চা বেচে দিন চলছে বিদেশ থেকে পদক জেতা ক্যারাটে চ্যাম্পিয়নের
ভারতের ক্রীড়া ক্ষেত্রের দৈন্যদশা ফের একবার সামনে এসে পড়ল। বিদেশি প্রতিযোগিতা থেকে পদক জিতে আনা দেশের এক ক্যারাটে প্রতিভা এখন চা বেচে দিন গুজরান করছেন।
ভারতে ক্রিকেটের কদর রয়েছে। কিন্তু আর কোনও খেলার সে কদর নেই। জনপ্রিয়তার নিকতি মেপে এ দেশে খেলোয়াড়দের সুযোগ সুবিধার সেই পুরনো প্রচলন এখনও কিন্তু ভারতীয় ক্রীড়াক্ষেত্রের জীর্ণ চেহারাটা বারবার সামনে এনে দেয়।
হয়তো সে কারণেই এখনও এত ক্রীড়া প্রতিভা নিয়েও ভারতের ঝুলিতে অলিম্পিকস বা এশিয়াড থেকে হাতে গোনা মেডেল আসে।
আর তা যে কেন তা ফের একটি কাহিনি সামনে এনে দিল। বিচ্ছিন্ন হলেও এটাই ভারতীয় অনেক ক্রীড়া প্রতিভার ভবিষ্যৎ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
১৩ বছর বয়সে ক্যারাটে শুরু করেছিলেন হরি ওম শুক্লা। তার পর ১০ বছরের মধ্যেই তাঁর ঝুলিতে আসে ৬০টি পদক। দেশ ও বিদেশের মাটিতে জুনিয়র ও সিনিয়র স্তরের প্রতিযোগিতা থেকে একের পর এক পুরস্কার জিততে থাকেন এই ক্যারাটে প্রতিভা।
থাইল্যান্ড বা শ্রীলঙ্কায় হওয়া আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা থেকে সোনা, রূপো, ব্রোঞ্জ সব রকম পদকই হরি ওমের ঝুলিতে এসেছে নিয়মিতভাবে। ভারতের অন্যতম সেরা কারাটে প্রতিভা হয়ে উঠেছিলেন তিনি।
কিন্তু ২৩ বছর বয়সের পর তাঁর জীবনের সেই সোনালি সময়ে ছেদ পড়তে শুরু করে। তখন তাঁর পরিবারের জন্য একটা চাকরির খুব দরকার ছিল। কিন্তু এই স্তরে খেলেও হরি ওমের কপালে একটা চাকরি জোটেনি স্পোর্টস কোটা থেকে।
হরি ওমের অভিযোগ, সরকারও তাঁকে কোনও সাহায্য করেনি। রোজগারের চিন্তা ক্রমে বাড়তে থাকায় খেলার সুযোগ কমতে থাকে। একটি স্কুলে ছাত্রদের ক্যারাটে শেখানোর চাকরি যাও বা কপালে জোটে, তাও করোনার কোপে চলে যায়।
এখন এই ২৮ বছর বয়সে সম্পূর্ণ বেকার বাড়িতে বসে ছিলেন হরি ওমের মত ক্রীড়া প্রতিভা। অবশেষে তিনি স্থির করেন দিন গুজরানটা করতেই হবে। বাবার চায়ের দোকানে তিনিও বেচা শুরু করেন চা।
এখন মথুরার একটি রাস্তার কোণের চায়ের দোকানেই সকাল থেকে রাত হয় হরি ওমের। একটা চাকরির জন্য দেখা করেছিলেন মথুরার সাংসদ হেমা মালিনীর সঙ্গেও। হরি ওমের দাবি কোনও কাজের কাজ হয়নি।
হরি ওমের মত প্রতিভার এমন পরিণতিতে হতাশ তাঁর কোচও। তাঁর মতে হরি ওমকে একটা চাকরি দেওয়া যেত। তাঁর আরও অভিযোগ ভারতে ক্যারাটে জগতে এত রাজনীতি যে এখানে এ খেলার ভবিষ্যৎ অন্ধকার।
প্রসঙ্গত এই রাজনীতির কারণেই টোকিও অলিম্পিকস-এ ভারত ক্যারাটে টিম পাঠাতে পারছেনা। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা