন তাঁর পরিবেশ। জানতেন রাম আসবে। বসেছিলেন রামেরই অপেক্ষায়। এলেনও। মাতৃস্তনের দুধ যেন, সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই আয়োজন শেষ।
চিত্রকূট থেকে বাসে এলাম হনুমান ধারা, ৫ কিমি। এখানে হনুমান মন্দির আছে তবে সমতলে নয়। উঠতে হয় পাহাড়ে। প্রায় সাড়ে তিনশো সিঁড়ি ভেঙে উঠে এলাম উপরে। দাঁড়ালাম একটি তোরণের কাছে। এর একটু এগোতেই ছোট্ট একটি হনুমান মন্দির সিঁড়ির একেবারে পাশে।
প্রথম তোরণের পর এল আর একটি তোরণ। এটা পেরতেই বাঁধানো অঙ্গনের একদিকে আর একটি হনুমান মন্দির। পাহাড়ের গায়েই খোদাই করা হয়েছে হনুমান বিগ্রহ। রুপোর চোখ দুটো ঝকঝক করছে। মাথায়ও রুপোর মুকুট। এই পাহাড়ের বাঁদিকে গা বেয়ে এসেছে জলধারা – হনুমান ধারা। ধারার জল এসে পড়ছে একটি কুণ্ডে। ওই কুণ্ডের জলই আবার পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে গেছে সমতলে।
হনুমান ধারার আর একটি নাম সরস্বতী গঙ্গা। হনুমান মন্দিরের পূজারির কথায়, একবার প্রচণ্ড জলাভাব দেখা দিল এখানে। ফলে পাহাড়ের সজীব বৃক্ষলতা গেল শুকিয়ে। অপরিসীম কষ্টের সৃষ্টি হল সমতলবাসীদের। এতে অত্যন্ত ব্যথিত হল হনুমানের হৃদয়। আন্তরিক আর্তি নিয়ে তিনি গেলেন প্রভু রামের কাছে। সবিনয়ে জানালেন জলাভাবের কথা। অনুরোধ করলেন প্রভুকে। চিরস্থায়ী জলের ব্যবস্থা করলেন রঘুবীর। পাহাড়ের গায়ে বাণ মেরে আনলেন জলধারা সরস্বতী গঙ্গাকে। হনুমানজির প্রচেষ্টায় সৃষ্টি হল এই জলধারা, তাই নাম হয়েছে হনুমান ধারা।
এই পাহাড়ের আরএকদিকে অল্প কিছু সিঁড়ি ভেঙে নামলে পড়ে পঞ্চমুখী হনুমান মন্দির। পাহাড়ের গায়ে খোদাই করা বিগ্রহ। মহারাষ্ট্রের গণপতিপুলে পাহাড়ের গায়ে গণেশ বিগ্রহের মতো। এখানেও হনুমান ধারার মতো নেমে এসেছে একটি জলধারা। হনুমান ধারা দেখে নেমে এলাম সমতলে। চিত্রকূটের এমন রমণীয় তপোবনের পরিবেশ আজও মুছে যায়নি অন্তর থেকে। এখানকার সৌন্দর্য যে চোখের আরাম।