Lifestyle

মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে জন্ম নিল ‘হাগ ডে’

এ কাহিনি ১৯৮৬ সালের জানুয়ারি মাসের। ক্রিসমাস ও বর্ষবরণের উন্মাদনা শেষে আমেরিকানরা যে যার গতে বাঁধা জীবনচর্যার কোটরে গিয়ে সেঁধিয়েছেন। থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়ে ফের বদলেছে তাঁদের জীবনের ঋতুচক্র। আবার কবে ভ্যালেন্টাইনস ডে আসবে, তখন ফের নতুন উন্মাদনায় জেগে উঠবে ব্যস্ত জীবনের চাকায় পিষ্ট দেশবাসী। চারপাশের মানুষের ক্লান্ত অবসাদগ্রস্ত দুখী মুখ দেখতে ভাল লাগছিল না মিশিগানের একটা ছোট্ট মেয়ের। নতুন বছর আর ভ্যালেন্টাইন সপ্তাহের মাঝখানের বৈচিত্র্যহীন, বর্ণহীন দিনগুলো কাটাতে ভাল লাগছিল না কেভিন জোবর্নের নাতনির। এই কেভিন জোবর্ন মিশিগানের একজন বিখ্যাত মনোবিদ। তিনিও নাতনির সাথে লক্ষ্য করেন, দিনে দিনে বড় বেশি প্রাণহীন হয়ে পড়ছে সব সম্পর্কগুলো। এক ধরণের সর্বগ্রাসী মানসিক বিষণ্ণতার গহ্বর গ্রাস করছে কর্মব্যস্ত মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দকে। এর থেকে তবে কি বাঁচার কোনও উপায় নেই? ভাবতে বসেন কেভিন।

Doll
প্রতীকী ছবি

এদিকে নাতনির জোরাল আবদার, এমন একটা কিছু করতে হবে, যাতে আবার নতুন ছন্দে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে চারদিক। অনেক ভেবেচিন্তে শেষে একটা গুরুতর বিষয় চোখে ঠেকল মনস্তত্ত্ববিদ কেভিনের। তিনি দেখলেন, মার্কিন সমাজে বাসিন্দারা প্রাণখুলে প্রকাশ্যে নিজেদের অনুভূতি জাহির করতে পারেন না। ভালবাসা এখানে অনেকটাই যান্ত্রিক। কেভিন বুঝতে পারলেন, যান্ত্রিক ভালবাসা, ভালোলাগার সম্পর্কে ঢালতে হবে প্রাণের সুধারস। আর সেই কাজ একমাত্র করতে পারে একটা ‘হাগ’ অর্থাৎ আলিঙ্গন। যত বেশি নিবিড় আলিঙ্গনে বাঁধা যাবে উল্টোদিকের মানুষটাকে, ততই প্রাণের জোয়ারে আবার কলকলিয়ে উঠবে সামাজিক জটিলতায় বদ্ধ জীবের বন্দি প্রাণ। এই ভাবনা চিন্তা থেকেই কেভিন জোবর্নের মাথায় আসে ‘হাগ ডে’ বা আলিঙ্গন দিবসের পরিকল্পনা। সেই পরিকল্পনা কতটা বাস্তবে কার্যকরী হবে, তা নিয়ে তিনি যদিও খুব একটা আশাবাদী ছিলেন না। ভেবেছিলেন ‘হাগ ডে’ মানুষের মধ্যে সেভাবে হয়তো কোনও উচ্ছ্বাসের জন্ম দেবে না। কিন্তু বাস্তবে কেভিনের সেই সংশয়কে ‘ভ্রান্ত’ প্রমাণ করেন খোদ আমেরিকানরাই। কালক্রমে ‘আলিঙ্গন দিবস’ তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে আমেরিকাবাসীর মধ্যে। ২১ জানুয়ারি দিনটিকে ‘ন্যাশনাল হাগ ডে’ হিসেবে পালন করা শুরু করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ। পাশ্চাত্যের আঙিনা ছেড়ে সেই ‘হাগ ডে’ উদযাপনের জোয়ার একসময় স্পর্শ করে প্রাচ্যের প্রেম সংস্কৃতিকেও।


Baby

তবে জানুয়ারির ২১ তারিখ নয়, প্রেম সপ্তাহের মাঝখানের একটা দিনকে নিজেদের মত করে আলিঙ্গনের দিন হিসেবে বেছে নেন প্রাচ্যের প্রেমিক-প্রেমিকারা। ১২ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে ‘হাগ ডে’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় প্রেমের বর্ষপঞ্জিতে। আজও মার্কিন মনোবিদ কেভিন জোবর্নের ভাবনা ও তাঁর বন্ধুসম নাতনির মানুষকে হাসিখুশি দেখার আবদারকে স্বীকৃতি দিয়ে চলেছেন এ যুগের ভ্যালেন্টাইনরা।


Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button