হনুমানজি স্বয়ং বসে আছেন এই মন্দিরে, সারা গায়ে নিজের হাতে মেখেছেন সিঁদুর
শারীরিকভাবে অত্যন্ত শক্তিশালী। সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্রকে অবহেলায় পরাজিত করতে সক্ষম বলে হনুমানজি হলেন বজরঙ্গবলী। সারা ভারতে সমস্ত হনুমান মন্দিরে হনুমানজির গায়ের রং লাল বা মেটে সিঁদুরের। এই রং সম্পর্কে নানা জনে নানা মত ব্যক্ত করেছেন।
এবার অঞ্জনাপুত্র পবননন্দনের রূপ বর্ণনা। হনুমানজির দেহজ্যোতি কাঞ্চনবর্ণ অর্থাৎ লোমশ দেহ সোনালি রঙের। দু’কান কানন কুণ্ডল শোভিত। কুঞ্চিত কেশ যেন পরিপাটি করে আঁচড়ান। পরিধেয় বসন পরিচ্ছন্ন। ভগবানের প্রতি বয়ে যাওয়া ভক্তির সরযূধারার প্রতীক যেন বায়ুসুতের প্রশস্ত বক্ষ। তেজোদৃপ্ত বিশাল দেহ। হাতে ধ্বজা ও বজ্র থাকা সত্ত্বেও কাঁধ সদাসর্বদা সুশোভিত অসীম সাহসের প্রতীক গদায়।
শারীরিকভাবে অত্যন্ত শক্তিশালী। সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্রকে অবহেলায় পরাজিত করতে সক্ষম বলে হনুমানজি হলেন বজরঙ্গবলী।
সারা ভারতে সমস্ত হনুমান মন্দিরে হনুমানজির গায়ের রং লাল বা মেটে সিঁদুরের। এই রং সম্পর্কে নানা জনে নানা মত ব্যক্ত করেছেন। এ লেখায় কোনও ফ্যাঁকড়া মতে যাওয়ার ইচ্ছা নেই।
সোজা পথের পথিক। রামঘাট থেকে মিনিট পাঁচ সাতেকের পথে হনুমানগড়ি। বেশ বড় হনুমান মন্দির। কিছু সিঁড়ি ভেঙে উঠে এলাম মন্দিরে। নাটমন্দির সর্বদাই মুখরিত হয়ে আছে রামভক্তের রামায়ণপাঠে। গর্ভমন্দিরে রামসীতা ও সর্বাঙ্গে সিঁদুর মাখানো হনুমানজির বিশাল সুদর্শন বিগ্রহ। সিঁদুর লাগানো হনুমানজির মূর্তি দেখে মনে পড়ে গেল সরযূতীরে রামঘাটে সাধুবাবার বলা সরস সিঁদুর কাহিনিটি –
একদা শ্রীরামচন্দ্রে সঙ্গে সীতার শৃঙ্গারের পর (আয়নায় একবার মুখটা দেহে নিলে প্রেস্টিজটা ঝুলত না!) সারা কপালে লেপটে থাকা সিঁদুর দেখে একেবারেই পোলাপানের মতো হনুমানের আদুরে জিজ্ঞাসা,
– মাঈয়া, তোমার কপালে লাল রঙের লেপ্টে থাকা ওটা কী? তবে তুমি যখন পরেছ তখন আমারও ওটা পড়া উচিত। কী বলো মাঈ?
এ কথা শুনে জনকনন্দিনী জানকী হাসতে হাসতে বললেন,
– বেটা, এর নাম সিঁদুর। স্বামীর সার্বিক মঙ্গলার্থে মেয়েরা এটা পড়ে। তুমি কেন পড়বে, তুমি তো পুরুষ। ছেলেরা কখনও সিঁদুর পড়ে না।
আদুরে সরলমনা রামভক্ত হনুমান। কোনও কথা শুনলেন না। সারা দেহে সিঁদুর মাখলেন নিজেই। তারপর একলাফে গিয়ে বসলেন একটি টিলার উপর। যে টিলায় স্থাপিত হয়েছে মন্দির হনুমানগড়ি। সেই থেকে আজও সারা ভারতের সমস্ত হনুমান মন্দির সুশোভিত সোনালি নয়, লাল রঙে রাঙ্গায়িত হনুমানদেহ।
সরযূতীরে রামঘাটে আশি বছরের বৃদ্ধ সাধুবাবা আর একটি কাহিনি আমাকে বলেছিলেন, যা আজও আমার হৃদয়মন ছুঁয়ে আছে।
অযোধ্যার বিশাল একটি সুদৃশ্য মন্দির কনকভবন। অপূর্ব সাজে সজ্জিত রাম লক্ষ্মণ সীতা ভরত শত্রুঘ্নের সঙ্গে হাঁটুগেড়ে বসে আছে পাথরের হনু। ভক্তজনের সীতারাম গানে সর্বদা মুখরিত মন্দির।
সাধুবাবার কথায়, রামায়ণীযুগে এখানে ছিল একটি সোনার মহল। রামের বিবাহের পর কৈকেয়ী পুত্রবধূ সীতার মুখ দেখে উপহার দিলেন মহলটি। কিন্তু সীতা এতে খুশি হলেন না। পিতা দশরথকে বললেন, ধনরত্নের উপর কোনও লোভ বা মোহ নেই তাঁর।
পুত্রবধূর এ কথায় অত্যন্ত প্রীত হলেন রাজা দশরথ। আশির্বাদ করলেন সীতাকে, লোকে শুধু রামেরই নাম করে। এখন থেকে তোমার নাম থাকবে অক্ষয় হয়ে। শুধু রাম নয়, আগে সীতা পড়ে রাম – সীতারাম। এইভাবে লোক মুখে উচ্চারিত হবে তোমার নাম, যতদিন রামায়ণ থাকবে লোকসমাজে।
সাধুবাবার কাহিনি যাই হোক, একটা ঘটনা সত্য। অজ্ঞাত কোন কাল থেকে আজও চলে আসছে অমর নাম – সীতারাম, সীতারাম। সিয়ারাম, সিয়ারাম, জয় জয় সিয়ারাম বলে!