এই কাজটি করলে আর জ্যোতিষবিদ্যার প্রয়োজন হবে না
অবতারাদি ঈশ্বরকোটি পুরুষ ছাড়া এই অবস্থা কারও হয় না। জীবকোটি সাধারণ মানুষকে সর্বদা ঈশ্বরের শরণাগত হয়ে সংসারে সব কর্ম অনাসক্তভাবে করতে বলা হয়েছে।
শাস্ত্রে বলা হয়েছে ‘কৃষ্ণ স্বয়ং ভগবান’। খনার বচনে আছে ‘দুই ছেলের জন্ম তিথি, অষ্টমী নবমী দুটি’। জন্মাষ্টমী ও রাম নবমীর সঙ্গে একাদশী, মহাষ্টমী ও শিবচতুর্দশীর উপবাসের কথা বলা হয়েছে। এসব তিথির পালন না করতে পারলে ‘ভগার খাদে ডুবে মরিস’। সমগ্র ঐশ্বর্য, ধর্ম (বীর্য), যশ, শ্রী, জ্ঞান ও বৈরাগ্য, এই ছয়টির নাম ভোগ। এই ছয়টি ঐশ্বর্য যার আছে তিনিই ষড়েশ্বর্যপূর্ণ ভগবান।
ঈশ্বর হচ্ছেন স্বামী, নিয়ন্তা, সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয়ের কর্তা। এই জীব-জগৎ, মন-বুদ্ধি, ভক্তি, বিবেক-বৈরাগ্য ও জ্ঞান তার ঐশ্বর্য। দেহের অন্তরের ভাব হচ্ছে আত্মা, আর জগতের অন্তর ভাব হচ্ছে ঈশ্বর। যে মায়া থেকে সমস্ত জগতের সৃষ্টি হয়েছে সেই প্রতিফলিত চৈতন্যের নাম ঈশ্বর। ঈশ্বর উপাধি। মায়ার নামকরণ উপাধি। ঈশ্বর ও চৈতন্য এক। শুধু অবিদ্যা অজ্ঞানতার জন্য পৃথক মনে হয়। এই অবিদ্যা অজ্ঞানতা সরে গেলে ভেদবুদ্ধি যায়। তখন আর কিছু থাকে না। থাকে কেবল চৈতন্যের স্ফূর্তি। ‘অদ্বৈত-চৈতন্য-নিত্যানন্দ’, অদ্বৈতজ্ঞানে প্রতিষ্ঠা হলে চৈতন্য লাভ হয়। তখন কেবল নিত্যানন্দ। সমাধিতে আত্মার সাক্ষাৎকার হয়ে আত্মজ্ঞান লাভ হলে স্বস্বরূপে প্রতিষ্ঠা হয়। এই হল ভগার খাদে ডুবে মরা।
অবতারাদি ঈশ্বরকোটি পুরুষ ছাড়া এই অবস্থা কারও হয় না। সেজন্য জীবকোটি সাধারণ মানুষকে সর্বদা ঈশ্বরের শরণাগত হয়ে সংসারে সব কর্ম অনাসক্তভাবে করতে বলা হয়েছে। ঋষিদের ধর্ম বনের বেদান্তকে ঘরে নিয়ে এসে কীভাবে সংসারে থাকতে হবে যুগাবতার শ্রীরামকৃষ্ণ তা আমাদের দেখিয়ে দিয়েছেন। ঈশ্বররূপী খুঁটি ধরে সংসারে ঘুরলে আর পড়ে যাবার ভয় থাকে না। আত্মজ্ঞান লাভ হলে আর জ্যোতিষীদের দরকার হবে না। যার নেই ইষ্ট তার সবই অনিষ্ঠ। যোগ-জ্যোতিষ বৈদ্য ইষ্ট বিনে ভ্রষ্ট, ইষ্টকৃপা থাকলে অনিষ্ট আসবে কোথা দিয়ে, ইষ্ট ও ব্রহ্ম একই।
‘আমি তিথি নক্ষত্র ওসব জানি না, কেবল রাম জানি’ – শ্রীহনুমান। রাম মানে এক। যিনি সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে রমণ করেন তিনিই রাম। সেই এককে জানতে হবে। সেই এককে জানার নাম জ্ঞান। আর তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য অনেক কিছু জানার নাম অজ্ঞান। একের গায়ে শূন্য বসিয়ে গেলে অনেক হয়ে যায়। আর এককে মুছে ফেললে সব শূন্য হয়ে যায়।
‘তুমি জান আর না জান তুমিই রাম’। ‘মুই তেই’- শ্রীচৈতন্য। ‘সোহহং’ – আমিই তিনি, এটাই তন্ত্র সাধনার আসল তত্ত্ব, শিবের আগম তন্ত্রের শিববাক্য, যিনি আকর্ষণ করেন তিনিই কৃষ্ণ। আর যিনি আরাধনা করেন তিনি রাধা। এই রাধাকৃষ্ণ তত্ত্ব সম্বন্ধে জানতে হবে।
অবতার যিনি তারণ করেন, মানুষের দেহে চৈতন্যের অবতরণ হলে তিনি ‘মানুষ রতন’ হন। যুগে যুগে অবতার। যুগধর্ম রক্ষার্থে তিনি অবতীর্ণ হন। যে যুগের তিনি, তিনিই সে যুগের অবতার। দশম অবতার যেমন আছেন, তেমনি অসংখ্য অবতারও আছেন। ছোট বড় কেউ নয়। একটি প্রদীপ থেকে অসংখ্য প্রদীপ জ্বেলে নেওয়া যায়। সব কয়টি প্রদীপই পূর্ণ প্রদীপ হয়। পূর্ণ থেকে পূর্ণই উদ্গত হন। অবতারই একমাত্র সম্যক জ্ঞানী অর্থাৎ পূর্ণজ্ঞানী হন। বেদান্ত মতে অবতার নেই, পুরাণ মতে অবতার। ‘যে যুগের যে অবতার তাঁর হাতে থাকে জীবের মুক্তির চারি’ – শ্রীরামকৃষ্ণ, সেজন্য তাঁর উপদেশে চলতে হয়।
মানব কৃষ্ণকে পাওয়া যায় অতিমানব রূপে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে। ছলে-বলে-কৌশলে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে শত্রুদের ধ্বংস করার চেষ্টায় ব্যস্ত ও যোগারূঢ় হয়ে গীতার উপদেশ প্রদান। আর যোগেশ্বর পরাণ পুরুষ লীলাময় কৃষ্ণকে পাওয়া যায় একই সঙ্গে একই সময়ে ষোড়শ গোপীর ঘরে বৃন্দাবনে। শ্রীকৃষ্ণ পরমব্রহ্ম নরাকৃতিরূপে অবস্থিত শ্রীভগবান অচ্যুত।
কৃষ্ণপ্রণামী ব্যক্তির পুনর্জন্ম হয় না – (দ্রষ্টব্য – নারদ পুরাণ – ৭/১৪/৩৬)।
‘কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ, মুকুন্দ নরসিংহ জনার্দন – এই নামগুলো যে সর্বদা স্মরণ করে তাকে আমি অভীষ্ট প্রদান করি’ – শ্রীকৃষ্ণ।