কোন দেবতার উপাসনা করলে সমস্ত গ্রহ নিয়ন্ত্রণে থাকে, মহাভারতের ব্যাখ্যা
মূর্তির মাধ্যমে তাঁর আরাধনা করা হয়ে থাকে। ব্রহ্ম ও শক্তি অভেদ। একটাকে ধরলেই অপরটা এসে পড়ে। সবই মনের ব্যাপার। মনেই জগৎ।
মহাভারতে মহর্ষি মার্কণ্ডেয় বলছেন – ‘মহেশ্বরের প্রতি যার অবিচলিত ভক্তি, গ্রহগণ কখনও তাকে আক্রমণ করতে পারে না।’ – (বন-২২৯)।
‘ধনার্থী ও ব্যাধিপ্রশমনার্থী লোকে আকন্দপুষ্প দ্বারা পঞ্চগণের (নিজের অনুচর পিশাচ) পূজা করবে।’ – (ঐ ২৩০)।
যাঁরা ভোগবিলাস বর্জিত শিবকে পূজা করেন, প্রায়ই তাঁরা ধনী আর ভোগী হন। কারণ অহংকারাত্মা রুদ্র থেকেই ‘আমি ও আমার’ বোধে সমস্ত কর্ম হয়ে থাকে। শিবের এই অহংকার থেকেই দশ ইন্দ্রিয়, পঞ্চভূত ও মন – এই ষোলটি বিকার উৎপন্ন হয়েছে। এই সকলের মধ্যে একটি বিকারকে শিবরূপে ভজন করলেই শিবের অনুরূপ বিভূতিসকলের স্বরূপ লাভ করতে পারা যায়।
শিবলিঙ্গের পূজা এই ভেবে করতে হয় – যেন পিতা-মাতার মাধ্যমে লিঙ্গযোনির মধ্য দিয়ে আর আসতে না হয়। অর্থাৎ জন্মনাশ হয়ে মোক্ষলাভ হয়। শিবলিঙ্গ হচ্ছে লিঙ্গ-যোনির প্রতীক। আর দেহমধ্যে জীবাত্মারূপী ‘হংস’ মন্ত্রের সাধন।
শ্রীহরি নির্গুণ, প্রকৃতি থেকে ভিন্ন সাক্ষাৎ পরমপুরুষ। তিনি সর্বদর্শী আর সকলের সাক্ষী পরমাত্মা। তাঁকে ভজনা করলে নির্গুণত্ব লাভ হয়। শ্রীহরি যাঁর প্রতি অনুগ্রহ করেন, আস্তে আস্তে তাঁর সমস্ত ধন কেড়ে নেন। পড়ে সে নির্বেদ প্রাপ্ত হয়ে যখন শ্রীহরির শরণাগত হয় তখন তিনি সেই ভক্তের প্রতি বিশেষ অনুগ্রহ প্রকাশ করেন। তখন সেই ভক্ত অনন্ত ব্রহ্মকে জেনে সংসার থেকে মুক্ত হন।
এইজন্য লোক নিতান্ত দুরারাধ্য শ্রীহরিকে ছেড়ে অন্যান্য দেবগণের উপাসনা করে। নির্গুণ ব্রহ্ম শ্রীহরি নারায়ণের প্রতীক। শ্রীবিষ্ণু, কৃষ্ণ, রাম, শিব, দুর্গা, কালী, শালগ্রাম প্রভৃতি মূর্তির মাধ্যমে তাঁর আরাধনা করা হয়ে থাকে। এইসব মূর্তি সবই ঐশ্বরেয় শক্তির প্রতীক। ব্রহ্মেরই শক্তি, শক্তিরই ব্রহ্ম।
ব্রহ্ম ও শক্তি অভেদ। একটাকে ধরলেই অপরটা এসে পড়ে। সবই মনের ব্যাপার। মনেই জগৎ। আমি সেই অদ্বিতীয় পরমেশ্বরের আরাধনা করছি-এই ভেবে ঐসব প্রতীকী মূর্তির পূজা করতে হয়।