একদিকে স্বপ্নের জয়। অন্যদিকে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের খেসারত। একদিকে বাঙালির বিশ্বজয়ের খুশি। অন্যদিকে ভারতের হারের দুঃখ। এই বিপরীত অনুভূতির সহাবস্থানেই রবিবার রাত কাটল বঙ্গবাসীর। ভারতকে হারিয়ে জিতল বাংলাদেশ। করল বিশ্বজয়। এ অনুভূতি বাংলাদেশের কাছে স্বপ্নের মতন। আনন্দ কতটা করলে এই খুশির আশ মিটবে তা হয়ত এদিন মাপজোক করা কোনও বাংলাদেশির পক্ষে সম্ভব নয়।
অন্যদিকে ভারতের হারে কষ্ট পাওয়া পশ্চিমবঙ্গবাসীর কাছে পাওনা ১১ জন বাংলা ভাষাভাষী মানুষের বিশ্বজয়। বাঙালির বিশ্বজয়। অনূর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে এদিন ভারতকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হল বাংলাদেশ। ভারতকে ৩ উইকেটে হারাল তারা। ডাকওয়ার্থ-লুইস সিস্টেমে খেলার ফয়সালা হলেও, খেলা গড়ালেও হারই ছিল ভারতের সামনে।
ফাইনালে টস জিতে প্রথমে ভারতকে প্রথম ব্যাট করতে পাঠায় বাংলাদেশ। ভারতের ওয়াইবিকে জয়সওয়াল একাই কার্যত দলকে টানেন। এই ওপেনারের দাপুটে ব্যাটিং ভারতের স্কোর বোর্ডে ৮৮ রান যোগ করে। এছাড়া ভারতের তিলক বর্মা ৩৮ রান করেন। উইকেটরক্ষক জুরেল করেন ২২ রান। এর বাইরে ভারতের কোনও ব্যাটসম্যান ২ অঙ্কের রানে পৌঁছতে পারেননি। ২ জন ০ রানে আউট হন। ভারতের ইনিংস শেষ হয় ১৭৭ রানে। তখনও ৫০ ওভারের ম্যাচে ১৪ বল বাকি ছিল।
১৭৮ রান খুব বড় টোটাল নয়। যদিও পিচ ব্যাটসম্যানদের জন্য সহায়ক ছিলনা। তবু ১৭৮ ৫০ ওভারে অর্থাৎ ৩০০ বলে করা খুব কঠিন কাজ ছিলনা। সেই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দারুণ শুরু করে বাংলাদেশ। তাদের হোম ওয়ার্ক যে খুব সুন্দর হয়েছে তা মাঠেই বোঝা যাচ্ছিল। অন্যদিকে ভারতের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস পদে পদে ধরা পড়েছে। পাকিস্তানকে সেমিফাইনালে উড়িয়ে দেওয়া ভারতীয় দল হয়তো ভেবেই নিয়েছিল বাংলাদেশকে তারা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেবে।
তানজিদ হাসান ১৭ রানে ফেরার পর বাংলাদেশের দারুণ ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যান পারভেজ হোসেন ইমন ৪৭ রান করে চোটের জন্য মাঠ ছাড়েন। তিনি আউট হননি। পরে অবশ্য ফের মাঠে নামেন। আর বাংলাদেশের জন্য জটিল পরিস্থিতিতে ফের নেমে ত্রাতার ভূমিকা পালন করেন।
এদিকে প্রথমে চোটের জন্য রিটায়ার্ড হার্ট পারভেজ ফেরার পর বাংলাদেশের পরপর উইকেট পড়তে থাকে। ৬ উইকেট হারিয়ে ১০২ রান তোলা বাংলাদেশ ফের চাপের মুখে পড়ে। এখান থেকে ফের পারভেজ মাঠে নেমে অধিনায়ক আকবর আলির সঙ্গে জুটি বাঁধেন। আর সেখান থেকেই ঘুরে যায় খেলা। খাদের কিনারায় চলে যাওয়া বাংলাদেশ ভারতকে খাদের কিনারায় নিয়ে গিয়ে ফেলে। পারভেজ ফেরার পর রাকিবুল হাসানকে সঙ্গে নিয়ে ম্যাচ জয়ের দিকে টেনে নিয়ে যান অধিনায়ক। পরে বৃষ্টি বিঘ্নিত খেলা বাংলাদেশ জিতে যায় ডাকওয়ার্থ-লুইস নিয়মে।
অবশ্য বৃষ্টি না হলেও খেলা তাদের হাতের মুঠোয় ছিল। ম্যাচের সেরা হন বাংলাদেশের অধিনায়ক আকবর আলি। বিশ্বজয়ের কাপও ওঠে তাঁরই হাতে। এদিন ভারত হয়তো হারত না। যদি না তারা পুরো খেলায় অতিরিক্ত হিসাবে ৩৩ রান দিত। ১৭৮ টার্গেটে ৩৩ রান বাংলাদেশ ভারতের খারাপ বোলিং থেকে তুলে নিয়েছে। যা তাদের জয়ের পথ সুগম করে দিয়েছিল।