২০০ বছরের পুরনো খাবার, হরিসা এক প্রাচীন পরম্পরাও
এমন কিছু খাবার হয় যাকে কেবল খাবার বলে লঘু করাটা হয়তো অন্যায়। তার মাহাত্ম্য লুকিয়ে থাকে তার পরম্পরায়। যা অমূল্য হয়।
একদিনে এ খাবার তৈরি হয়নি। এ রান্নার শুরুটা ২০০ বছর আগে হলেও তা কিন্তু ২০০ বছরে আরও উন্নত হয়েছে, আরও জিভে জল আনা হয়েছে। স্বাদ বেড়েছে। বেড়েছে জনপ্রিয়তা।
এ দোকানের মালিকের মতে এ খাবার ২০০ বছরে আরও সুস্বাদু যেমন হয়েছে তেমনই এই রান্নার হাতযশ সকলের পক্ষে তৈরি করা সম্ভব নয়। সেখানেই লুকিয়ে আছে ২০০ বছর ধরে চলে আসা রন্ধন কৌশল। আর সেটা তাঁদের পরিবারের নিজস্ব।
পুরনো শ্রীনগর শহরের আলি কদল এলাকায় রয়েছে ৪৭ বছর বয়সী জাহুর আহমেদ ভাটের পারিবারিক দোকান। এই দোকান চলে আসছে ২০০ বছর ধরে। আর তাদের বিশেষত্বই লুকিয়ে আছে হরিসা নামে একটি খাবারে।
যে খাবার সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে কনকনে হাড় কাঁপানো ঠান্ডায়। চিল্লাই কলনের সময় তো বটেই, তার আগে পিছেও যে প্রবল ঠান্ডায় কাশ্মীরের মানুষকে দিন কাটাতে হয় সেই সময়টায় শরীরকে গরম রাখতে হরিসার জুড়ি নেই।
হরিসা কিন্তু তৈরি হয় বিকেল নামার পর। নেহাত সহজ রান্না নয়। মূলত ভেড়ার মাংসকেই কাজে লাগানো হয় এই রান্না রাঁধতে। একটি মাটির পাত্রে ভেড়ার মাংস আঁচে সিদ্ধ হয়ে হাড় থেকে ছেড়ে আসে। তারপর সেই মাংস মিহি করে ফেলা হয়। শর্ত হল একটা কুচি টুকোর হাড়ও থাকা যাবেনা ওই মিহি করে মাখা মাংসে।
এবার অন্য একটি মাটির পাত্রে ভাত রান্না হয়। তারপর মশলা সহযোগে মিহি করা মাংস আর ভাত একসঙ্গে প্রায় পেস্ট করে ফেলা হয়। সেই পেস্ট থেকেই তৈরি হয় হরিসা।
অত্যন্ত পুষ্টিকর এই খাবার কিন্তু সহজে হজম করা মুশকিল। তাই তা হজম করতে হরিসার সঙ্গে পরিবেশন করা হয় কাশ্মীরের বিশেষ নুন চা। যা হরিসা হজম করাতে সাহায্য করে।
এখন ১ কেজি হরিসার দাম হয়েছে ৭০০ টাকা। যা কেনার জন্য সন্ধেয় পাত্র জমা দিয়ে আসতে হয়। পরদিন সকালে পাওয়া যায় চাহিদা মত পরিমাণ হরিসা। শুধু কাশ্মীর বলেই নয়, এই খাবার দিল্লি, মুম্বই থেকেও অর্ডার করা হয়। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা