শিবের ক্রোধে কামদেবের দহন, পার্বতীর সঙ্গে মিলন, নেড়া পোড়ার পৌরাণিক কাহিনি
এ এক কাহিনি। এমন নানা কাহিনি হোলিকা দহন নিয়ে প্রচলিত। মানুষের মুখে মুখে সেসব কাহিনি ঘুরে বেড়ায়। নানা জায়গায় নানা প্রচলিত কাহিনিকে সঙ্গী করে নেড়া পোড়া চলে আসছে যুগ যুগ ধরে।
আজ আমাদের নেড়া পোড়া, কাল আমাদের দোল। নতুন কোনও কথা নয়। বহু কাল ধরে দোলের সময় এই শব্দ বন্ধনী প্রজন্মের পর প্রজন্মের মুখে মুখে ছন্দে তালে ফিরে ফিরে আসে। দোলের আগের দিন সন্ধে নামতেই শুরু হয় নেড়া পোড়া। হোলিকা দহনকে প্রচলিত শব্দে নেড়া পোড়ানো বলা হয়। ত্রিকোণ করে লম্বা বাঁশের খাঁচা তৈরি করে তা ভরিয়ে ফেলা হয় ঘুঁটে, প্যাঁকাটি, খড়কুটো, পুরনো বস্ত্র সহ নানা ফেলে দেওয়ার মত বস্তুতে। তারপর তাতে অগ্নি সংযোগ করা হয়। আগুন দাউদাউ করে জ্বলে উঠলে তার চারপাশ ঘিরে শুরু হয় নাচ, আনন্দ। নেড়া পোড়ার মধ্যে দিয়েই আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় দোল বা হোলির।
পুরাণ বলে, সতীর দেহত্যাগের পর মহাদেব নাকি এক কঠিন পণ করেছিলেন। তিনি জীবনে আর কোনও নারীর পাণিগ্রহণ করবেন না। তাহলে মহাদেবের প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া দেবী পার্বতীর কি হবে। হর পার্বতীর মিলন নাহলে তো কার্তিকের জন্ম হবেনা। তাহলে কার্তিকের হাতে তারকাসুরের নিধনও হবে না।
দেবলোক ও মর্ত্যলোককে বাঁচাতে অতঃপর ডাক পড়ল মদনের। মহাদেবের মনে পার্বতীর জন্য প্রেমের ভাব জাগানোর কঠিন দায়িত্ব পড়ল কামদেবের ঘাড়ে। পত্নী রতিকে নিয়ে কাজে নেমে পড়লেন মদন। তাঁর জোরাল রিপুবাণ গিয়ে বিদ্ধ করল কঠোর তপস্যায় নিমগ্ন মহাদেবকে। চোখ খুলতেই হল মহেশ্বরকে। পার্বতীর সাথে শুভদৃষ্টি হল তাঁর। আবার প্রেমে পড়লেন শিব।
কিন্তু তপস্যা ভঙ্গ হয়েছে। ফলে ক্রোধে জ্বলে উঠল তাঁর তৃতীয় নয়ন। সেখান থেকে বার হল প্রচণ্ড অগ্নিবাণ। সেই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেলেন মদন। রতির হাহাকারে আকুল হয়ে উঠল কৈলাসের আকাশ বাতাস। প্রেমী হৃদয়ের সেই হাহাকার এসে পৌঁছল মানবভূমিতেও। কাম ও রতির বিরহের সেই স্মৃতিতে তাই আজও হোলিকা নয়, কামদহন দিয়েই শুরু হয় তামিলনাড়ুর হোলি। অন্ধ্রপ্রদেশ বা তেলেঙ্গানাতেও তামিলনাড়ুর মতই হোলির আগে একইভাবে কামদহনের পরেই শুরু হয় মূল উৎসবের।
এ এক কাহিনি। এমন নানা কাহিনি হোলিকা দহন নিয়ে প্রচলিত। মানুষের মুখে মুখে সেসব কাহিনি ঘুরে বেড়ায়। নানা জায়গায় নানা প্রচলিত কাহিনিকে সঙ্গী করে নেড়া পোড়া চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। আজও রীতি মেনেই হোলির আগের রাতে জ্বলে ওঠে হোলিকা। মানুষ উল্লাসের সঙ্গে সেই নেড়া পোড়ার আনন্দ উপভোগ করেন। তার চারপাশ ঘিরে নাচ, হুল্লোড়ে মেতে ওঠেন।