ঠিক ছকে বাঁধা নয়। শুনতে শুনতে কানে কোথায় যেন একটা খটকা লাগছিল। সমস্যা, লড়াই, দলকে এক ছাদের তলায় আনা, নতুন ম্যানেজার নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে আসা। এসব কথা তো নাসের হুসেনের প্রশ্নের জবাব হতে পারে না। এতো একরাশ ক্ষোভ। কথাগুলো বলতে বলতে গলাটা মাঝেমধ্যেই আবেগে আটকে আসছিল। কান্নাটা স্থান, কাল, পাত্র বিবেচনা করে আটকে নিজেকে সংযত রাখলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক ডারেন স্যামি। কয়েক মিনিট আগেও যিনি জানতেন না কয়েক মিনিটের ব্যবধানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সবচেয়ে সফল ও খুশি মানুষ হতে চলেছেন তিনি। কথা শেষ করার পরই এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। বিশ্বকাপ জয়ের ট্রফি হাতে আনন্দে ফেটে পড়লেন স্যামি সহ গোটা দল। ওপর থেকে সোনালি রাংতার বৃষ্টি আর শ্যাম্পেনের ফোয়ারা। গোটা মাঠটা জুড়ে তখন শুধুই ক্যারিবিয়ান উল্লাস। খুশি ইডেনের দর্শকও। কোনও ঘোষণা ছিল না। ছিলনা কোনও বিশেষ কারণও। তবু গোটা ইডেনটা এদিন গলা ফাটিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য। তাই ইডেনের সবুজ গালিচায় যখন গেইল, স্যামি, স্যামুয়েল, ব্রাভোরা নিজস্ব ভঙ্গিমায় জয়ের আনন্দটা নাচে, গানে চুটিয়ে উপভোগ করছেন, তখন গ্যালারিতে বসে তাদের সেই আনন্দ ভাগ করে নিচ্ছিলেন দর্শকরাও।
টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনাল হলেও এদিন আপাদমস্তক খেলাটা কয়েকটা মুহুর্ত বাদ দিলে কখনওই উত্তেজক হয়ে পড়েনি। উত্তেজনাটা তৈরি হল শেষ সাত বল বাকি থাকতে। সাত বলে দরকার উনিশ রান। কিন্তু সপ্তম বলটা ব্যাটেও ঠেকাতে পারলেন না মারলন স্যামুয়েলস। আদপে একার কাঁধে করে যিনি দলটাকে এতটা টেনে এনেছেন তাঁর এই ব্যর্থতায় মাথায় হাত পড়ে যায় ক্যারিবিয়ান ডাগ আউটের। ৬ বলে ১৯ রান দরকার। এই অবস্থায় নন স্ট্রাইকিং এন্ডে গিয়ে দাঁড়াতে হয় স্যামুয়েলসকে। ব্যাট হাতে তখন অপেক্ষাকৃত অনভিজ্ঞ কার্লোস ব্রেথওয়েট। যাঁর ব্যাটকে ভরসা করার মত কিছু দেখছিলেননা খোদ তাঁর সহ খেলোয়াড়রাই। কিন্তু স্টোকসের শেষ ওভারের প্রথম বলই সীমানাপারে। প্রথম বলেই ছয়। হাল্কা হলেও আশার আলো তো বটে। দ্বিতীয় বল। এটাও সীমাপার। মাত্র দুটো বলের ব্যবধান গোটা খেলার মোড়টাই এদিন ঘুরিয়ে দিল। চার বল, সাত রান। উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল ওভার শুরু হওয়ার সময়ের শুকনো মুখগুলো। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ডাগআউটের সামনে লাইন করে দাঁড়িয়ে পড়লেন গেইলরা। তৃতীয় বলেও ম্যাজিক। বল সোজা গিয়ে পড়ল গ্যালারিতে। দরকার আর তিন বলে একটা মাত্র রান। তখন শুধু জেতার অপেক্ষা। গ্যাপে বল ঠেলে একটা রান পূর্ণ করতে পারলেই ট্রফি তাঁদের। কিন্তু ব্রেথওয়েটকে তখন গেইল ভর করেছে। ফলে চতুর্থ বলটাও সজোরে চালালেন তিনি। ফের ছক্কা। চার বলে চারটে ছয়। ইডেনের মাঠ দিয়ে তখন তির বেগে ছুটছেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান খেলোয়াড়রা। বিশ্বজয়ের আনন্দ তাদের পাগল করে দিয়েছে। এদিনের সব আনন্দটুকু ওয়েস্ট ইন্ডিজের। কারণ দিনটাই যে তাদের। কিন্তু কোথাও এই বিশ্বকাপে ভারতের একটু হলেও প্রাপ্তিযোগ ভাগ্যে লেখা ছিল। সেটা বিরাট কোহলি। ম্যান অফ দ্য টুর্নামেন্ট হলেন ভারতের এই আশ্চর্য প্রতিভা। মন্দ কী। দুধের স্বাদ ঘোলে তো মিটল।