ডু অর ডাই ম্যাচ ছিল ইংল্যান্ডের জন্য। বিশ্বকাপের শেষ চারে পৌঁছনোর জন্য এই ম্যাচ জিততেই হত। অন্যদিকে পয়েন্ট টেবিলের ১ নম্বরে পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গে ২ ম্যাচ বাকি থাকতেই সেমিফাইনালে পৌঁছনো নিশ্চিত করতে ভারতকে ম্যাচটা জিততে হত। সেই ম্যাচ অবশেষে জিতে নিল ইংল্যান্ড। সেইসঙ্গে এই বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত একমাত্র অপরাজিত দলটাকে হারিয়ে দিল ৩১ রানে। ভারত হেরেও অবশ্য পয়েন্ট টেবিলের ২ নম্বরেই রয়ে গেল। অন্যদিকে ইংল্যান্ড জেতায় পাকিস্তানের জন্য বিশ্বকাপের শেষ চারে জায়গা করে নেওয়া বেশ কঠিন হয়ে গেল।
বারমিংহামের এজবাস্টনের সবুজ পিচে টস জিতে রবিবার প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় ইংল্যান্ড। উইকেট যে খুব কঠিন ছিল ব্যাটসম্যানদের জন্য তেমন নয়। বরং বোলারদের ভাল বল করার জন্য এদিন লড়াই করতে হয়েছে। ম্যাচের শুরুতে বেয়ারস্টো বেশ কয়েকবার আউট হতে হতে বাঁচেন। সেই বেয়ারস্টোই কিন্তু এদিন ইংল্যান্ডের জয়ের কারিগর হয়ে গেলেন। করলেন ১১১ রান। ম্যান অফ দ্যা ম্যাচও তিনিই হলেন।
এছাড়া এদিন পাটা উইকেটে জেসন রয় করেন ৬৬ রান। ইংল্যান্ডের প্রথম উইকেটই পড়ে যখন তাদের স্কোর ১৬০ রান। এখানেই ম্যাচের ভিত তৈরি হয়ে যায়। যে ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে কোনও দল সাড়ে ৩০০ রানের টার্গেট তৈরি করে দিতে পারে। হয়েছেও তাই। অধিনায়ক মর্গান ১ রান করে ফিরলেও জো রুট করেন ৪৪ রান। শেষের দিকে বিধ্বংসী ছিলেন বেন স্টোকস। ৭৯ রানের একটা দুরন্তই ইনিংস খেলে তিনিই ইংল্যান্ডকে সাড়ে ৩০০ রানের কাছে নিয়ে যাওয়ার রাস্তা করে দেন। ২০ রানের একটা দারুণ ইনিংস খেলেন বাটলারও।
এদিন ভারতীয় বোলিংয়ে সম্পূর্ণ ব্যর্থ স্পিনাররা। তবে মহম্মদ সামি ফের নিজের জায়গা ধরে রাখার মত বোলিং করে দিলেন। ১০ ওভার বল করে ৬৯ রান দিয়ে একটি মেডেন করে ৫ উইকেট তুলে নেন তিনি। প্রতি ম্যাচেই তিনি ৪ থেকে ৫ উইকেট তুলে চমকে দিচ্ছেন। এই অবস্থায় ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের মতে, ভুবির দলে ফেরাই কঠিন করে দিচ্ছেন সামি। অন্যদিকে বুমরাহ ১০ ওভার বল করে ১ উইকেট তুললেও তিনি দেন মাত্র ৪৪ রান। ইংল্যান্ড ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে করে ৩৩৭ রান।
বিশাল টোটাল তাড়া করতে নেমে ভারত শুরুতেই কেএল রাহুলের উইকেট হারায়। ০ রানে ফেরেন রাহুল। এরপর খেলার হাল ধরেন বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মা। এই ২ ব্যাটসম্যানের হাত ধরে রানের মিটার চড়তে থাকে। কিন্তু ব্যক্তিগত ৬৬ রানের মাথায় ক্যাচ তুলে ফেলেন কোহলি। এদিন শুরু থেকেই ইংল্যান্ডের ফিল্ডিং ছিল দেখার মত। অনেক রান ফিল্ডিংয়ের জোরেই বেঁচে যায়। যা আখেরে লাভবান করেছে ইংল্যান্ডকে। কোহলি ফেরার পর বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে ব্যাট হাতে নামেন ঋষভ পন্থ।
বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ বলে কথা। একটা নার্ভাসনেস থাকে। সেটা দেখাও গেছে ঋষভের ব্যাটে। কয়েকবার রান আউট হতে হতে বাঁচেন। পরে অবশ্য থিতু হয়ে যান। তাঁর ব্যাট থেকে রানও আসতে থাকে। নিজের সাবলীল খেলায় ফিরে আসেন তিনি। অন্যদিকে রোহিত শতরান করার পর ব্যক্তিগত ১০২ রানের মাথায় আচমকাই একটা বাইরের বল খোঁচা মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফেলেন। তখন খেলার যা পরিস্থিতি ছিল এবং তিনি যখন সেট ব্যাটসম্যান ছিলেন তখন ওরকম বেআক্কেলে শটের জন্য হয়তো নিজেকেও ক্ষমা করতে পারবেন না রোহিত।
এরপর ঋষভ পন্থ এবং হার্দিক পাণ্ডিয়া মিলে রান এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। তবে জেতার জন্য প্রয়োজনীয় রান রেট একটু একটু করে বেড়েই চলেছিল। যা ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের ওপর চাপ বাড়াচ্ছিল। পন্থ ৩২ রান করে ফেরার পর ধোনি ও হার্দিক ম্যাচ টানার চেষ্টা চালান। কিন্তু ইংল্যান্ডের মাপা বল ও দারুণ ফিল্ডিংয়ের সামনে অনেকটাই আটকে যাচ্ছিল রান।
৪৫ রান করে হার্দিক ফেরার পর অবশ্য একসময় প্রয়োজনীয় রান রেট ওভার পিছু ১৫-তে গিয়ে ঠেকে। এখান থেকে আর জেতার চেষ্টাই দেখা যায়নি ধোনি বা কেদার যাদবের মধ্যে। তাঁরা বরং টিকে থাকার লড়াই চালিয়েছেন। দুর্বল বলে প্রহার করেছেন। তবে তা জেতার জন্য যথেষ্ট ছিলনা। ৫০ ওভারের শেষে ভারত ৫ উইকেট হারিয়ে করে ৩০৬ রান। মঙ্গলবার বাংলাদেশের মুখোমুখি হবে ভারত।