Health

সুস্থ ঝকঝকে ত্বকের জন্য কাঁচা হলুদ

আজকের দূষণের রাজত্বে মানুষের ত্বক হারিয়ে ফেলছে তার স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্য। সেইসব সমস্যার সমাধানে কাঁচা হলুদের জুড়ি নেই।

গায়ে হলুদ ভারতীয় বিবাহ অনুষ্ঠানের এক অবিচ্ছেদ্য রীতি। কাঁচা হলুদ বাটা অল্প সর্ষের তেল বা চন্দন যোগে লেপে দেওয়া হয় হবু বর ও কনের অঙ্গে। যুগ যুগ ধরে প্রচলিত এই রীতি পালনের পিছনে বিজ্ঞানসম্মত কারণ আছে বৈকি।

হলুদ আসলে একটি অ্যান্টিসেপটিক প্রাকৃতিক প্রসাধনী উপকরণ। যখন বাজারে কৃত্রিম প্রসাধনীর রমরমা ছিল না, তখন কাঁচা হলুদ দিয়ে অঙ্গরাগ করতেন মহিলারা।


আজকের দূষণের রাজত্বে মানুষের ত্বক হারিয়ে ফেলছে তার স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্য। তার ওপরে লেগে রয়েছে নানারকম ত্বকের সমস্যা। সেইসব সমস্যার সমাধানে কাঁচা হলুদের জুড়ি নেই। কাঁচা হলুদের মহৌষধি গুণের রকমারি :

ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধিতে :


প্রতিদিন রাতে বা ১ দিন অন্তর রাতে ঘুমনোর আগে দুধের সাথে কাঁচা হলুদ মিশিয়ে খেলে ধীরে ধীরে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে কাঁচা হলুদের রস খেলেও সমান উপকারিতা পাওয়া যায়। যাঁরা কাঁচা হলুদ শুধু খেতে পারেন না, তাঁরা চিনি, গুড় বা বাতাসা সামান্য মিশিয়ে নিতে পারেন।

তৈলাক্ত ত্বকের জন্য :

৩-৪ চিমটে হলুদের গুঁড়ো, ১ চামচ চন্দন গুঁড়ো এবং ৪-৫ চামচ কমলালেবুর রস মিশিয়ে মাস্ক তৈরি করুন। সেই মাস্ক সপ্তাহে ২ বার মুখে লাগান। তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।

শুষ্ক ত্বকের জন্য :

সামান্য কাঁচা হলুদ বাটা, ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল, ২ ফোঁটা লেবুর রস, গোলাপ জল মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে মুখে লাগান। শরীরে শুষ্ক জায়গাতেও লাগাতে পারেন। সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার এই প্যাক ব্যবহার করতে পারেন।

ব্রণ দূর করতে :

কাঁচা হলুদ বাটা, চন্দন গুঁড়ো, লেবুর রস মিশিয়ে একটি মাস্ক বানিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে হাল্কা গরম জলে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

পোড়া বা ক্ষতের উপশমে :

পোড়া বা ক্ষতের জায়গায় হলুদ বাটার সাথে অ্যালোভেরার রস মিশিয়ে দিলে উপকার পাওয়া যায়।

বয়স ধরে রাখতে :

বেসন, কাঁচা হলুদ বাটা, টক দই মিশিয়ে মুখ সহ সারা শরীরে লাগিয়ে রাখুন শুকনো না হওয়া পর্যন্ত। শুকিয়ে গেলে আলতো হাতে ভালো করে মাসাজ করুন। এটি ত্বকের ময়লা পরিস্কার করতেও সাহায্য করে।

২-৩ চিমটি হলুদ, চিনি এবং চালের গুঁড়ো মিশিয়ে মুখ স্ক্রাব করলে মুখের মরা কোষ দূর হয়। শুষ্ক এবং কালো ঠোঁটের জন্য হলুদ গুঁড়ো এবং কাঁচা দুধ মিশিয়ে স্ক্রাব করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

হলুদ বাটা, শসার রস, মুলতানি মাটি, লেবুর রস মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে মুখে মাস্ক হিসাবে লাগিয়ে রাখুন। ত্বকের পোড়া ভাব কমে যাবে।

হলুদ ত্বকের বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে। ২-৩ চিমটি হলুদ গুঁড়ো, চালের গুঁড়ো ১ চিমটি, টমেটোর রস আধ চামচ, ১ চা চামচ কাঁচা দুধ মিশিয়ে মুখে মাস্ক হিসাবে লাগিয়ে রাখুন। তারপর ঈষৎ উষ্ণ গরম জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

গোড়ালি ফাটা রোধ করতে :

কাঁচা হলুদ বাটার সঙ্গে নারকেল তেল বা ক্যাস্টর অয়েল আধ চামচ মিশিয়ে পায়ের ফাটা জায়গায় লাগিয়ে রাখলে ফাটা দাগ কমবে, পায়ের ত্বক নরম থাকবে।

যে কোনও চর্ম রোগের জন্য হলুদ অত্যন্ত উপকারি। কাঁচা হলুদের সাথে কাঁচা দুধ মিশিয়ে শরীরে মাখলে অ্যালার্জি, চুলকানি ইত্যাদি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, কাঁচা হলুদ বাটা বা হলুদের কোনও প্যাক ত্বকে ১৫-২০ মিনিটের বেশি রাখা যাবে না।

রোজ প্যাক ব্যবহার করা উচিত নয়। সপ্তাহে ২ বা ৩ দিন তা ব্যবহার করাই শ্রেয়। নাহলে অতিরিক্ত ব্যবহারে মুখ কালো হয়ে যাবে।

আবার, ত্বকে সরাসরি হলুদ দেওয়া উচিত নয়। কিছুর সাথে যেমন চন্দন গুঁড়ো, দুধ বা গোলাপ জলের সঙ্গে মিশিয়ে হলুদ মাখা ভাল। তবে প্রতিটি মানুষের ত্বকের প্রকৃতি আলাদা। তাই যাঁদের হলুদে অ্যালার্জি আছে, তাঁরা সাবধানে হলুদ ব্যবহার করবেন।

Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button