Mythology

স্কুল থেকে বিতাড়িত ছাত্র হলেন মহাজ্ঞানী, শ্রীকৃষ্ণের কাছ থেকে শুনলেন গীতা

বাপ-মায়ের বিনা ইন্টারভিউ, ছেলের বিনা রিটেন টেস্ট ও ডোনেশান ছাড়া এক লাফে ভর্তির চান্স পেয়ে গেলেন কশ্যপমুনির ইস্কুলে। কিন্তু পড়া তো দূরের কথা, কিছু বললে কোনও কথাই শোনে না। খালি দাঁত খিঁচায়।

শিবের অংশে জন্ম বলে অবিলম্বে বড় হয়ে উঠলেন হনুমান। চিন্তায় চিন্তায় মা অঞ্জনার চোখের ঘুম যায় আর কী! একটা ভালো নামি ইস্কুলে (ইংলিশ মিডিয়াম) পড়াশুনা করে হনুমান থেকে মানুষের মতো না হলে বানররাজের ইজ্জত চলে যাবে। সমাজে মুখ দেখানো যাবে না। ‘অশিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত’ হলে বড় হয়ে করবেটা কী? যা কম্পিটিশান মার্কেট।

খোঁজখবর করতে গিয়ে একটা ভাল ইস্কুলের সন্ধান পেয়ে গেলেন অঞ্জনা। ইস্কুলের প্রধান শিক্ষক কশ্যপমুনি। বানরদের রাজা ছিলেন কেশরী। বানররাজ বলে কথা। বাপ-মায়ের বিনা ইন্টারভিউ, ছেলের বিনা রিটেন টেস্ট ও ডোনেশান ছাড়া এক লাফে হনু ভর্তির চান্স পেয়ে গেলেন কশ্যপমুনির ইস্কুলে।


দু’চারদিন যেতে না যেতেই শুরু হল বাঁদরামি। আজ এ মুনির জটা ধরে টানেন তো সে মুনির দাড়ি, পরশু আর এক মুনির নেংটি। ইস্কুল গ্রাউন্ডে বাগানের সমস্ত ফল একদিনে সাফ। পড়া তো দূরের কথা, কিছু বললে কোনও কথাই শোনে না। খালি দাঁত খিঁচায়। স্বভাব যায় না মলে!

নিত্যিই গার্জিয়ান কল করতে থাকেন কাশ্যপ মাস্টারমশাই। মা অঞ্জনা এসে মাথা নিচু করে দাঁড়ান। অভিযোগের উত্তর জানা নেই। এখন দুপুরের ভাতঘুম আর টিভির নেশা ছুটে গেছে। সারাটা দুপুর ছুটে বেড়ান জ্যোতিষী তান্ত্রিকদের ডেরায়। হনুমান যাতে মানুষ হয়, তার চেষ্টার অন্ত নেই মায়ের। এদিকে হনুর ওজন বেড়েই চলেছে। হাতের দশ আঙ্গুলে ইয়া বড় বড় পাথর, গলা ও বাহু মিলিয়ে শতখানেক নানান সাইজের কবচ। তবুও হনুর বাঁদরামি বন্ধ হয় না, পড়ায় মন বসে না।


এবার শেষবারের মতো গার্জিয়ান কল করলেন কাশ্যপ। বললেন,

– অঞ্জনা ম্যাডাম, আপনার ছেলে হনুমানের মাথাটা ভাল। অসম্ভব ইন্টেলিজেন্ট। দারুণ বুদ্ধি ও বিনয়ী। অন্তর ওর অগাধ বিশ্বাস ভক্তিতে ভরপুর। দারুণ বিবেচক ও প্রখর বিচারশক্তি। দুর্জয় বলশালী। অফুরন্ত ও অত্যাশ্চর্য ক্ষমতা ও শক্তির অধিকারী। নিজেকে ইচ্ছেমতো ছোট ও বড় করতে পারে। নিঃস্বার্থতার প্রতীক। ওর আত্মত্যাগের কূলকিনারা নেই। অফুরন্ত জীবনীশক্তি। এমন কোনও গুণ নেই যা হনুমানে নেই। এ সবই ওর সহজাত।

