অভিজ্ঞতার ধারে ভারে ম্যাচটা কোনও ক্রমে পকেটে পুরে নিল ভারত। কিন্তু এটাই যদি অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, নিউজিল্যান্ডের মত দল হত তাহলে ফলাফল ভারতের জন্য সুখের নাও হতে পারত। আফগানিস্তান দলটা এদিন যে পারফরমেন্স প্রদর্শন করল তাতে অভিজ্ঞতা বাদ দিয়ে দলটার তারিফ না করে উপায় নেই। ভারতকে তারা এদিন হারাতেই পারত। কিন্তু ভারত জিতল তাদের দীর্ঘ অভিজ্ঞতাকে খড়কুটোর মত আঁকড়ে। তাও তারপরও হারতে পারত, যদি নবি আউট না হতেন। ভারত এদিন জিতল ১১ রানে।
সাউদাম্পটনের পিচে এদিন টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন বিরাট কোহলি। কিন্তু এদিন খেলার শুরু থেকেই ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে পড়ে ভারত। পিচ দেখে মনেই হচ্ছিল এটা ব্যাটসম্যানদের জন্য বিভীষিকা। রান উঠছে না। কেবল বল চলে যাচ্ছে। মারতে গেলেই আউট হতে হচ্ছে। বল পিচে পড়ার পর বোঝা দায় হচ্ছে ব্যাটসম্যানদের। সেই পিচে এদিন যদি ভারতকে কেউ বাঁচিয়ে থাকেন তবে তিনি বিরাট কোহলি। রোহিত শর্মা ১ রান করে ফেরার পর কঠিন পিচে কেএল রাহুল ও বিরাট কোহলি মিলে লড়াই শুরু করেন। কোহলি নিজের ছন্দেই ব্যাট চালাতে থাকেন। রান তুলতে থাকেন। কিন্তু ততটা রান রাহুলের ব্যাট থেকে আসছিলনা। রাহুল ফেরেন ৩০ রান করে। এরপর বিরাটের সঙ্গে জুটি বেঁধে বিজয় শঙ্কর ব্যাটিং করেন। বিজয় ২৯ রান করে আউট হন। মুশকিল হয় রান কিছুটা করে সকলে করলেও বল বেশি নিচ্ছিলেন।
বিজয় ফেরার পর বেশিক্ষণ বিরাটও টেকেননি। বিরাট ফেরেন ৬৭ রান করে। এরপর ধোনি ও কেদার যাদব হাল ধরেন। ধোনি উইকেট পরতে না দিলেও রান তুলতে পারছিলেন না। ৫২ বল খেলে ২৮ রান করে ফেরেন তিনি। ততক্ষণে ভারত রান তোলার দিক থেকে অনেকটাই পিছিয়ে পরেছে। এরপর কেদার জুটি বাঁধেন হার্দিক পাণ্ডিয়াকে নিয়ে। কিন্তু এদিন হার্দিকও ভাল ব্যাট করতে পারছিলেননা। কেবল স্বচ্ছন্দে খেলছিলেন কেদার। বড় শট না নিতে পারলেও রানের গতিটা ধরে রাখার চেষ্টা করছিলেন ছুটে রান নিয়ে। পাণ্ডিয়া ৭ ও মহম্মদ সামি ১ রান করে ফেরেন। কেদার প্রায় শেষ পর্যন্ত টিকে থেকে করেন ৫২ রান। ৫০ ওভারের শেষে ভারত টেনে টুনে ২২৪ রান তোলে ৮ উইকেট হারিয়ে।
একদিনের ক্রিকেটে ২২৫ রান তোলা কোনও কঠিন কাজ নয়। এখন টি-২০-তেও এমন রানে পৌঁছে যায় অনেক দল। সেখানে এই রানটাই ৫০ ওভারে তুলতে গেলে ধরে খেললেই হয়। উইকেট না হারালেই হয়। কিন্তু আফগানিস্তানের বোলিং যতটা শক্তিশালী ব্যাটিং ততটা নয়। সেই অবস্থাতেও আফগানিস্তান ব্যাট করতে নেমে ভারতকে প্রথম থেকেই চাপে রাখা শুরু করে। হজরতুল্লা ১০ রান করে ফিরলেও গুলবদিন ও রহমত শাহ রান টানতে শুরু করেন। আফগান অধিনায়ক গুলবদিন ২৭ রান করে ফেরেন। রহমত শাহ করেন ৩৬ রান। যেটা লক্ষণীয় ছিল সেটা হল আফগানিস্তান কিন্তু ভারতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ওভার এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে রান এগোতে থাকে। খুব বিশাল নয়। তবে ভারতের সঙ্গে তাল মেলানো রান। ফলে জয়ের সম্ভাবনা সম্পূর্ণ বজায় ছিল। হাশমাতুল্লা শাহিদি ২১ করে ফেরার পরও কিন্তু আফগানিস্তানের জয়ের আশা যথেষ্ট ছিল। আসগর আফগান ৮ রান করে দ্রুত ফেরার পর হাল ধরেন মহম্মদ নবি-নাজিবুল্লা জারদান। এঁরা যেভাবে রান তুলতে থাকেন তাতে ভারত ফের চাপে পড়ে যায়। জারদান ২১ রান করে ফেরার পর নবির সঙ্গে জুটি বাঁধেন রশিদ খান। রশিদ ভাল ব্যাটসম্যান হিসাবেই পরিচিত। খুব বেশি রান না থাকায় রশিদ ও নবির ওপর ভরসা রাখছিল আফগানিস্তান। কিন্তু রশিদ ফেরেন ১৪ রান করে। সব দায়িত্ব তখন এসে বর্তায় নবির ওপর। উইকেট রক্ষক ইকরমকে সঙ্গে করে নবি ক্রমশ জয়ের লক্ষ্যে এগোতে থাকেন। ভারতের কপালে চিন্তার ভাঁজ পুরু হতে থাকে। এক সময়ে ১৭ বলে ২৩ রান ছিল দরকার। যা কোনও শক্ত কাজ নয়। অন্তত এখন যে স্তরের ক্রিকেট চলে তাতে এই রান অবশ্যই খুব শক্ত কাজ ছিলনা।
এখানেই কিন্তু ভারতের অভিজ্ঞতার ভার কাজে লাগতে শুরু করে। শেষে ৫ বলে ১২ রান দরকার ছিল আফগানিস্তানের। আর এখানেই মহম্মদ সামির বলে বড় রান করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন নবি। নবি ফিরলেও তখনও সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু তার পরের বলেই ফেরেন আফতাব আলম। দরকার ছিল ২ বলে ১২ রান। আবার এখানে সুযোগ ছিল সামির হ্যাটট্রিকের। বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিকের সুযোগ সামনে। যা পুরো কাজে লাগিয়ে নেন সামি। পরের বলে ফের উইকেট উড়িয়ে দেন মুজিবের। হ্যাটট্রিক করেন সামি। আর সব উইকেট ১ বল বাকি থাকতেই হারায় আফগানিস্তান। ভারত জেতে ১১ রানে। ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ হন যশপ্রীত বুমরাহ। এদিন ভারত জিতলেও মন জিতে নিয়েছে আফগানিস্তান। তাদের দুরন্ত লড়াই দিয়ে।