সুস্থ থাকতে কোন পাত্রে জলপান করবেন, আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
সারাদিনে সকলেই জলপান করে থাকি। কিন্তু কোন পাত্রে জল খাচ্ছি তা নিয়ে আমাদের অনেক সময়েই কোনও মাথাব্যথা থাকেনা। আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ দিলেন তারই পথনির্দেশ।
জলই জীবন। এ আপ্তবাক্য সকলের জানা। সারাদিনে সকলেই জলপান করে থাকি। কিন্তু কোন পাত্রে জল খাচ্ছি তা নিয়ে আমাদের অনেক সময়েই কোনও মাথাব্যথা থাকেনা। পেলেই হল। বাড়ি থেকে অফিস, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এখন প্লাস্টিকের বোতলের চল। জলপানের আগে জলকে আরও স্বাস্থ্যকর বানাতে তামার কিন্তু জুড়ি নেই। নিখাদ তামার পাত্রে জলপান যে স্বাস্থ্যকর, তা মেনে নিচ্ছেন চিকিৎসকেরাও। ফলে বিভিন্ন দোকানে এখন তামার জলের বোতল বিক্রি বাড়ছে।
সিন্ধু সভ্যতার সময় থেকে আমাদের দেশে তামার ব্যবহার চলে আসছে। নিত্যদিনের প্রয়োজন মেটাতে তামার বাসন ব্যবহার হয়ে এসেছে যুগ যুগ ধরে। তামা, কাঁসা, পিতল, এই ধাতু বা ধাতুসংকরগুলো বরাবরই সমাজে দৈনন্দিন সাংসারিক ব্যবহারের অন্যতম উপকরণ ছিল। তামা এমনই এক ধাতু যা আমদের শরীরের জন্য বন্ধুত্বপূর্ণ। তামার পাত্রে জল রেখে আগেও পান করা হত। সভ্যতার রদবদলে আসে আরও অন্যান্য ধাতু ও প্লাস্টিক।
আয়ুর্বেদ মতে, তামার পাত্রে রাখা জলে থাকে ন্যাচারাল অ্যান্টিঅক্সিডান্ট যা আমদের শরীরের ৩টি দশার ভারসাম্য বজায় রাখে। ‘কপা’, ‘ভাতা’ ও ‘পিত্ত’, যাকে অনেকেই বাংলায় ‘বায়ু, পিত্ত ও কফ’ বলে থাকেন। এই ৩টির সঠিক ক্রিয়াকলাপে সাহায্য করে অ্যান্টিঅক্সিডান্ট। শরীরের বিভিন্ন রোগপ্রতিরোধের জন্য অ্যান্টিঅক্সিডান্ট যুক্ত খাবার ও জল সুফলদায়ী।
তামার পাত্রে জল রেখে খেলে তার উপকারিতা নিয়ে আমরা কথা বলেছিলাম আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ সুবল কুমার মাইতির সঙ্গে। তিনি জানালেন, মানবদেহে তামার পরিমাণ সঠিক মাত্রায় থাকলে শরীরে রক্তের ঘাটতি হয়না। পেটের রোগের সমস্যার সমাধান করতে সাহায্য করে তামা, যাঁরা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন বা অম্বলের সমস্যা আছে, তাঁদের জন্য তামার পাত্রের জল ভাল ফল দেয়, হজমের সমস্যাও দূর হয়।
তামায় জীবাণুরোধী গুণ থাকায় বিভিন্ন রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া থেকে দূরে রাখে তামার পাত্রের জল। শরীরে যদি জন্ডিস হয়ে থাকে বা ডায়রিয়ার জীবাণু থেকে থাকে তবে তাও ধ্বংস হয়ে যায় তামার প্রভাবে, লিভারের সমস্যা থেকেও মানুষকে দূরে রাখে তামা। গ্যাস্ট্রিক আলসার যাঁদের আছে তাঁরা নিয়মিত তামার পাত্রে রাখা জল পান করলে উপকার পাবেন।
তামার পাত্রে রাখা জল খাওয়ার অনেক গুণ আছে। তবে দোকান থেকে কেনবার সময় যাচাই করেই তামার জার কেনা উচিৎ। কারণ অনেক সময়ে তামার সঙ্গে লোহা বা সিসা মিশিয়ে ‘কপার বটল’ নাম দিয়ে বিক্রি হয়, যা শরীরের জন্য বিষ। তামার গ্লাস বা জারে টক জাতীয় পানীয় রাখা উচিত নয়। টক এড়িয়ে শুধুমাত্র সাদা জল রেখে খান।
তামার পাত্র খাঁটি কিনা জানার একটা সহজ উপায় হল তামার জারে জল রাখার পর যদি সেই জল কাচের গ্লাসে ঢেলে দেখেন যে জলের রং ঘোলাটে হয়ে গেছে বা জলের রঙে পরিবর্তন হয়েছে তবে ওই জল কিন্তু পানের জন্য একদমই নিরাপদ নয়। অবিলম্বে তামার পাত্রটি পরিবর্তন করে শুদ্ধ তামার পাত্র কেনা উচিৎ। কারণ তামার গ্লাসে বা বোতলে যদি শুদ্ধ জল রাখেন সেই জল দীর্ঘসময়ের পরও একইরকম স্বচ্ছ থাকবে।
বর্তমান বাজারে একটু খোঁজ করলেই তামার তৈরি জলের বোতল পাওয়া যায়। তামার গুণাগুণ সম্বন্ধে মানুষ এখন অনেক সচেতন। ফলে অনেকেই এখন বাড়িতে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বোতল ছেড়ে তামার বোতল ব্যবহার করছেন। বিভিন্ন দোকান বা শপিং মলে কপার বটল পাওয়াও যাচ্ছে। তবে হ্যাঁ দামটা একটু বেশি।