Hanuman
সংকটমোচন, নিজস্ব চিত্র

এই পর্যন্ত বলে প্রধান শিক্ষক কাশ্যপ একটু কাশলেন। টিচার্স রুমে কথা হচ্ছে। টিফিনের ঘণ্টা কানে এল। এবার বললেন,

– অঞ্জনা ম্যাডাম, আপনার ছেলের যত অরুচি পড়ায়। চাউমিন, চিলিচিকেন, এগরোলে রুচি। গাছে উঠতে দাও, খেলতে দাও, টিভিতে কার্টুন দেখতে দাও, তখন বেজায় খুশি। পড়তে বসলেই গায়ে জ্বালা বাধে। তখন ঘন ঘন হাইতোলা, গা-মাথা চুলকানো, মিনিটে মিনিটে হিসু পাওয়া, সহপাঠীদের পিছনে চিমটি কাটা – ম্যাডাম, দিনের পর দিন হনুমানের বাঁদরামি বেড়েই চলেছে। অতিষ্ঠ হয়ে একদিন ওকে অভিশাপ দিলাম, ওর আত্মশক্তি ও গুণাবলির সমস্ত কথা ও ভুলে যাবে। তবে কেউ তা মনে করিয়ে দিলে তৎক্ষণাৎ তা মনে পড়বে।

যাই হোক ম্যাডাম আপনার ছেলে হনুমানকে অনেক চেষ্টা করেও মানুষ করতে পারলাম না। সরি, ও হনুমানই রয়ে গেল। আমার ইস্কুলে থাকলে অন্য মুনিঋষিরা ওর পাল্লায় পড়ে জটা দাড়ি কেটে এক একটা গাছবাঁদর হয়ে যাবে। এই নিন ওর ক্যারেকটার সার্টিফিকেট। অন্য কোনও ইস্কুলে ভর্তি করে দিন।

অভিজ্ঞতায় দেখেছি ম্যাডাম, ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াশুনো করলে ফটাফট দু-চারটে ইংরাজি কথা বলতে পারে বটে, তবে অধিকাংশই অত্যন্ত উদ্ধত হয়। বাবামায়ের প্রতি প্রায়ই শ্রদ্ধাবনত হয় না। এবার যেটা ভালো মনে হয় করবেন।

Hanuman
হনুমান, প্রতীকী ছবি

কী আর করবেন হনুর মা, কেশরীপত্নী অঞ্জনা। মোবাইলে সব ব্যাপারটা স্কুল গ্রাউন্ডের বাইরে এসে জানালেন স্বামী কেশরীকে। বছর লসের ভয়ে সঙ্গে সঙ্গেই কেশরী ফোন করলেন সূর্যদেবকে। অনুরোধ রক্ষা করলেন দিবাকর। হনু ভর্তি হলেন ‘অর্ক উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে’। এবার হনুমান সূর্যদেবকে গুরুস্থির করে বেদ ও ষড়দর্শন অধ্যয়ন করতে গেলেন সূর্যের কাছে। এরপর সূর্যরথে সূর্যদেবের সঙ্গে আকাশ পরিক্রমা করতে করতে সব কিছু শিখে ফেললেন মাত্র ষাট ঘণ্টায়।

কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে তিনজন মহাভাগ্যবান শ্রীকৃষ্ণের মুখ থেকে ভগবদগীতা শুনেছিলেন। ইস্কুল লাইফে বহিষ্কৃত সেই হনুমানজি সহ অন্য দুজন মহারথী অর্জুন ও অমাত্য মহাত্মা সঞ্জয়।

Show Full Article

2 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button