দরিদ্র ব্রাহ্মণের কুঁড়ে বদলাল রাজপ্রাসাদে, রাতারাতি ঘটল বিস্ময়কর ঘটনা
জীর্ণ মলিন বসন পরে তিনি গৃহে বাস করতেন। তার স্ত্রীও ওই রকম একখণ্ড কাপড় পরতেন আর ক্ষুধার তাড়নায় কোনও রকমে দিন কাটাতেন।
পুরাণের কাল। কোনও এক শ্রেষ্ঠ ব্রহ্মজ্ঞ ব্রাহ্মণ শ্রীকৃষ্ণের সখা ছিলেন। ইন্দ্রিয়ভোগে বিতৃষ্ণ হয়ে তিনি জিতেন্দ্রিয় ও প্রশান্তাত্মা হয়েছিলেন। যথাপ্রাপ্ত বস্তু দিয়েই জীবনধারণ করতেন ব্রহ্মজ্ঞ ব্রাহ্মণ। জীর্ণ মলিন বসন পরে তিনি গৃহে বাস করতেন। তার স্ত্রীও ওই রকম একখণ্ড কাপড় পরতেন আর ক্ষুধার তাড়নায় কোনও রকমে দিন কাটাতেন। একদিন সেই পতিব্রতা নারী ক্ষুধায় কাঁপতে কাঁপতে ম্লান মুখে স্বামীকে বললেন, আমি শুনেছি ব্রাহ্মণ হিতৈষী শরণাগতবৎসল স্বয়ং লক্ষ্মীপতি যদুপতি আপনার বন্ধু। তিনি সাধুদের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। আপনি তার কাছে একবার যান। আপনি সপরিবারে কষ্ট পাচ্ছেন দেখে তিনি আপনার ধনের অভাব পূর্ণ করবেন। তিনি এখন ভোজ, বৃষ্ণি আর অন্ধকদের রাজা হয়ে বাস করছেন দ্বারকায়। তিনি চরাচর সকলের গুরু। যিনি তাঁর পাদপদ্ম চিন্তা করেন তিনি তাকে আত্মদান করে থাকেন। সুতরাং তাঁকে ভজনা করলে তিনি যে অভীষ্ট দান করবেন সে বিষয়ে সন্দেহ নাই। সেই দরিদ্র ব্রাহ্মণ স্ত্রীর দ্বারা বহুবার অনুরুদ্ধ হইয়ে ভাবলেন, ঠিক আছে, আর কিছু হোক না হোক পরম লাভ এই যে, শ্রীকৃষ্ণকে তো দেখতে পাব।
এরকম চিন্তা করে ব্রাহ্মণ দ্বারকা যাওয়ার সঙ্কল্প করলেন। স্ত্রীকে বললেন, কল্যাণী, সখাকে দেখতে যাব। ঘরে যদি কোনও উপহার সামগ্রী থাকে দাও, আমি নিয়ে যাই। ব্রাহ্মণী তখন অন্যান্য ব্রাহ্মণ বাড়ী থেকে চারমুঠো চিঁড়ে এনে পুরনো কাপড়ে বেঁধে স্বামীকে দিলেন। ব্রাহ্মণ সেই চিঁড়েটুকু নিয়ে কী করে তার শ্রীকৃষ্ণ দর্শন ঘটবে, এই চিন্তা করতে করতে উপস্থিত হলেন দ্বারকায়।
দ্বারকায় এসে সেই দরিদ্র ব্রাহ্মণ অন্যান্য ব্রাহ্মণদের সঙ্গে তিন সৈন্যব্যূহ আর তিন কক্ষ অতিক্রম করলেন। তারপর তিনি প্রবেশ করলেন শ্রীকৃষ্ণের ষোলো হাজার মহিষীর একজনের ঘরে। শ্রীকৃষ্ণ রুক্মিণীর ঘরে শুয়ে ছিলেন পালঙ্কে। দূর থেকে তিনি ব্রাহ্মণকে দেখেই দু’হাত বাড়িয়ে তাকে আলিঙ্গন করলেন। প্রিয় সখা ব্রাহ্মণের অঙ্গস্পর্শে শ্রীকৃষ্ণের এত আনন্দ হল যে, তাঁর চোখ দিয়ে আনন্দাশ্রু ঝরতে