৫ রানে ৩ উইকেট। এখানেই ভারতের হারটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। বাকিটা ছিল সময়ের অপেক্ষা। তবু সেই অবধারিত হারের অবস্থা থেকে ভারতকে ফিনিক্স পাখির মত তুলে আনেন জাদেজা-ধোনি। এই দুজনের যুগলবন্দি বেশ কিছুক্ষণের জন্য নিউজিল্যান্ডের চওড়া হাসি শুকিয়ে দিয়েছিল। তবু শেষরক্ষা হল না। আশা জাগিয়েও অবশেষে ১৮ রানে হেরে গেল ভারত। সেমিফাইনালে হেরে বিশ্বকাপ অভিযান শেষ করল তারা। নিউজিল্যান্ড পৌঁছে গেল ফাইনালে।
গত মঙ্গলবার বৃষ্টি নামে ম্যাঞ্চেস্টারে। তখন নিউজিল্যান্ডের স্কোর ৪৬.১ ওভারে ২১১। এমন কিছু রান নয়। মঙ্গলবার তুমুল বৃষ্টিতে খেলা আর এগোয়নি। ঠিক হয় খেলা ওই অবস্থা থেকেই শুরু হবে বুধবার। বিকেল ৩টে থেকে বুধবার খেলা শুরু হয়। যে বাকি ২৩ বল নিউজিল্যান্ড খেলে তাতে তারা ৩ উইকেট আরও হারিয়ে তোলে ২৮ রান। সাকুল্যে ৫০ ওভারে তাদের স্কোর হয় ২৩৯ রান। ভারতের জন্য লক্ষ্য স্থির হয় ২৪০। ৫০ ওভারে ২৪০ রানের লক্ষ্য। আর ভারতের মত দুরন্ত ব্যাটিং লাইনআপ। মোটামুটি এখানে ক্রিকেট বোদ্ধারা ধরেই নিয়েছিলেন যে এই ম্যাচ ভারত হেলায় জিতবে।
ক্রিকেট বোদ্ধা থেকে ক্রিকেট ভক্ত, ভারত অনুরাগী আপামর দেশবাসী সকলেই যখন প্রায় ধরেই নিয়েছেন এই ম্যাচ ভারতের হাতের মুঠোয় তখনও তাঁরা জানতেন না সেই মধুচন্দ্রিমা ভাবনা কাটতে আর সামান্য সময়ের অপেক্ষা। ভারত খেলতে নেমেই দুরন্ত ফর্মে থাকা রোহিত শর্মার উইকেট হারায়। নড়াচড়া না করেই বল কেমন যেন গুরুত্বহীনভাবে ব্যাটে ঠেকিয়ে দেন রোহিত। কট বিহাইন্ড হন উইকেট রক্ষকের হাতে। এরপরই বিরাট এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন। তারপরেই ক্যাচ তুলে ফেরেন রাহুল।
ভারতের এই ৩ নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান চলে যাওয়ার পর ম্যাচের পুরো ভোল বদলে যায়। যে ম্যাচটা ভারতের বলে ২০ মিনিট আগেও মনে হচ্ছিল। সেটা নিমেষে চলে যায় কিউয়িদের হাতে। এই পুরো ঘটনাটা ঘটে ভারতের মোট স্কোর ৫ রানের মধ্যে। ওভার তখন সবে ৩টে পার করেছে। এখানেই ভারতের হার নিশ্চিত হয়ে যায়।
এরপরও উইকেট পড়তে থাকে। তবে সকলে কিছু করে রান দিয়ে যাচ্ছিলেন। অথবা মাটি কামড়ে কিছুটা সময় কাটিয়ে যাচ্ছিলেন। যেমন দীনেশ কার্তিক। ২৫ বল খেলে করেন ৬ রান। তারপর আউট হয়ে ফিরে যান। বরং ঋষভ পন্থ অনেকটা টানেন। এই অবস্থায় তিনি মূল্যবান ৩২ রান যোগ করেন। পন্থ ফেরার পর ৩২ রানই করে ফেরেন হার্দিক পাণ্ডিয়া। এখান থেকে খেলার হাল ধরেন ধোনি ও জাদেজা। খুব দ্রুত খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেন তাঁরা। ক্রমশ জয়ের লক্ষ্যে এগোতে থাকেন।
টি-২০ খেলার সুবাদে এখন রান ও বলের যে ফারাক ছিল তা পূরণ করা খুব কঠিন কাজ ছিল না। প্রায় টেনে এনেও ছিলেন তাঁরা। আর সেখানেই ছন্দপতন। জাদেজা ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ক্যাচ তুলে ফেলেন। জাদেজা ফেরেন ৭৭ রান করে। তখন ভারতের দরকার ৩২ রান। এরপর ফার্গুসনকে ওভারের প্রথম বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ধোনি ফের আশা জাগান। কিন্তু রান নিতে গিয়ে সরাসরি থ্রোতে রান আউট হন। এরপর আর খেলার কিছু ছিল না। খেলার ৩ বল বাকি থাকতেই অলআউট হয়ে যায় ভারত। ২২১ রান করে।
এমন লজ্জার হারের জন্য চিরকাল ভারতের মহারথীরাই দায়ী থাকবেন। যে ম্যাচে তাঁদের খেলা দরকার। সেই ম্যাচেই ব্যর্থ রোহিত, বিরাট, রাহুল, দীনেশরা। এঁদের ব্যাটিং দক্ষতার দিকে অনেকটাই চেয়েছিল ভারত। এঁরা যদি আর একটু দায়িত্বের পরিচয় দিয়ে ব্যাট করতেন তাহলে হয়তো এমন অবস্থা হত না। জাদেজা যা করে দেখাতে পারলেন তা এঁদের ৪ জনের ১ জনও যদি করতেন, তাহলে ম্যাচ ভারতের ছিল। এই আক্ষেপ হয়তো চিরকাল থেকে যাবে। ম্যাচের সেরা হন ১০ ওভার বল করে ৩৭ রান দিয়ে ১টি মেডেন নিয়ে ৩ উইকেট তোলা হেনরি।