মন্দিরের বিগ্রহ জীবন্ত, সংকটমোচন সমস্যা শোনেন ও সমাধান করেন
সংকটমোচন এখানে পাথরের বিগ্রহ নয়, জীবন্ত। সমস্যা বললেই কথা শোনে। মুক্ত করে। পরীক্ষিত সত্য।
গোধূলিয়া মোড় থেকে কাশীর প্রাচীন দুর্গামন্দির ৮ কিমি। এখান থেকে সামান্য পথ তুলসীমানস মন্দির হয়ে একটু এগোলেই সংকটমোচন মন্দির। ভারত ও ভারতের বাইরে হনুমান মন্দির আছে অসংখ্য, তবে অত্যন্ত জাগ্রত সংকটমোচন এই কাশীধামে।
সাদামাটা মন্দির প্রাঙ্গণ জুড়ে অশ্বত্থের শীতল ছায়া। পরেই বাঁ পাশে সংকটমোচন, ডানদিকে শ্রীরামচন্দ্রের মন্দির। মন্দির দুটি মুখোমুখি। ভাবটা এমন, রাম ছাড়া হনুমান চলবে না। হনুমান ছাড়া রামের এক পা যাওয়ার জো নেই। পিরিত আর কাকে বলে!
চলার পথের অভিজ্ঞতা। স্বামী স্ত্রী বাড়িতে কেউ কাউকে সহ্য করতে পারে না। মন ও মতের মিল নেই। দলবদ্ধ কিংবা কোনও প্রতিষ্ঠানের ভ্রমণে এরা গেলে তখন ব্যাপারটা দেখেছি ফেবিকল, কেউ বা কাঁঠালের আঠা।
খেতে বসছে পাশাপাশি, এক কাপ চা ফিফটি-ফিফটি। পিরিতের যেন অন্ত নেই। তখন ভাবটা কাশীর সংকটমোচন মন্দিরের রাম-হনুমান। এরাই যখন বাড়িতে, বলে লাভ নেই। এ আমার চোখে দেখা।
হরিদ্বারে এক নব্বই বছরের বৃদ্ধ পাঞ্জাবি সাধুবাবা বলেছিলেন, হনুমানজি অযোধ্যায় ভক্তিদান করেন। সমস্ত সংকট থেকে মুক্ত করেন কাশীতে সংকটমোচন নামে অবস্থান করে।
পাঠকের উদ্দেশ্যে বলি, সংকটমোচন এখানে পাথরের বিগ্রহ নয়, জীবন্ত। সমস্যা বললেই কথা শোনে। মুক্ত করে। পরীক্ষিত সত্য। সংকটমোচন মন্দিরে সিঁদুর রাঙানো হনুমানজি ছাড়াও আছে বিশ্বনাথ মহাদেবের একটি লিঙ্গ বিগ্রহ। বিপরীতে শ্রীরামচন্দ্রের সঙ্গে সীতা ও লক্ষ্মীজির সুসজ্জিত বিগ্রহ।
সেই ষোড়শ শতাব্দী থেকে এ কথা আজও চলে আসছে, সংকটমোচন মন্দির সংলগ্ন কর্ণঘণ্টা নামে স্থানটিতে একবার হনুমানজির দর্শন পেয়েছিলেন রামপ্রেমিক তুলসীদাস।
তপোনিষ্ঠ তুলসীদাস মহাবীরজিকে জানিয়েছিলেন তাঁর মনের আকুল আকুতি, প্রভু রামচন্দ্রের দর্শন পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা। নিরাশ করেননি মহাবীরজি, সাধক কবি তুলসীদাসকে প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাতের পথ জানিয়েছিলেন।
সংকটমোচন মন্দির পরিক্রমা পথে মন্দিরের পিছনে রয়েছে তুলসীদাসের ছোট্ট একটি পাথরের মূর্তি। জনশ্রুতি, প্রেমিক কবি তুলসীদাস গোস্বামী প্রায়ই এখানে এসে বসতেন বিশ্রামে। তাঁরই পুণ্যস্মৃতিতে এই মূর্তি।