বারবার চা পান, সাবধান, সমস্যা শরীরে বাসা বাঁধছে
সকাল হলেই চা, দুপুরের কোন এক ফাঁকে চা, সন্ধ্যায় গল্প করতে করতে বা টিভি দেখতে দেখতে চা। আবার ঘরে যদি অতিথির আনাগোনা হয় তবে আরও এক কাপ চা জুড়ে যায় সারাদিনের রুটিনে। কোন কিছুরই আধিক্য ভাল নয়। যার মধ্যে চাও পরে।
চায়ের ৩টে জীবন আছে। ঘরোয়া জীবন, ঠেকের জীবন আর অফিস জীবন। আমরা সবাই, চায়ের এই ৩টে জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।
মা-জেঠিমারা ঘরোয়া অন্যান্য কাজের পাশাপাশি চা পান করার নেশাকে বহাল তবিয়তে লালনপালন করেন। সকাল হলেই চা, দুপুরের কোন এক ফাঁকে চা, সন্ধ্যায় গল্প করতে করতে বা টিভি দেখতে দেখতে চা। আবার ঘরে যদি অতিথির আনাগোনা হয় তবে আরও এক কাপ চা জুড়ে যায় সারাদিনের রুটিনে। এই হল ঘরোয়া জীবনের কাহিনি।
এরপর হল ঠেকের কাহিনি। পাড়ার ঠেক মানেই বিভিন্ন বয়সের মানুষের চায়ের ভাঁড় হাতে আড্ডা। যেখানে আলোচ্য হিসাবে রাজনীতি, খেলা, চুরি, ডাকাতি, সিনেমা সবই ঘুরেফিরে আসে। এক ও অদ্বিতীয় হয়ে থেকে যায় চায়ের ভাঁড়টা। কথার ফাঁকে গরম চায়ে চুমুকে সীমাহীন আনন্দে কটা ভাঁড় শেষ হল অনেকেই তার খোঁজ রাখেন না। দোকানের দাদা, মাসি, কাকা বা দাদুকে শুধু হাঁক দিলেই হাজির চায়ের ভাঁড়।
অফিস জীবনে চা পানের আবার রক্ষাকবচ আছে। ‘চা পানে নাহি দোষ – চা করে চিত্ত পরিতোষ’, এ একদম অফিস কর্মীদের মনের কথা। সারাদিনের কাজের চাপে সামান্য চিত্ত পরিতোষের জন্য চা, সিগারেট তো তাঁদের পরম বন্ধু। আজকাল বিভিন্ন অফিস কাছারিতে আবার চায়ের মেশিন বসানো। যত ইচ্ছে চা পান করুন। তাও আবার গাঁটের কড়ি খরচ না করেই। কাজের ফাঁকেও যে কতবার চা পান হয়ে যায় তার হদিসও চায়ের কাগুজে কাপগুলোও রাখেনা। এহেন ব্যস্ততায় খালি পেট বা ভরা পেট সবেরই সঙ্গি এক ভাঁড় চা।
চা এমন কত ভাবেই উদরস্থ হচ্ছে। কিন্তু অনেকেই ভেবে দেখেন না বাঙালির এই পরম বন্ধু এনার্জি ড্রিঙ্কটি ‘অধিকন্তু ন দোষায়’ আপ্তবাক্যকে সমর্থন করে না। আসলে কোন কিছুরই আধিক্য ভাল নয়। যার মধ্যে চাও পরে। ডাক্তারবাবুরা বলেন, সারাদিনে বারবার চা পান করা স্বাস্থ্যের পক্ষে হানিকারক। চায়ে থাকে ক্যাফেইন, থিওব্রমিন, থিওফিলিন ও থিয়ানাইন নামে রাসায়নিক। যা শরীরকে উদ্দীপ্ত করে। চনমনে করে। সঙ্গে এনার্জিও বাড়িয়ে দেয়। তাই, শুধুমাত্র নিজেকে চনমনে রাখার জন্য সারাদিনে অনেকবার চা পান করে ফেলেন অনেকেই। এই অনেকবার চা পানই কিন্তু নানান দৈহিক সমস্যার একটা বড় কারণ। এবার দেখে নেওয়া যাক, একাধিকবার চা পান কতটা সমস্যায় ফেলতে পারে একজনকে।
সকালে খালি পেটে কখনই চা নয়, খালি পেটে চা পান মানেই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাকে জাগিয়ে তোলা। ভর পেট খাওয়ার পরে নিছক পাল্লায় পরে চা পান করলে অম্বলের সম্ভাবনা তৈরি হয়। আগুনে গরম চা পান করা উচিৎ নয়, গরম চায়ে জিভ হাল্কা পুড়ে যেতে পারে, এছাড়াও লিভারে এর একটা কুপ্রভাব পড়ে।
চা বারবার ফুটিয়ে না পান করাই ভাল, কারণ বারবার চা ফোটালে চায়ের নির্যাসে থাকা স্বাস্থ্যকর গুণ হারিয়ে যায়, চা যতবার ফোটানো হবে, ততবার চায়ের গুণ কমতে থাকবে আর বাড়তে থাকবে তার খারাপ প্রভাব। রাতে চা পান মানেই ঘুমের ব্যাঘাত, চায়ে থাকা ক্যাফেইন ও অন্যান্য রাসায়নিক নার্ভাস সিস্টেমকে উদ্দীপ্ত রাখে, ফলে ঘুম সহজে আসতে চায় না, মাথা ধরার সম্ভাবনা বাড়ে। দিনে একাধিকবার চা পান পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রস্টেট ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। যাঁদের হৃদরোগের সমস্যা আছে তাঁদের চা পানের ঘনঘটা থেকে বিরত থাকাই ভাল, কারণ, হৃদরোগের সমস্যা বাড়িয়ে দেয় ক্যাফেইন।
গর্ভবতী মহিলাদের জন্যেও একই কথা, এইসময় পানীয়ের তালিকা থেকে চা পাতাকে একেবারেই বর্জন করা উচিৎ গর্ভে থাকা সন্তানের সুস্থতার কথা ভেবে।
‘এক ভাঁড় চা’ বা ‘এক কাপ চা’ যেন ১ কাপেই সীমাবদ্ধ থাকে। খুব বেশি হলে ২ কাপ। তার বেশি কাপ বা ভাঁড় শরীরে নিঃশব্দে নানান সমস্যার জন্ম দিতে পারে। যে নিঃশব্দ হানার কথা চায়ের চুমুক টেরও পায়না।