দোলের দিন যে কাজগুলি তরতাজা রাখবে
প্রকৃতির বিশ্বাসী সহচরদের ছাড়া বসন্ত উৎসব অনেকটাই তার সম্পূর্ণতা হারায়।
বসন্ত জাগ্রত দ্বারে। অরণ্যের শাখায় শাখায় পলাশ, শিমুল, কাঞ্চনের কলতানে কান পাতা দায়। অপরাজিতার নীলচে অনুরাগের রং লেগেছে মনের দখিন দুয়ারে। বসন্তের শুরুতে হাজিরা দিয়েছে সুন্দরী কমলা। যার পোশাকি নাম গাঁদা। পুরাতন হয়েও সে নবীনা। বসন্তের ঘনিষ্ঠ সাথী। প্রকৃতির এইসকল বিশ্বাসী সহচরদের ছাড়া বসন্ত উৎসব অনেকটাই তার সম্পূর্ণতা হারায়। দোকানিদের রংয়ের সংসারে তাই রাসায়নিক রং থাক নিজেদের মত। আর আপন রূপে ঘরে ঘরে দোলকে মাতিয়ে তুলুক ভেষজ রং।
বাঁদুরে রং বা গুঁড়ো রঙের সাথে টেক্কা দেওয়ার যথেষ্ট ক্ষমতা আছে এই ভেষজ রঙের! রঙ প্রেমীদের মুখে হাসি ফোটাতে অরূপরতন রূপের ডালা হাতে প্রস্তুত তারাও। কমলা, নীল, বেগুনি, লাল, হলুদ নানা রঙের অপরূপ সেই ভাণ্ডার। যার কোনওটা তৈরি হলুদের পাপড়ি দিয়ে। কোনটায় লাল রঙের আদরে মিশে রয়েছে পলাশ বা শিমুলের রক্তিমতা।
নীল বা বেগুনি রঙের আভিজাত্য নীলকণ্ঠের প্রিয় ফুল অপরাজিতার ছোঁয়ায় হয়ে উঠেছে আরও রাজকীয়। আবার সবুজে আবির সবুজ পাতার নির্যাসে সুগন্ধময়। গোলাপের লাল বা গোলাপি রঙের আবিরের মন মাতানো সুবাসকেও এড়িয়ে চলা যায় না।
এইসব ভেষজ ফাগ ত্বকের সুস্থতার জন্য ভীষণ উপকারি। এদের নেই কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। ফলে ক্রমশ আবালবৃদ্ধবনিতার মধ্যে চাহিদা বাড়ছে ভেষজ রঙের। ভেষজ রং বানিয়ে স্বনির্ভর হচ্ছেন পল্লিবাংলার বহু রমণী।
প্রকৃতির রং দোলমুখর মানুষের হাতে তুলে দিয়ে খুশি রঙের কারবারিরাও। দামের দিক দিয়েও তা সাধ্যের মধ্যেই। রাসায়নিক রঙের তুলনায় অবশ্য কিঞ্চিৎ দাম বেশি। তবে ৩০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যেই মনের মত রঙ পাওয়া যায় প্যাকেট বা ডিব্বায়।
চাইলে একটু কসরত করে ঘরের মধ্যেই বানিয়ে ফেলা যায় পছন্দের ভেষজ রঙ। তার জন্য প্রয়োজন গরম জল, অ্যারারুট আর বিভিন্ন ফুলের পাপড়ি। সেই পাপড়ি গরম জলে ফেলে সেদ্ধ করতে হয়। তারপর তাতে পরিমাণমত অ্যারারুট যোগ করে রোদে শুকোতে দিতে হয়। পুরো মিশ্রণ শুকিয়ে গেলে চালুনি দিয়ে চেলে গুঁড়ো পাউডার আলাদা করে নিতে হয়।
সেই পাউডার প্যাকেটজাত করলেই একদম রেডি ভেষজ আবির। তবে সঠিক প্রশিক্ষণ ছাড়া ভেষজ রঙ আবার বানাতে যাবেন না যেন। বরং গুণমাণ বুঝে সঠিক জায়গা থেকে কিনুন ভেষজ আবির ও রঙ। স্বচ্ছন্দে সপরিবারে সবান্ধবে গা ভাসান রঙের জোয়ারে।