লিভারের রোগ নিরাময়ে চিকিৎসকের গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ
সারা শরীরের রক্ত লিভারে আসে এবং ক্ষতিকর পদার্থগুলি লিভারে রেখে যায়। একে ডিটক্সিফিকেশন বলা হয়ে থাকে। লিভার যদি ঠিকমতো কাজ না করে সেক্ষেত্রে দুধরনের ক্ষতি হতে পারে।
মানব শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থি হল লিভার। লিভার বহুবিধ কাজ করে থাকে। সারা শরীরের রক্ত লিভারে আসে এবং ক্ষতিকর পদার্থগুলি লিভারে রেখে যায়। একে ডি-টক্সিফিকেশন বলা হয়ে থাকে। লিভার নিয়ন্ত্রণ করে সেক্স হরমোন ও থাইরয়েড হরমোন।
লিভার যদি ঠিকমতো কাজ না করে সেক্ষেত্রে দু’ধরনের ক্ষতি হতে পারে। প্রথমত, শরীরের ক্ষতিকর পদার্থ বাইরে বেরোতে পারবে না। দ্বিতীয়ত, লিভার ঠিকঠাকভাবে কাজ না করলে শরীরে পুষ্টি মিলবে না। আর একটা কথা মনে রাখা দরকার যে লিভার কোনওভাবে একবার ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা সারিয়ে তোলা অত্যন্ত কঠিন কাজ।
অনেক সময়ে লিভারের আকার বড় হয়ে যায়। একে বলে হেপাটোমেগ্যালি। লিভার নানা কারণেই বড় হতে পারে। যার মধ্যে রয়েছে সংক্রমণ, ম্যালেরিয়া, হেপাটোসেলুলার ক্যান্সার, মাইলোমা, লিউকোমিয়া, প্রাইমারি সিরোসিস, অ্যালকোহলের প্রভাব ইত্যাদি। লিভার বড় হওয়াটা নিজে রোগ না হলেও রোগের লক্ষণ।
হেপাটাইটিস বলতে বোঝায় লিভারে ইনফ্লামেশন হওয়াকে। এই ইনফ্লামেশন নানা কারণে হতে পারে। তার ভিতর রয়েছে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা প্যারাসাইট ইত্যাদি নানান কারণ। রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বাড়লে জন্ডিস হয়ে থাকে। রক্তের লোহিতকণিকা থেকে লিভারে বিলিরুবিন তৈরি হয়। এই বিলিরুবিন পিত্তরসের মাধ্যমে পিত্তথলিতে জমা হয়ে থাকে। পরে তা পিত্তের সঙ্গে পাচনতন্ত্রের ভিতর দিয়ে মলের সঙ্গে শরীরের বাইরে নির্গত হয়ে থাকে। বিলিরুবিনের রঙ হলুদ। তাই মলের রঙও হলুদ হয়। লিভার যদি ওই বিলিরুবিন নিঃসরণ করতে সক্ষম না হয়, তাহলে রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ বেড়ে যাবে।
আরেকভাবে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বাড়তে পারে। হয়তো দেখা গেল লিভার ঠিকঠাকই আছে, এদিকে পিত্তপথে বাধা থাকায় বিলিরুবিন অন্ত্রে পৌঁছতে পারল না। সেক্ষেত্রেও রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বাড়তে পারে। রক্তে বেড়ে যাওয়া এই বিলিরুবিন প্রস্রাবের সঙ্গে শরীরের বাইরে বেরিয়ে যেতে পারে।
লিভারে ইনফেকশনের ফলে যে জন্ডিস হয়, হোমিওপ্যাথিতে তার যথাযথ নিরাময় সম্ভব হতে পারে। হেপাটাইটিস বি এর নিরাময়ও হোমিওপ্যাথিতে সম্ভব বলে জানালেন চিকিৎসক দেবদীপ কর। বিলিরুবিন ঠিকমত শরীর থেকে বার না হলে তা চামড়ার নিচে জমা হয়। ফলে রোগীর চামড়া, চোখ ও নখ হলুদ হতে শুরু করে। জন্ডিসে লোহিত রক্ত কণিকা দ্রুত নষ্ট হয়ে যায় বলে শরীর খুব দুর্বল হয়ে পড়ে।
লিভারের নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিলেন দেবদীপবাবু। তাঁর পরামর্শ, হাল্কা ও সহজপাচ্য খাবার খাওয়াই ভাল। রোগী গলা ভাত খেতে পারেন। ঝালমশলা পুরোপুরি বাদ দিয়ে চারা মাছের ঝোল খেতে পারেন। এছাড়া শুকনো মুড়ি, বিস্কুট, ডাবের জল, লিকার চা ইত্যাদি জন্ডিসে আক্রান্ত রোগীদের পক্ষে ভালো পথ্য।
হেপাটাইটিস, জন্ডিস, অ্যাবসেস, সিস্ট থেকে শুরু করে যে কোনও প্রকারের ফাংশনাল ডিসঅর্ডার জন্ডিসে ভালো হয়ে যায়। জন্ডিসের পরে লিভার সুস্থ হতে ও হজম শক্তি ফিরে আসতে অন্ততপক্ষে ৩ মাস সময় লাগবে। হোমিওপ্যাথির মাধ্যমে সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব সিরোসিস অব লিভারেরও।
সিরোসিসের শেষ পর্যায়ে যখন পেটে জল জমে তখন হোমিওপ্যাথিতে অবশ্য বিশেষ কিছু করণীয় থাকে না। এক্ষেত্রে পেট থেকে জল বের করতে হয়। নিরাময়ের জন্যে লক্ষণভিত্তিক ওষুধ দেওয়া হয়ে থাকে। তবে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় লিভারকে ১০০ ভাগ সুস্থ রাখা সম্ভব বলেই দাবি করেছেন চিকিৎসক দেবদীপ কর।