লাগল। তারপর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বন্ধুকে পালঙ্কের উপর বসিয়ে তার জন্য পুজো সামগ্রী আনালেন। এবার তার পা ধুয়ে লোকপাবন ভগবান সেই পাদোদক মাথায় নিলেন। পর তিনি দিব্যগন্ধযুক্ত চন্দন অগুরু ও কুমকুম মাখালেন বিপ্রের গায়ে। সুগন্ধি ধূপ ও প্রদীপ দিয়ে আনন্দে তার পুজো করে তাকে পান সুপারি ও অগরু দান করে কুশল জিজ্ঞাসা করলেন। ছেড়া ময়লা কাপড় পরে ছিলেন ব্রাহ্মণ। তার পরিচর্যা করতে লাগলেন তাকে পাখা করে। পুণ্যকীর্তি শ্রীকৃষ্ণ নিজের হাতে প্রীতিভরে ব্রাহ্মণকে পুজো করছেন দেখে আশ্চর্য হলেন অন্তঃপুরবাসীরা। তারা ভাবলেন, এই ব্রাহ্মণ নির্ধন, অপরিছন্ন ও নিন্দিত। এই অধম ব্যক্তি কোন পুণ্যবলে শ্রীকৃষ্ণের সম্মানভাজন হল?
এরপর শ্রীকৃষ্ণ আর ব্রাহ্মণ পরস্পরের হাত ধরে, নিজেরা যখন গুরুকুলে বাস করতেন, তখনকার সমস্ত মনোরম গল্প বলতে লাগলেন। শ্রীকৃষ্ণ বললেন, বিপ্রবর, দক্ষিণা দিতে গুরুকুল থেকে গৃহে ফিরে এসে তুমি কি তোমারই অনুরূপ সহধর্মিণী গ্রহণ করেছ? তুমি বিদ্বান, আমি জানি তোমার মন কামনা দ্বারা অভিভূত নয়। তাই গৃহধর্মে বা ধনে তুমি খুশি হও না। আমি যেমন বিষয়ে আসক্ত না হয়েও লোকের শিক্ষার জন্য কাজ করে থাকি, সে রকম কেউ কেউ বিষয় – কামনায় প্রমত্ত না হয়েও ঈশ্বরের মায়ায় রচিত বিষয় বাসনা ত্যাগ করে লোকশিক্ষার জন্য গৃহস্থ ধর্ম পালন করে। তুমিও সেই রকম করেছ। ব্রাহ্মণেরা যে গুরুর কাছে বিজ্ঞের পরম আত্মতত্ত্ব জেনে অজ্ঞানের পরপারে গমন করেন, সেই গুরুকুলে আমাদের দুজনের বাসের কথা মনে আছে কি? সখা, এই সংসারে যার থেকে জন্ম হয় তিনি প্রথম গুরু, উপনেতা আচার্য দ্বিতীয় গুরু আর আশ্রমের যিনি জ্ঞানদাতা গুরু তিনি সাক্ষাৎ আমি। আমি গুরু রূপে উপদেশ দিলে যারা অনায়াসে ভবসিন্ধু পার হয়ে যান, এই পৃথিবীর আশ্রমবাসীদের মধ্যে তারাই প্রকৃত প্রয়োজনে সুপণ্ডিত। গুরু সেবায় আমি যেরকম খুশি হই, গার্হস্থ্য ধর্ম, ব্রহ্মচর্য ধর্ম, বানপ্রস্থ, কর্ম অথবা সন্ন্যাস ধর্মের আচরণ দ্বারা তা হই না। যখন আমরা গুরুকুলে থাকতাম তখন একদিন গুরুপত্নী কাঠ আনবার জন্য পাঠালে যে ঘটনা ঘটেছিল তা কি তোমার মনে পড়ে? ‘ছাত্ররা সব কাঠ নিয়ে এস’ গুরুপত্নীর এই আজ্ঞা পেয়ে আমরা প্রবেশ করলাম মহাঅরণ্যে। আকাশে ভীষণ ঝড় উঠল আর দারুণ গর্জন করতে লাগল।
সূর্যদেব অস্তাচলে গেলেন, দশদিক অন্ধকারে ছেয়ে গেল। উঁচু নিচু সমস্ত জায়গায়ই ডুবে গেছে, কোনও দিকে কিছু দেখা গেল না। সেই জলপ্লাবিত বনে আমরা প্রচণ্ড বায়ু ও প্রবল জলের বেগে বারবার বাধা পেতে লাগলাম। তখন দিক ঠিক করতে না পেরে আমরা পরস্পরের হাত ধরে কাতরভাবে কাঠের ভার বহন করে নিয়ে আসতে লাগলাম। সূর্যোদয় হতে না হতেই আচার্য গুরু সন্দীপনী খুঁজতে বেরিয়ে আমাদের বনের মধ্যে কাতর অবস্থায় দেখে বললেন, বৎসগণ, প্রাণীদের আত্মাই শ্রেষ্ঠ বস্তু। তোমরা সেই আত্মাকে না মেনে গুরু আর গুরুপত্নীকে শ্রেষ্ঠ মনে বুঝে নিজেরা দুঃখ পেয়েছ। যারা গুরুর জন্য সর্বার্থসাধক দেহ সমর্পণ করেন, যারা আমার শিষ্য হন, তারা এরকম আচরণ করে গুরুর প্রত্যুপকার করেন। দ্বিজপুত্রগণ, আমি তোমাদের উপর সন্তুষ্ট হলাম, তোমাদের সকল কামনা পূর্ণ হোক। ইহকালেই কী, আর পরকালেই কী, আমার কাছে অধীত বেদতত্ত্ব যেন তোমাদের মন থেকে বিলুপ্ত না হয়। বন্ধু, গুরুকুলে থাকার সময় আমাদের এরকম যত সব ঘটনা ঘটেছিল সে সমস্তই তোমার মনে আছে তো? গুরুর কৃপাতেই পুরুষ শান্তিপূর্ণ হতে পারে।
ব্রাহ্মণ বললেন, দেব তুমি পূর্ণকাম। একসঙ্গে যখন আমারা বাস করেছি আমাদের কি আর অপূর্ণ আছে? হে প্রভু, যার দেহ বেদময় ব্রহ্ম আর যিনি নিখিল মঙ্গলের আকর, তার গুরুকুলে বাস কেবল লোকশিক্ষার জন্য, তা মানুষের একান্ত অনুকরণযোগ্য।
সর্বঅন্তর্যামী শ্রীহরি সেই আগন্তুক ব্রাহ্মণের সঙ্গে এরূপ কথা বলতে বলতে প্রেমদৃষ্টিতে তাকে দেখে পরিহাস করে বললেন, তুমি গৃহ থেকে আমার জন্য কী উপহার এনেছ? ভক্তরা যদি অল্প কিছু উপহার আনে আমি তাকেই প্রচুর মনে করে সন্তুষ্ট হই। অভক্তদের আনা প্রচুর উপকরণেই আমি হৃষ্ট হই না। পাতা ফুল ফল আর জল ভক্তিপূর্বক আমাকে যে যা দেয় আমি সন্তুষ্ট মনে তাই গ্রহণ করি।
একথা শুনেও ব্রাহ্মণ লজ্জায় তার বাড়ি থেকে আনা সেই চারমুঠো চিড়ে কিছুতেই দিতে পারছিলেন না কৃষ্ণকে। তিনি শুধু বসে রইলেন অধোবদনে। সর্বভূতের অন্তর্যামী শ্রীকৃষ্ণ ব্রাহ্মণের আগমনের কারণ আগেই বুঝতে পেরেছিলেন। তিনি দেখলেন যে ব্রাহ্মণ সম্পদের জন্য ভগবানের ভজনা করেননি, পতিব্রতা স্ত্রীর প্রিয়সাধন করবার জন্যই এসেছেন তার কাছে। তিনি স্থির করলেন যে ব্রাহ্মণকে দেবতাদেরও দুর্লভ সম্পত্তি দান করতে হবে। শ্রীকৃষ্ণ মনে মনে এই ভেবে ব্রাহ্মণের কাপড়ে বাঁধা চিঁড়ে কেড়ে নিয়ে বললেন, সখা, এ কী, এই তো আমার প্রীতিকর উপহার এনেছ।
আমি বিশ্বাত্মা, এই চিঁড়ে নিয়েই আমি সন্তুষ্ট হয়েছি। শ্রীকৃষ্ণ এই বলে একমুঠো চিড়া খেয়ে ফেললেন এবং আবার খাওয়ার জন্য যেই দ্বিতীয় মুঠি তুলেছেন, অমনি লক্ষ্মীরূপিণী রুক্মিণী দেবী পরমব্রহ্মের হাত ধরে বললেন, বিশ্বাত্মা, ইহলোক পরলোকে পুরুষের সকল সমৃদ্ধির জন্য আপনার এই একমুঠি চিড়েই যথেষ্ট। আপনি আর দ্বিতীয় মুঠি খাবেন না। এভাবে আমাকে আর মানুষের মধ্যে চিরবন্দিনী করে রাখবেন না।
ব্রাহ্মণ সে রাত্রিতে কৃষ্ণালয়ে থাকলেন। পরম তৃপ্তির সঙ্গে পান ভোজন করে নিজেকে যেন স্বর্গস্থ বলে মনে করলেন। রাত ভোর হলে ব্রাহ্মণ নিজের বাড়িতে যাবার উদ্যোগ করলেন। বিশ্বস্রষ্টা শ্রীকৃষ্ণ তার সঙ্গে কিছু দূর গিয়ে প্রণাম করে, বিনয় বচন বলে সন্তুষ্ট করলেন তাকে। সখার কাছ থেকে অর্থ পেলেন না ব্রাহ্মণ, আর নিজেও মুখ ফুটে কিছু চাইলেন না। ব্রাহ্মণ যেতে যেতে ভাবলেন, আহা, ভগবানের কী ব্রহ্মণ্যতা দেখালাম, তিনি বক্ষে লক্ষ্মীকে ধারণ করেন, অথচ আমার মতো দরিদ্রতম ব্যক্তিকে আলিঙ্গন করতেও কুণ্ঠাবোধ করলেন না। কোথায় আমি দীন – দরিদ্র নীচ জন, আর কোথায় কমলার আবাসভূমি শ্রীকৃষ্ণ? আমি ব্রাহ্মণ বংশে জন্মেছি বলে তিনি আমাকে আলিঙ্গন করলেন, লক্ষ্মীশোভিত পালঙ্কে বসালেন ভ্রাতৃজ্ঞানে। রুক্মিণী দেবী স্বয়ং বাতাস করলেন আমাকে। ব্রাহ্মণ যেমন দেবতাকে পুজো করে, তেমনই দেব পরম সেবা আর পাদমর্দন ছাড়া পুজো করলেন আমাকে। তাঁর চরণসেবা পুরুষের পরলোক স্বর্গ ও মুক্তি, পৃথিবীতে সম্মতি আর সমস্ত সিদ্ধির মূল। তবু এ দরিদ্র ধন পেয়ে অত্যন্ত মত্ত হয়ে আমাকে আর মনে করে না, নিশ্চয়ই এই ভেবে পরম দয়ালু কোনও ধন দেননি আমাকে।
ব্রাহ্মণ এ রকম চিন্তা করতে করতে নিজের গৃহের কাছে এসে দেখলেন যে সেখানে চন্দ্র সূর্য আর অগ্নির মতো উজ্জ্বল এক মন্দির বিরাজ করছে। বিচিত্র বাগান আর উপবন, সেই বাগানে গাছে শাখায় বসে নানারকম পাখি গান গাইছে। নিচে অতি সুন্দর সরোবরে শোভা পাচ্ছে পদ্ম, শালুক প্রভৃতি জলজ ফুলে। সুন্দর বসন – ভূষণে সজ্জত নরনারীরা শোভা আরও বাড়িয়ে তুলেছিল সেখানকার। ব্রাহ্মণ সবিস্ময়ে চিন্তা করতে লাগলেন, এ কার বাড়ি? কীভাবে এ এত সুন্দর হয়ে উঠল। এই সময়ে দেবতার মতো স্ত্রী – পুরুষেরা গীত বাদ্যের সঙ্গে উপহার সহ এগিয়ে এসে অভ্যর্থনা করল ব্রাহ্মণকে।
স্বামী এসেছেন শুনে সতী ব্রাহ্মণপত্নীর অত্যন্ত আনন্দ হল। তিনি স্বামীকে সাদরে অভ্যর্থনার জন্য মূর্তিমতী লক্ষ্মীর মতো বেরলেন বাড়ি থেকে। পতিকে দেখে তার আনন্দাশ্রু বইতে লাগল দু’চোখ বুজে মনে মনে নমস্কার ও আলিঙ্গন করলেন স্বামীকে।
ব্রাহ্মণ দেখলেন, তার পত্নী বিমান – বিহারিণী দেবীর মতো দীপ্তি পাচ্ছেন, পদককণ্ঠী দাসীরা বিরাজ করছেন তার চারদিকে। এই দেখে ব্রাহ্মণ বিস্ময়ে অভিভূত হলেন। পরক্ষণেই আনন্দ হল তার। তিনি পত্নীর সঙ্গে স্বয়ং ইন্দ্র ভবনের মতো শত – সহস্র মণি – শোভিত নিজের ঘরে ঢুকলেন। সেখানে দেখলেন, সোনা ও হাতির দাঁতের কাজ করা খাটে দুধের মতো সাদা নরম বিছানা পাতা রয়েছে। ঘরের ভিতরে রত্নপ্রদীপ জ্বলছে। সোনার চাদরপাখা কোমল আস্তরণে আচ্ছাদিত বহু আসন ও মুক্তোদামে শোভিত সুন্দর ঝালরও শোভা পাচ্ছিল।
ব্রাহ্মণ নিজের গৃহে এরকম আকস্মিক সুখ সমৃদ্ধি দেখে মনে মনে ভাবতে লাগলেন, এতকাল আমি দুর্ভাগা ও চিরদরিদ্র ছিলাম। নিশ্চয়ই যদুপতির দর্শনলাভই আমার এরূপ সুখ সমৃদ্ধির কারণ। সখা আমার যদু শ্রেষ্ঠ। তিনি ভুরিভোজ ও বহুদান করেও নিজে তা খুব কম মনে করে আর কাউকে কিছু না বলেই মেঘের বর্ষণের মতো যাচককে প্রচুর দান করে থাকেন। তাঁর বন্ধুরা যদি তাঁকে কিছু দেয় তবে তা তুচ্ছ হলেও বহু মনে করেন। সেই কারণেই আমার দেওয়া চিঁড়ে সেই মহাত্মা গ্রহণ করেছিলেন প্রসন্নচিত্তে। আমি যেন তাঁর বন্ধুত্ব, সৌহার্দ বা দাস্য লাভ করতে পারি প্রতি জন্মে। সেই সর্বগুণাধার, মহানুভব ও মহাপুরুষের সঙ্গ লাভ করে তাঁর ভক্তজনের সঙ্গে জন্মে জন্মে যেন মিলিত হতে পারি।
ভগবান নিজে বিবেকবান, তিনি ধনীদের গর্বজনিত অধঃপাত দেখাবার জন্য তার অবিবেকী ভক্তদের বিত্তবান করতে চান না। শ্রীদাম নামে সেই ব্রাহ্মণ ভগবান জনার্দনের প্রতি আরও ভক্তিমান হলেন। তিনি আস্তে আস্তে ত্যাগ অভ্যাস আর অনাসক্ত চিত্ত পত্নীসহ বিষয় উপভোগ করতে লাগলেন। বুঝতে পারলেন যে, ভগবান শ্রীহরি আর যজ্ঞেশ্বর ব্রাহ্মণরাই তার প্রভু এবং দেবতা, তাদের অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ কেউ নেই।
সেই ভগবৎসখা ব্রাহ্মণ এভাবে অন্যের পক্ষে দুর্লভ শ্রীকৃষ্ণকে নিজের ভক্তিদ্বারা বশীভূত ও দর্শন করে তাঁকে ধ্যান করতে করতে অহংকার – পাশ ছেদন আর শীঘ্রই ব্রহ্মবিদদের গন্তব্য সেই পরমধাম লাভ করলেন। যিনি শ্রীহরির এই ব্রাহ্মণপ্রীতির বিবরণ শ্রদ্ধাসহকারে শোনেন, তার ভগবদ্ভক্তি লাভ হয়, তিনি মুক্তিলাভ করে থাকেন কর্মবন্ধন থেকে।