মোটা হওয়ার সমস্যা এবার সিঁধ কাটছে কিশোর মনে
অনেকের মুখেই শোনা যায় মোটা হয়ে যাচ্ছেন তিনি। এই সমস্যা কিশোর জীবনেও প্রভাব ফেলছে। সিঁধ কাটছে মনের অন্তরে। যা তাঁদের জন্য আরও বড় সমস্যা ডেকে আনছে।
লন্ডন : বই, ইন্টারনেট, লোকজনের মুখে শোনা উপায় বা টোটকা অথবা ডায়েটেশিয়ানের পরামর্শ, রোগা হওয়ার জন্য মানুষ কি না করছে! কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায়, ডায়েট সব করেও রোগা হওয়ার সহজ উপায় খুঁজে মেলা ভার হচ্ছে অনেকের কাছেই। যত সমস্যা স্থূলতাকে কেন্দ্র করে।
মোটা হওয়ার জন্য মানুষ এখন যতটা লড়াই করেন, তার চেয়ে অনেক বেশি লড়াই করেন রোগা হওয়ার জন্য। স্থূলতার সমস্যা এখন ছোট থেকে বড় সকলের সমস্যায় পরিণত হয়েছে। ওবেসিটি কথাটি এখন মুখে মুখে ঘুরছে।
এই ওবেসিটি মানুষের শুধু শরীরেই সমস্যা তৈরি করছে না, সিঁধ কাটছে মনেও। মনের অসুখ তৈরি হচ্ছে অনেকে মধ্যে। যার শিকার কৈশোরও। কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ওবেসিটিকে কেন্দ্র করে মানসিক সমস্যা বেড়ে চলেছে। যা নিয়ে সতর্ক করেছেন গবেষকেরা।
ওবেসিটি বা শরীরে অত্যধিক মাত্রায় ওজন বেড়ে যাওয়া শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যকেও বিঘ্নিত করতে পারে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা।
‘অ্যাক্টা পেডিয়াট্রিকা’ নামে জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে ওবেসিটি কি প্রভাব ফেলতে পারে সেই বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
এই গবেষণা জানাচ্ছে যেসব কিশোর-কিশোরী ওবেসিটি বা স্থূলতার শিকার তাদের মধ্যে অর্ধেকেরই বিভিন্ন স্নায়ুজনিত অসুখের সমস্যা শুরু হচ্ছে। যা আখেরে তদের মধ্যে নানা মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করছে। এই অসুখগুলির মধ্যে এডিএইচডি ও অটিজমের মত স্নায়বিক অসুখগুলি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
সুইডেনের লান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক কাজসা জারহলম এডিএইচডি-র লক্ষণ সম্বন্ধে বলেন, এডিএইচডি দেখা দিলে মানুষ নিজের শারীরিক চাহিদাগুলি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হয়।
খিদে না থাকলেও অত্যধিক পরিমাণে খাওয়া এবং সেই চাহিদা দ্রুত মেটানোর জন্য ফাস্ট ফুডের প্রতি নির্ভর করার প্রবণতা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
এছাড়াও তিনি বলেন, যাদের শরীরে অটিজমের লক্ষণ দেখা দিয়েছে তারা খাবার বিষয়ে অন্যদের থেকে বেশি খুঁতখুঁতে হয় কিন্তু তাদের পছন্দসই নির্দিষ্ট কিছু খাবার তারা বেশি পরিমাণে খেয়ে থাকে। এই খাওয়া নিয়ন্ত্রণ না করতে পারার ফলে তাদের স্থূলতার সমস্যা আরও বৃদ্ধি পায়।
এই গবেষণায় ৪৮ জন কিশোর কিশোরী অংশগ্রহণ করে, যার মধ্যে ৭৩ শতাংশই কিশোরী। তাদের বয়স ছিল গড়ে ১৫ ও তাদের বিএমআই ৪২, যা অত্যধিক স্থূলতাকে নির্দেশ করে।
প্রত্যেক কিশোর কিশোরীর মধ্যে অর্ধেকের চিকিৎসা হয়েছে ওষুধের মাধ্যমে আর বাকিদের সার্জারির মাধ্যমে ওজন কমানোর ব্যবস্থা করা হয়। প্রতিটি কিশোর কিশোরীর অভিভাবককে এই গবেষণা চলাকালীন নির্দিষ্ট কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় এবং কিশোর কিশোরীরাও এই প্রশ্নোত্তর পর্বের মধ্যে দিয়ে যায়।
গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে যাদের ওপর গবেষণা চালানো হয় তাদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ রোগীর অত্যধিক ভাবে খাবার খাওয়ার প্রতি আসক্তি কিংবা তারা ডিপ্রেশনের মত নানা মানসিক সমস্যার শিকার। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা